ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘যদি-কিন্তু’র ওপর মেসিদের ‘শেষ ষোলো’তে খেলার সুযোগ এখনও আছে

প্রার্থনা এবং ক্ষমা চায় আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৩ জুন ২০১৮

 প্রার্থনা এবং ক্ষমা চায় আর্জেন্টিনা

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হেরে কাঁদছে আর্জেন্টিনা। সেই কাঁদা নাকি মেয়েদের মতো! ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার শিমে ভারসালকোই যেমন দাবি করেছেন, ‘মেয়েদের মতো কাঁদছিল আর্জেন্টিনা।’ ক্রোয়েশিয়ার কাছে বড় হারে ‘শেষ ষোলো’তে খেলতে না পারার শঙ্কায় পড়ে গেছে আর্জেন্টিনা। এখনও সেই আশা আছে মেসিদের। সেই আশা ‘যদি-কিন্তু’র ওপর নির্ভর করছে। তবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারাতে সেই আশায় গুড়েবালি শেষ পর্যন্ত পড়তে পারে। এক হারেই আর্জেন্টিনার কপাল পুড়তে পারে। কিন্তু কেন এমন হলো? এখন কী করার আছে? কোচ জর্জ সাম্পাওলি যা বলেছেন, তাতে দাঁড়ায় পরিকল্পনায় ভুল ছিল। তাই নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। আর আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডার জাভিয়ের মাসচেরানো প্রার্থনা ছাড়া বিকল্প কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ আর্জেন্টিনা যে এখন অনেক ‘যদি-কিন্তু’র মধ্যে পড়ে গিয়েছে। ‘শেষ ষোলো’তে উঠতে হলে আর্জেন্টিনাকে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে ২৬ জুন নাইজিরিয়ার সঙ্গে জিততেই হবে। এর বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। এর আগে নাইজেরিয়া-আইসল্যান্ডের ম্যাচের ফল যেন নাইজিরিয়ার পক্ষে যায়, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আইসল্যান্ডের খেলার ফল যেন ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে যায়; সেই প্রার্থনাই করছে আর্জেন্টিনা। তখন নাইজিরিয়ার বিপক্ষে জিতলেই ‘শেষ ষোলো’তে খেলা নিশ্চিত করবে আর্জেন্টিনা। আইসল্যান্ড যে কোন এক ম্যাচ জিতলেই বিপদে পড়ে যাবে আর্জেন্টিনা। তখন গোলের হিসেব আসবে। সেই হিসেবে আর্জেন্টিনার ঘাড়ে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩ গোল খেয়ে যে পিছিয়ে আছে মেসির দল। এই বড় ব্যবধানে হারের এক ম্যাচই আর্জেন্টিনার ‘শেষ ষোলো’তে ওঠার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জেতাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেখানে হার হলো শোচনীয়। যে দলটি বিশ্বকাপ জয়ের আশা নিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা শুরু করেছে, সেই দলের এমন বেহাল দশা হয়েছে। কেন? সাম্পাওলি হারের দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন। বলেছেন, ‘সব সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে একমাত্র আমিই দায়ী। এই হারের সকল দায় আমার। অনেক আশা নিয়ে মাঠে (ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে) গিয়েছিলাম আমি। এমন হারের পর আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ম্যাচ জিততে হলে দলের সবার মধ্যে যে সমন্বয় ঘটাতে হতো তা আমরা করতে পারিনি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ক্রোয়েশিয়ার অর্ধে ঢুকে ওদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারব আমরা। কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম।’ ফুটবলাররা তার গেম প্ল্যানের সঙ্গেও খাপ খাওয়াতে পারেননি বলেই জানিয়েছেন সাম্পাওলি, ‘এই দলটা (আর্জেন্টিনা) তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি। খেলোয়াড়রা যদি আমার গেম প্ল্যানের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারে তাহলে সেটার সম্পূর্ণ দায় আমার। ম্যাচ ঠিকভাবে পড়তে না পারার দায় আমি স্বীকার করছি। আমাদের পরিকল্পনা কাজে লাগেনি।’ সঙ্গে আর্জেন্টিনার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার কষ্টেও পুড়ছেন সাম্পাওলি, ‘আর্জেন্টিনার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারাটা অনেক বড় লজ্জা। আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে এটা। আমি সর্বশেষ এমন অনুভব করেছিলাম অনেকদিন আগে। আর এখন নিজ দেশের জার্সি গায়ে দিয়েই আমাকে এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এটা আসলেই খুব কষ্ট দেয়। যারা কষ্ট করে রাশিয়ায় এসেছিলেন আমাদের খেলা দেখতে, তাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি আমি। আমিও ওদের মতোই স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব ছিল আমি সবটাই করেছি।’ লিওনেল মেসি কিছুই করতে পারছেন না। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাতে মেজাজও হারিয়ে বসেন মেসি। যে মেসিকে দেখে কেউই অভ্যস্ত নন। এরপরও কোচ মেসির পক্ষেই কথা বলেছেন, ‘আমাদের চালিকা শক্তি হচ্ছে লিও, কিন্তু আমরা তাকে খুঁজে নিতে পারিনি। লিওকে বল দেয়ার জন্য আমরা একটা দল হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু অন্য দলটিও (ক্রোয়েশিয়া) সেটা ঠেকানোর জন্য কাজ করেছে।’ মেসির পায়ের জাদু দেখা যাচ্ছে না। তাতে ভুগছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বের টানা দুই ম্যাচেই জয়হীন থাকে আর্জেন্টিনা। ৪৪ বছর আগে ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে এমন বিপদের মুখে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। ১১ আসর আগে গ্রুপপর্বে এমন অসহায় অবস্থায় ছিল আর্জেন্টিনা। টানা দুই ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। সেবার গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় ম্যাচে ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। এবার আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। ৬০ বছর পর এত বড় ব্যবধানে হারল দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ১৯৫৮ সালের পর গ্রুপপর্বে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেল বর্তমান রানার্সআপ দল আর্জেন্টিনা। সুইডেনে অনুষ্ঠিত ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়ার কাছে ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সেই হারের পর এবার বড় ব্যবধানে হারল। এই হারে ২০০২ সালের বিশ্বকাপে সর্বশেষ গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর আবারও সেই শঙ্কায় আছে আর্জেন্টিনা। অবশ্য এখনই সব শেষ হয়ে যায়নি। গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজিরিয়ার বিপক্ষে খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে যেমন টানা দুই ম্যাচে জয় না পেয়েও শেষ ম্যাচে হাইতিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে সব সমীকরণকে পেছনে ফেলে ঠিকই ‘শেষ ষোলো’তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয় আর্জেন্টিনা। এবারও যে তেমনটা হবে না তা এ মুহূর্তে কে জানে? তাছাড়া নাইজিরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে সবসময়ই জিতেছে আর্জেন্টিনা। সব ‘যদি-কিন্তু’কে এবারও পেছনে ফেলতে পারে আর্জেন্টিনা। এরজন্য প্রয়োজন একটু সহজ সমীকরণ হওয়া। তা হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা। মাসচেরানোই যেমন বলেছেন, ‘যখন এটা আপনার ওপর নির্ভর করবে না, আপনাকে প্রার্থনা করার এবং একটা ফল পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, যেটা আপনার হিসেব মেলানোর সম্ভাবনা তৈরি করে দেবে।’ আর্জেন্টিনা সেই হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। এ জন্য ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে যে জ্বালা মিলেছে সেই জ্বালায় না ভুগে সামনের পথ তৈরি করতে চায় আর্জেন্টিনা। মাসচেরানো তাই বলেছেন, ‘ম্যাচটা (ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে) বিশ্লেষণ করা খুবই কঠিন। কেননা আঘাতটা ভীষণ কঠিন। এখন কোন কিছু বিশ্লেষণের সময় নয়।’ আর্জেন্টিনা কোন বিশ্লেষণেও যেতে রাজি নয়। সেই সুযোগই যে নেই হাতে। আর তাই আপাতত কোচ ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। আর মাসচেরানো প্রার্থনার কথাই বলেছেন। প্রার্থনা আর ক্ষমা চাওয়া ছাড়া যে আপাতত কোন বিকল্প পথ খোলা নেই আর্জেন্টিনার।
×