ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ছন্দে ব্রাজিল ॥ যোগ করা সময়ের ভেল্কিতে কোস্টারিকাকে ২-০ গোলে হারায় সেই পেলের দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৩ জুন ২০১৮

ছন্দে ব্রাজিল ॥ যোগ করা সময়ের ভেল্কিতে কোস্টারিকাকে ২-০ গোলে হারায়  সেই পেলের দেশ

জাহিদুল আলম জয় ॥ আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। ফিকে হতে বসেছিল রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের স্বপ্নও। শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে ‘ই’ গ্রুপের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছিল পেলের দেশ। কিন্তু কিছুতেই কাক্সিক্ষত গোল পাচ্ছিল না কোচ টিটের দল। কিন্তু ম্যাচের শেষদিকে ব্রাজিলের অসাধারণ ছন্দের কাছে অবশেষে হার মানতে বাধ্য হয়েছে লড়াকু কোস্টারিকা। যোগ করা সময়ের ভেল্কিতে ২-০ গোলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট ব্রাজিল। সেলেসাওদের হয়ে গোল করেন দুই সুপারস্টার ফিলিপ কুটিনহো ও নেইমার। মাঠে সাম্বার ছন্দ না থাকলেও ছন্দে ফিরেছেন নেইমার! পুরো ম্যাচে একতরফা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না ব্রাজিল। জেসুস, নেইমার, পাউলিনহো, কুটিনহোদের একের পর এক আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর গোলরক্ষক কোস্টারিকার কেইলর নাভাস। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ বিজয়ী এই তারকা গোলরক্ষক অন্ততপক্ষে ব্রাজিলের বিশটি আক্রমণ রুখে দেন। লড়াকু পারফর্মেন্স প্রদর্শন করলেও টানা দুই ম্যাচ হেরে এক খেলা বাকি থাকতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে কোস্টারিকার। ম্যাচটি ড্র হলে নিশ্চিত করেই তিনি সেরা খেলোয়াড় হতেন। কিন্তু নাভাসের আপসোস, শেষদিকে আর সাম্বা ছন্দের জাদুকরদের আটকাতে পারেননি। দারুণ স্বস্তির এই জয়ে বুকের ওপর চেপে থাকা চাপও সরিয়ে ফেলেছে ব্রাজিল। দুই ম্যাচ শেষে এক জয় ও এক ড্রতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এখন ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে। এর ফলে নকআউট পর্ব অর্থাৎ শেষ ষোলোতে খেলাও অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে গেছে নেইমারদের। ২৭ জুন মস্কোয় রাত বারোটায় গ্রুপের শেষ ম্যাচে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে ব্রাজিল। এর আগে শুক্রবার রাতেই গ্রুপের আরেক ম্যাচে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছে সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড। এই ম্যাচের ফলের ওপর গ্রুপের অবস্থান নির্ণয় অনেকখানি নির্ভর করছে। বাঁচা-মরার ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই কোস্টারিকার দুর্গে চড়াও হয়ে খেলতে থাকে ব্রাজিল। তৃতীয় মিনিটেই সুযোগ সৃষ্টি করে তারা। কিন্তু মিডফিল্ডার ফিলিপ কুটিনহোর দূরপাল্লার শট পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বাইরে যায়। এরপর ম্যাচের প্রথম সহজ সুযোগ পায় কোস্টারিকা। ১৩ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে ক্রিশ্চিয়ান গামবোয়ার কাটব্যাকে ডি বক্সে বল পান সেলসো বোরগেস। কিন্তু তার শট গোলপোস্টের বামপাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের বাকি সময় প্রায় সারাক্ষণই বলের দখল রেখে খেলতে থাকে সেলেসাওরা। এ ধারাবাহিকতায় ২৫ মিনিটে প্রতিপক্ষের জালে গোলও জড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু অফসাইডের কারণে ম্যানসিটি তারকার গোল বাতিল করেন রেফারি। দুই মিনিট পর ম্যাচে প্রথম সুযোগ পান ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমার। ডি বক্সে বল পেয়ে পিএসজির এই ফরোয়ার্ড নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগেই এগিয়ে এসে বাধা দেন কোস্টারিকার তারকা গোলরক্ষক নাভাস। ৪১ মিনিটে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন প্রথম ম্যাচের অধিনায়ক মার্সেলো। ডি বক্সের বাইরে থেকে রিয়াল মাদ্রিদের এই ডিফেন্ডার জোরালো শট নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শটটা লক্ষ্যে থাকলেও খুব একটা গতি ছিল না। যে কারণে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক সহজেই তালুবন্দী করে নেন। প্রথম ৪৫ মিনিটে এই একটি শটই কোস্টারিকার গোলে লক্ষ্য করে নিতে পারে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। আরও ছয়বার গোলের চেষ্টা করলেও সেগুলো লক্ষ্যে ছিল না। এ অর্ধে একটি কর্নার পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি পেলের উত্তরসূরিরা। সবমিলিয়ে প্রথমার্ধে ব্রাজিলের বলের দখল ছিল ৬৮ শতাংশ আর কোস্টারিকার ৩২। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও প্রথমার্ধে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ব্রাজিলের সেরা তারকা নেইমারকে। তার ফিটনেস নিয়ে যে শঙ্কা ছিল সেটাই মাঠে পরিলক্ষিত হয়। কোস্টারিকান ডিফেন্ডাররা রীতিমতো বোতলবন্দী করে রাখেন সাবেক বার্সিলোনা তারকাকে। বিরতির পরও গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে ব্রাজিল। ৪৮ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। পরের মিনিটে আরেকবার আফসোসে পুড়তে হয় বিশ্বকাপের সেরা ফেবারিটদের। ডি বক্সের বাইরে থেকে উড়ে আসা দারুণ ক্রসে দুর্দান্ত হেড করেন ফরোয়ার্ড জেসুস। কিন্তু তার হেড বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে আবারও শট নেন ২১ বছর বয়সী এই তারকা। কিন্তু এবার তার শট ক্লিয়ার করেন কোস্টারিকান ডিফেন্ডাররা। ৭২ মিনিটে আবারও সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। ডি বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শট নেন চোট থেকে ফেরা এই তারকা। কিন্তু তার শট অল্পের জন্য সাইড পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। এই গোলটি মিস করে জার্সি দিয়ে মুখ লুকান নেইমার। ৭৭ মিনিটে ডি বক্সে নেইমারকে ফাউল করায় পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু কোস্টারিকা রিভিউয়ের আবেদন করে। তাতে তারা সফল হয়। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন রেফারি। ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায় বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে নেইমার নিজে থেকেই পড়ে যান। ৮৫ মিনিটে আবারও কোস্টারিকার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন নাভাস। ডি বক্সের ভেতর থেকে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাসেমিরোর নেয়া দারুণ শট বিশ্বস্ত হাতে জমা করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলা থাকে গোলশূন্য। এরপর খেলা গড়ায় যোগ করা সময়ে। এর প্রথম মিনিটেই (৯১ মিনিট) কাক্সিক্ষত ও স্বস্তির গোল আদায় করে নেয় ব্রাজিল। সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে ডি বক্সের মধ্যে জেসুস বল বাড়ান সামনে। এরপর জটলার মধ্য থেকে দারুণ শটে বল জালে জড়িয়ে দেন তারকা মিডফিল্ডার ফিলিপ কুটিনহো (১-০)। ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচেও একমাত্র গোলটি করেছিলেন বার্সিলোনার এই তারকা। গোল পাওয়ার পর আক্রমণের ধার আরও বাড়ে সাম্বা ছন্দের প্রতিনিধিদের। ফলও আসে আরেকবার। ম্যাচের শেষ মিনিটে (৯৭ মিনিট) আরও একটি অসাধারণ গোল আদায় করে নিয়ে সব শঙ্কা দূর করে ব্রাজিল। ডানপ্রান্ত থেকে ডগলাস কোস্টার বাড়ানো ক্রসে দর্শনীয় ভঙ্গিতে আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে দেন প্রাণভোমরা নেইমার (২-০)। গোলরক্ষক নাভাস ঝাঁপিয়ে পড়েও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। এই গোল করে ব্রাজিলের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন নেইমার (৮৭ ম্যাচে ৫৬ গোল)। ছাড়িয়ে গেছেন ৫৫ গোল করা সাবেক গ্রেট রোমারিওকে। এখন নেইমারের সামনে শুধু রোনাল্ডো (৬২) ও পেলে (৭৭)। এই ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন করে মাঠে নামে ব্রাজিল। ইনজুরির কারণে বাদ পড়েন ডানিলো। তার জায়গায় একাদশে খেলেন ফাগনার। পুরো ম্যাচে ব্রাজিলের বলের দখল ছিল ৭২ শতাংশ। আর কোস্টারিকার মাত্র ২৮ শতাংশ। সবমিলিয়ে ২২ বার গোলে শট নেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ১০ বার। পক্ষান্তরে কোস্টারিকা তিনবার চেষ্টা করলেও একবারও সেগুলো গোলমুখে ছিল না।
×