ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৪ জুন ২০১৮

বিদেশী বিনিয়োগ

লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকারপ্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো বর্ধিত বিনিয়োগ। আশার কথা হলো, সরকারী খাতে ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে এ বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যুত-গ্যাস-পানির সংযোগ প্রাপ্তি, বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ, নিষ্কণ্টক জমির প্রাপ্যতা প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইনের আওতায় বিনিয়োগকারীদের প্রজেক্ট ক্লিয়ারেন্স, ভিসা রিকমেন্ডেশন ও এ্যাসিসটেন্স ওয়ার্ক পারমিট ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট পারমিট অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। সরকারী বিনিয়োগ বাড়ায় বিদ্যুত-গ্যাস উৎপাদন, বন্দর ও সড়ক মহাসড়কের মতো অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিদেশী উদ্যোক্তারাও এখন বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন। দেশে দ্রুত দারিদ্র্য কমেছে, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। অভ্যন্তরীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হয়েছে। হতদরিদ্রের হার ১৭ দশমিক ৬ থেকে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। রূপকল্প-২০২১ মোতাবেক বাংলাদেশ এখন একটি শিল্পোন্নত, ডিজিটাল, মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়াসে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে এর আগেও প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান যা যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে এত বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন যেটি কোন একক অর্থনৈতিক সংস্থার পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের আইডা থেকে বছরে ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো ঋণ দেয়া হয়, যা ১৮০টি দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতেই বাংলাদেশের শুধু অবকাঠামো খাতে (বিদ্যুত, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, স্যানিটেশন ইত্যাদি) বিনিয়োগ প্রয়োজন বছরে ৭ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতগুলো বাদ দিয়েই এই হিসাব। এ ক্ষেত্রে শুধু বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইডিবিই নয়, এর বাইরে আরও একটি সম্ভাবনাময় অর্থদাতা এআইআইবি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বর্তমানে অন্তত ১৭টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছেন বিদেশীরা। তাদের মুনাফা প্রত্যাবাসন বা ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও বিধি-বিধান শিথিল করা হয়েছে। মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির অবচয় সুবিধা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশীরা। পাশাপাশি রয়েছে সস্তা শ্রমের সহজলভ্যতা। এসব সুযোগ-সুবিধার জন্যই বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন, টেক্সটাইল, জ্বালানি, গ্যাস ও বিদ্যুত এবং ব্যাংক-বীমায় বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করা যায় আগামী অর্থবছরে বিদেশী বিনিয়োগ আরও বাড়বে এবং বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে।
×