ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৪ জুন ২০১৮

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

দেশে চলমান মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, এর ফলে যুব সমাজ সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবে। মাদক ব্যবসার পৃৃষ্ঠপোষকতাকারী ও গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার মতে, দেশে এক কোটি তরুণ মাদকাসক্ত। ভিন্ন মতে, এই সংখ্যা আরও বেশি। প্রায় তিন কোটি। যারা বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিলে আসক্ত। এই বিপুলসংখ্যক তরুণ তথা যুবসমাজকে সুরক্ষার জন্য এ রকম একটি আইনের আবশ্যকতা রয়েছে বৈকি। সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযানে ফিলিপিন্সে সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে এর সুফল পাওয়া গেছে। দেখা যাচ্ছে যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানামুখী তৎপরতা সত্ত্বেও ইয়াবার ভয়ঙ্কর আগ্রাসন থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। মিয়ানমার থেকে নৌপথে চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভূখ-ে ইয়াবার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে রাতের বেলা মাছ শিকার বন্ধ করা হয়েছে। এতে চোরাচালান সামান্য হ্রাস পেলেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। নানা কৌশলে, নানা পথে ইয়াবা ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে, যেটি তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আসক্তি ও উচ্ছন্নে যাওয়ার প্রধান কারণ। এর প্রেক্ষিতে ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখার আইনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট এবং এর কাঁচামাল প্রবেশ করে থাকে কক্সবাজার জেলার মাধ্যমে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তপথে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়েও ইয়াবার অনুপ্রবেশ বিচিত্র নয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে প্রায় প্রতিদিন তা ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণে। বাস্তবতা হলো, সীমান্তে কঠোর তৎপরতা এবং গোয়েন্দা নজরদারির পরও এর প্রায় অবাধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, এর পেছনে শক্তিশালী স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। ইয়াবার ছোবল তথা প্রায় অপ্রতিহত অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় এলাকার জনগণ যদি সততা ও সদিচ্ছার মনোভাব নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে প্রতিরোধে, তাহলে সীমান্তপথে ইয়াবার চোরাচালান ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এরই প্রতিফলন ঘটেছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে সেখান থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা আছে। একদা তরুণ সমাজ বিপুলভাবে জড়িয়ে পড়েছিল ফেনসিডিল আসক্তিতে। পরে দেশে এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করেও সুফল মেলেনি তেমন। বরং বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত ভারতের সীমান্তসংলগ্ন অনেক স্থানে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছিল ফেনসিডিল কারখানা। দু’দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর ফেনসিডিলের বিস্তার ও আসক্তি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো এর পরিবর্তে বিপুল বিক্রমে থাবা বসিয়েছে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা। গণমাধাম্যের বিপুল প্রচার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরও এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাদক প্রতিরোধে সরকারকে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির মতো প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
×