ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

সম্ভাবনার স্বপ্নডানায় চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৪ জুন ২০১৮

সম্ভাবনার স্বপ্নডানায় চট্টগ্রাম

বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম। ঐতিহাসিকদের মতে চট্টগ্রাম শহরের বয়স প্রায় এক হাজার দু’ শ’ বছরেরও বেশি। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে আরব আর ইউরোপীয় বণিকরা ব্যবসায়িক উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করছিল। বিশ্বে যে কয়টি চলমান বন্দর আছে, চট্টগ্রাম বন্দর তাদের অন্যতম। বিশ্বের অনেক দেশের বন্দর অকার্যকর হয়েছে কালের পরিক্রমায়। চট্টগ্রাম বন্দর এখনও স্বমহিমায় জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে অনেক বেশি স্বতন্ত্র। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে এ শহরের যে জৌলুস ছিল বর্তমানে তার সিকি ভাগও নেই। কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রামের স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে যানজট নিরসন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে খাল খনন, পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কারে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ১০০ বছরের কথা চিন্তা করেই চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট সমস্যা সমাধানে ফ্লাইওভার, আউটার রিং রোড, কর্ণফুলী টানেলসহ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ফলে ইতোমধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে বন্দর ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম। এম এ মান্নান ফ্লাইওভার ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজারের সংযোগ রক্ষাকারী সড়কে ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এক দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামের প্রথম এই ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ১২ অক্টোবর ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় আড়াই মাস আগেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। উদ্বোধনের পরও ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। র‌্যাম্প সংযুক্তির মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে এমএ মান্নান ফ্লাইওভার। দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে যানজটকবলিত এলাকা দেওয়ানহাট মোড়। নগরীর প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে এবং ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোড এই মোড়ে পরস্পরের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এশিয়ান হাইওয়ের উপর দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি এবং কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, শুভপুর বাস স্টেশন এবং কদমতলী ট্রাক স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সব গাড়িকে এই মোড় অতিক্রম করে চলাচল করতে হয়। এতে করে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি নগরীর এই মোড়ে যানজট লেগে থাকত। এই অবস্থার অবসানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের আগস্ট মাসে দেওয়ানহাট মোড়ে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ১৩২ ফুট লম্বা এবং ২৮ ফুট প্রস্থ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ শেষে ১২ অক্টোবর, ২০১৩ সালে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রাঙ্ক রোডের উপর নির্মিত এই ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে আন্তঃজেলা বাস এবং পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো কোন ধরনের বাধা ছাড়াই চলাচল করছে। অপরদিকে ট্রাকসহ ভারি যানবাহনের জটলায় পড়ে দেওয়ানহাট মোড়ে এশিয়ান হাইওয়ের উপর দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে যেই বেহাল অবস্থায় পড়তে হতো তারও অবসান ঘটেছে। ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর থেকে দেওয়ানহাট মোড়ের চিরচেনা যানজট আর নেই। কদমতলী ফ্লাইওভার কদমতলী চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জংশন। এই এলাকায় রয়েছে তিনটি বাস টার্মিনাল। আন্তঃজেলা টার্মিনাল, বিআরটিসি এবং চট্টগ্রাম-শুভপুর বাস টার্মিনাল, যেখান থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন শত শত বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের অবস্থানও বেশ কাছাকাছি। সব মিলিয়ে প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল অবস্থা নিউমার্কেট হতে স্টেশন রোড হয়ে দেওয়ান হাট পর্যন্ত। তাছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের ওপর যানবাহনের অত্যধিক চাপ পড়ে। নগরবাসীকে যানজট থেকে পরিত্রাণ দিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালে ১ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারটি ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বহুল প্রতিক্ষিত উড়াল সড়কটি চালু হওয়ায় ব্যস্ততম নিউমার্কেট হতে আগ্রাবাদ পর্যন্ত সড়কে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা এবং চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে ২০১০ সালে ১ জুন ও ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সংশোধিত ডিপিপিতে মুরাদপুর-ওয়াসা ‘আখতারুজ্জামান চৌধুরী’ ফ্লাইওভার প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০১৪ সালের ১২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার ষোলশহর দুই নম্বর গেট এবং জিইসি মোড়ে স্থাপিত র‌্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রামে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ফ্লাইওভারটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হলে ও দুই লেনের কাজ শেষ হওয়ার পর নগরীতে যানজটের চাপ কমাতে ১ জুন ২০১৭ ঈদের আগে সাধারণ মানুষের কেনাকাটার সুবিধার্থে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত ফ্লাইওভারটিতে পুরোদমে যান চলাচল শুরুর কারণে মুরাদপুর বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ দিনের যানজট থেকে রেহাই পাচ্ছেন নগরবাসী। যানজট কমাতে ইতোমধ্যে নগরীর ষোলশহর এলাকায় চালু করে দেয়া হয়েছে ফ্লাইওভারমুখী লুপ। সম্প্রতি লুপটি চালু হওয়ার পর পাল্টে যায় ব্যস্ততম ষোলশহর এলাকার এই সড়কের দৃশ্য। ঈদকে সামনে রেখে যাত্রীদের বিড়ম্বনা দূর করতে লুপটি চালু করে দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় নির্মাণাধীন আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারমুখী দ্বিতীয় লুপটিও চালু হবে। দ্বিতীয় লুপসহ ফ্লাইওভারটি পুরোদমে চালু হলে নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতা আসবে বলে নগরবাসীর আশা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ৩০ জানুয়ারি ২০১৬, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। খুব শীঘ্রই চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এয়ারপোর্টে যাতায়াতের জন্য তিন-চার ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এয়ারপোর্ট ছাড়াও পতেঙ্গা এলাকায় নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীর ঘাঁটিসহ সরকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় যানজট আর জনদুর্ভোগ কমাতে তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এই মেগাপ্রকল্পটি। বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরীর প্রধান সড়কে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া সরকার গৃহীত ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার’ অর্থনৈতিক করিডরের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেও এই প্রকল্প কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নগরীর প্রধান সড়কের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সঙ্গে যুক্ত হবে। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহর এলাকা এবং এর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে। এতে যানজট হ্রাস পাবে এবং বিমানবন্দরে যাতায়াতের পথ সুগম হবে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জুন ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলছে কার্যক্রম। ২৪টি র‌্যাম্প সহ এক্সপ্রেসওয়েটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। এর প্রস্থ হবে সাড়ে ১৬ মিটার। এতে ৯টি এলাকায় ২৪টি র‌্যাম্প থাকবে। র‌্যাম্পগুলোর মধ্যে টাইগারপাসে ৪টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারেক বিল্ডিং মোড়ে ২টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, কাস্টমস মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ৪টি, কেইপিজেডে ২টি, কাঠগড়ে ২টি, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি করে র‌্যাম্প থাকবে। এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম শহরের গণপরিবহন ও যানচলাচলে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি ওই এলাকায় পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প চট্টগ্রামে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলাবদ্ধতা। ১৯৬৯ সালের মাস্টারপ্ল্যান ও আরএস সিট অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরে ছোট-বড় খাল ছিল ৭০টি। কিন্তু বর্তমানে ৪৬টি খালই অস্তিত্বহীন। এক সময় চট্টগ্রাম বন্দর চালু হওয়ার আগে মহেশখালে বিদেশী জাহাজ ভিড়ত যথারীতি পণ্য দ্রব্য খালাসও হতো। শহরের পানি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ার জন্য শহরের উত্তর-দক্ষিণ আর পূর্ব-পশ্চিমে একাধিক খাল ন্যূনতম ৫০ থেকে ৬০ ফুট প্রশস্ত ছিল, যার অন্যতম চাক্তাই খাল। এক সময় সেই খালে নৌকা চলত, ব্যবসায়ীরা এই চাক্তাই খাল দিয়ে বহদ্দারহাট ও চকবাজারে মালামাল আনা নেয়া করতো। কালক্রমে সেই খালগুলো বহু আগেই হারিয়ে গেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির ৯ আগস্ট ২০১৭ (একনেক) সভায় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৫ এর ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার চট্টগ্রামের ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন, একই সঙ্গে সোয়া ৪ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণের পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবে। অন্যদিকে ৮৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ, অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্ট তৈরি, বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি জলাধার নির্মাণের বিষয়ও প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, শহরের জলাবদ্ধতা দূর করা, খাল উদ্ধার এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, খালের পারে রাস্তা নির্মাণের পাশাপাশি খাল পরিষ্কার রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা করা; বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পদ্মা সেতুর পর চট্টগ্রামে একক বৃহৎ মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত প্রিয় স্থান এবং বিশ্বাসের জায়গা ছিল। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য সহচর ছিলেন এবং এই চট্টগ্রাম থেকে ঐতিহাসিক ছয় দফার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামকে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রামের মানুষ স্বাধীনতার পরপরই জিন্নাহ সড়কের নামকরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নামে। জাতির পিতার প্রতি চট্টগ্রামবাসীর গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রতীক হিসেবে নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে কুয়াইশ সংযোগ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ। সড়কটির দুই প্রান্তে অক্সিজেন ও কুয়াইশ পয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর তিনটি করে ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। অক্সিজেন মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ত্রিকোণাকার ম্যুরালের উচ্চতা ২৬ ফুট আর কুয়াইশ মোড়ে এ ম্যুরালের উচ্চতা ৪২ ফুট। উভয় প্রান্তে তিন দিকেই রয়েছে ম্যুরাল। মার্বেল পাথরের তৈরি ম্যুরাল দুটি নির্মাণ করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খরচ হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। কুয়াইশ পয়েন্টে নির্মিত ম্যুরালটি দেশে বঙ্গবন্ধুর সর্বোচ্চ ম্যুরাল। অক্সিজেন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ সড়কটি চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। একই সঙ্গে এ সড়কে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল দুটি দেখার জন্য ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা। চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানা দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামের মানুষের গর্ব করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। সে তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। আউটার রিং রোড প্রকল্প দিন বদলের অঙ্গীকারের নিয়ে যাত্রা শুরু করা বর্তমান সরকার দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে মাস্টারপ্ল্যানের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। দুই বছর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে এ প্রকল্পে অর্থের যোগান দিতে সম্মত হয় সংস্থাটি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে নির্মিত সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সড়ক কাম বেড়িবাঁধটির নির্মাণকাজ এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×