ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি সিলেটের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি

তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা, জনসংযোগ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ জুন ২০১৮

  তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা, জনসংযোগ শুরু

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা ও প্রার্থী নিয়ে দলে কোন প্রশ্ন না থাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে। ইতোমধ্যেই নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। অপরদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব এবং দল ও জোটে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় বেকায়দায় বিএনপি। তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর সমস্যা মোকাবেলা করে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপিও জনসংযোগ জোরদার করতে চায়। এ পরিস্থিতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই সরগরম হয়ে উঠছে। বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার তিনদিন আগেই আওয়ামী লীগ ৩ সিটির জন্য মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে। কিন্তু বিএনপি বেশ ক’দিন আগে ১৫ মেয়র প্রার্থীর সাক্ষাতকার নিলেও দলীয় কোন্দলের কারণে প্রার্থী ঘোষণা করতে বিলম্ব করে। আওয়ামী লীগ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে। লিটন দীর্ঘদিন ধরেই দলের নির্দেশনা অনুসারে নির্বাচনী মাঠ গোছানোর কাজ করছিলেন। সিলেটে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহকে। সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন তিনি নিজেই। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী ঘোষণা করায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এসব প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এটা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা এনে দিয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের ৩ দিন পর বিএনপি আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুই সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও আরেক সিটির প্রার্থী এখনও ঠিক করতে পারেনি। রবিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও বরিশালে সাবেক মেয়র দলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সারোয়ারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে সিলেটের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির মহানগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে দলের মনোনয়ন দিলেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর অনুসারীরা তাকে সমর্থন দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত সেখানে তাদের দলের এক নেতাকে প্রার্থী ঘোষণা করায় ভোটের মাঠে বেকায়দায় পড়েছে বুলবুল। বরিশালে সাবেক মেয়র দলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সারোয়ারকে মনোনয়ন দেয়া হলেও বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালকে মনোনয়ন না দেয়ায় তার অনুসারীরা নাখোশ হয়েছে। আর সিলেটের প্রার্থী আজ-কালের মধ্যে ঘোষণা করবে বিএনপি। সেখানে বর্তমান মেয়র আরিফুল হকের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা অন্য ৫ প্রার্থী একজোট হয়ে তাকে ছাড়া যে কোন একজনকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সিলেটে অন্য যে ৫ জন বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সহ-সভাপতি প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর নেতা ছালাহউদ্দিন রিমন ও আবদুল কাইয়ুম জালালী পংক্কী। এ ৫ জনের প্রতিবাদের কারণেই রবিবার সিলেটের প্রার্থী ঘোষণা দিতে পারেনি বিএনপি। তবে আরিফুল হক চৌধুরী তারেক রহমানের সমর্থন পেয়েই প্রার্থী হয়েছিলেন। তাই তিনি আগেভাগেই বলেছিলেন প্রার্থিতা পাচ্ছেন। কিন্তু এখন কি হবে ঢাকার নেতারা কেউ বলতে পারছেন না। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে আজ-কালের মধ্যে সিলেট সিটির জন্য বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে সিলেটে ইতোমধ্যেই বিএনপি জোটের শরিক জামায়াত মেয়র পদে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তাই সিলেটেও বিএনপি বেকায়দায় রয়েছে। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ৫ সিটি কর্পোরেশরেনর নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয় বিএনপির মেয়র প্রার্থী। আর সে নির্বাচনের পর বিএনপি সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে সক্ষম হয়। এবারও বিএনপি ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু খুলনায় পরাজয়ের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তবে তারা এখনও আশা ছাড়েনি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ের মাধ্যমে তারা আবারও দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে বাকি ৩ সিটিতেও ভাল ফল করতে চায়। তবে ৩ সিটির মেয়র প্রার্থী নিয়ে এখনও বিএনপি বেকায়দায়। অপরদিকে ২০১৩ সালে ৫ সিটিতে পরাজয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এবার আওয়ামী লীগও প্রস্তুতি জোরদার করেছে। যার ফল দলটি পেয়েছে খুলনার নির্বাচনে। সোমবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বিজয়ের মাধ্যমে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। শুক্রবার ৩ সিটিতে ভাল ভাল প্রার্থী দিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে পেড়েছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন মহল থেকে এমন কথাই বলা হচ্ছে। অবশ্য সরকারে থাকায় আওয়ামী লীগ স্বাভাবিকভাবেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং তার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। তবে এ অবস্থায় কিভাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন বিএনপি মহাসচিব তারেক রহমান। এদিকে গাজীপুরসহ আসন্ন ৪ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জনগণের রায় নিয়েই তাদের দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে বিজয়ী হবে। অপরদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো অন্য সিটিতেও আওয়ামী লীগ কৌশল প্রয়োগ করে বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করবে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রবিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠককালে বিএনপি নেতারা দাবি জানান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ ও জেলা পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদকে প্রত্যাহার করতে হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গাজীপুর সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় তা করতে বলেছি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে আমরা বাস্তবে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। ড. মঈন খান বলেন, গাজীপুরে যেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা জেলা পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদের প্রত্যাহার দাবি করেছি। একইসঙ্গে নির্বাচনে কমিশনের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টিও তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ। তাই ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে আমরা সে বিষয়টি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মতো হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছি। কামরান ও আরিফের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, দলের সমর্থন পাওয়ার পর রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও তাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দুপুরে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বদর উদ্দিন কামরানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিরাজ বক্স। বিকেলে নির্বাচন কার্যালয় থেকে আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে মনোননয়নপত্র সংগ্রহ করেন জুরেজ আব্দুল্লাহ গুলজার। দুপুরে নির্বাচন কার্যালয় থেকে দলের নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিপিবি-বাসদের পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
×