ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগে আগ্রহী সিঙ্গাপুর

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগে আগ্রহী সিঙ্গাপুর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে চায় সিঙ্গাপুর। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তারা এখন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ আনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুরের বিজনেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) যৌথ উদ্যোগে ঢাকার একটি হোটেলে দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আজ বৃহষ্পতিবারও সফররত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে সিঙ্গাপুর থেকে ২ হাজার ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করা হয়েছে। বিপরীতে ওই সময়ে রফতানি হয়েছে মাত্র ৩৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। যদিও জনশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স আহরণে সিঙ্গাপুর দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবছর দেশটিতে জনশক্তি রফতানি বাড়ছে। শুধু তাই নয়, দেশটির বিনিয়োগকারীরা দেশের তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবাখাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের এই বিনিয়োগ আনতেই এখন সরকারের যত চেষ্টা। ইতোমধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্ট) বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। এক্ষেত্রে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিডা’র চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশটির সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী অগ্রগতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। দেশটির সঙ্গে বিনিয়োগ, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধিতে করুনীয় নির্ধারণে এফবিসিসিআই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের (এসবিএফ) যৌথ উদ্যোগে ইতোমধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ বৈঠক ও সভা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশটি সম্প্রতি সফর করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে তিনি সিঙ্গাপুরের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সরকার ঘোষিত স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, সরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগে উদারনীতি গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে বিনিয়োগকৃত অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত নেয়া যাবে, এ বিষয়ে আইনদ্বারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। তাই সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন। সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারীরা চাইলে এক বা একাধিক ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দেয়া হবে। কারণ, সরকার ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্টকে (এফডিআই) বিশেষ গুরুত্ব ও সহযোগিতা দিচ্ছে। এদিকে, সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ, সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক পণ্য সিঙ্গাপুরে রফতানি করে। বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী সিঙ্গাপুরে কাজ করছে। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্য রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, সেবাখাত ও বিদ্যুৎ খাতে সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী জনকণ্ঠকে বলেন, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এদেশের পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো এবং সেবাখাতে তাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশটির উদ্যোক্তারা একক অথবা যৌথ বিনিয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া বেসরকারীখাতের কোন সহযোগীতা প্রয়োজন হলে সেটাও উদ্যোক্তারা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, দেশে সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আর্কষণে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশে বিনিযোগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। সিঙ্গাপুরের উদ্যোক্তারা এ সুযোগ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারেন। এছাড়া পণ্য রফতানিতে সিঙ্গাপুর কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে বাণিজ্য বৈষম্য কমে আসবে। এটাও সরকারের আলোচনায় থাকা উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
×