ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা ॥ নানান বিভাজনে -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১২ জুলাই ২০১৮

স্বাধীনতা ॥ নানান বিভাজনে -স্বদেশ রায়

বাংলাদেশের সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য : দেশের সকল রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক গোষ্ঠী, নানান-শ্রেণী পেশার শিক্ষিত সম্প্রদায় স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার চেতনাকে এক দৃষ্টিতে, এক বোধ ও সত্য থেকে দেখে না। বরং স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার চেতনাকে তাদের নিজ নিজ চিন্তার ও কৌশলের মাপে তৈরি করে নিয়েছে নানান গোষ্ঠী ও শক্তি। যেমন, এ দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ মিলে স্বাধীনতা। তাদের এই চেতনার ভেতর ইহজাগতিকতা আছে, বাঙালী জাতীয়তাবাদ আছে, বাঙালী সংস্কৃতি আছে। আর এসব কিছু বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে ঘিরে। এর পাশাপাশি বাঙালী জাতীয়তাবাদে, ইহজাগতিকায় আস্থাশীল আরেকটি গোষ্ঠী আছে যারা বঙ্গবন্ধুকে কিছুটা অস্বীকার করে তবেই স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে। তাদের বাঙালী জাতীয়তাবাদের সংগ্রামের ইতিহাসে, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান অনেক কম। আরেক গোষ্ঠী আছে, তারা বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে, বাঙালীর স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাসকে অস্বীকার করে স্বাধীনতাকে স্বীকার করতে চায়। এরা বাঙালী জাতীয়তাবাদেও বিশ্বাস করে না। তারা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মোড়কে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ তৈরি করে নিয়েছে। যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এখন আদালতের রায়ে সংবিধানে বহাল। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হলেও তিনজন বিচারপতির বাধার কারণে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে পুনর্স্থাপিত করতে পারেননি। এই তিনজনের একজন মুসলিম ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। আরেকজন নিরোদ সি চৌধুরীর মতো হিন্দুই কেবলমাত্র বাঙালী, এই চেতনায় বিশ্বাসী। আরেকজন বিশ্বাস করেন বাঙালী জাতীয়তাবাদ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেয়। অর্থাৎ এই তিনজনের কেউই বঙ্গবন্ধুর বাঙালী জাতীয়তাবাদ কনসেপ্টই বুঝতে পারেননি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের কোন আনুগত্য বা বিশ্বাস নেই। তারা কেউই বুঝতে পারেননি, বঙ্গবন্ধুর বাঙালী জাতীয়তাবাদ একটি কনসেপ্টভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। ভাষা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির দীর্ঘ স্বাধিকার সংগ্রাম ও দেশের স্বাধীনতার ভেতর দিয়ে এ জাতীয়তাবাদ কনসেপ্টটি দাঁড়ায়। তাই কেবলমাত্র ভাষা বা নৃতাত্তিক গোষ্ঠীভিত্তক নয়; সার্বিকভাবে একটি চেতনাকে ধারণ করে এবং চলমান থাকে এই জাতীয়তাবাদ। অথচ একটি গোষ্ঠীর উপলব্ধি সেখানে যাচ্ছে না। আর এখান থেকেও বোঝা যায়, আমাদের সমাজে ও রাষ্ট্রে দেশের স্বাধীনতার চেতনা কতখানি বিভক্ত। কারণ, একটি দেশের বিচার বিভাগের শিখরে বসেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনার ক্ষেত্রে তারা কতখানি বিপরীতমুখী। আর এটাই সত্যি অর্থে দেশের ও সমাজের চিত্র। স্বাধীনতার চেতনা এভাবেই বিভক্ত। এ ছাড়াও এ দেশে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য বেশকিছু গোষ্ঠীর শক্তি আছে তারা মুখে যাই বলুক না কেন, বাংলাদেশকে তারা স্বীকার করে না। তাই স্বাধীনতার চেতনা বা স্বাধীনতা নিয়ে কোন বিষয়ে তাদেরকে আলোচনায় আনার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে এই বিভক্তি কেন এলো? এর একমাত্র কারণ, ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্টে প্রতিবিপ্লবী শক্তির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল। ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্টকে কেবলমাত্র সামরিক অভ্যুত্থান ও সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং তার ধারাবাহিকতায় জাতীয় চার নেতা হত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এভাবে করলেও ভুল হবে। সামরিক অভ্যুত্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। তা কেবলমাত্র ক্ষমতা দখল; যা ঘটেছে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা অবসানের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতা নেয় ঠিক, সেখানে সেনাবাহিনীর ভেতর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নানা চড়াই-উৎরাই দেখা যায়। আর শেষ অবধি ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক এরশাদ চিন্তা-চেতনায় জিয়াউর রহমানের থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসেননি। ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল এরশাদ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী ধারাকেই বহন করে নিয়ে যান এবং জিয়াউর রহমানের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার পথে হাঁটেন। অন্যদিকে ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শুধুমাত্র রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেনি, বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চরিত্র বদলও করে তারা। ক্ষমতা দখলকারীরা অর্থাৎ মোশতাক, জিয়া ও এরশাদ ধারাবাহিকভাবে এ কাজগুলো করে। তারা বাংলাদেশের অন্যতম ভিত্তি যে বাঙালী জাতীয়তাবাদÑ যা ভাষা আন্দোলন, অর্থনৈতিক মুক্তির ছয় দফা আন্দোলন, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বিকশিত ওই জাতীয়তাবাদকে তারা সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে দেয়। স্বাধীনতার অন্যতম শেকড় কেটে দিয়ে তারা সেখানে তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মোড়কে ধর্মকে প্রতিস্থাপন করে। রাজনীতিতে বা রাষ্ট্র পরিচালনায় তারাই ধর্ম আনে যারা সমাজে মানসিক অটোক্রেসি চালু করতে চায়। সংবিধানে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে ধর্মকে প্রতিস্থাপন করার পরে তার শিকড়কে শক্তিশালী করার জন্য তারা বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি করার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়। রাষ্ট্রে ও সমাজে তারা ধর্মের নামে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার সুযোগ দেয় মূলত ‘রাজনৈতিক ধর্ম’ পরিচর্যার ভেতর দিয়ে মানুষকে জাতীয়তাবাদের উদারতা থেকে টেনে নিয়ে তথাকথিত ধর্মীয় কট্টরপন্থী তৈরি করার কাজটি পরিচর্যা করার জন্য। যে কাজটি পাকিস্তান বাইশ বছর এই দেশে করেছিল। আর এখনও তাদের দেশে করছে। ওই বাইশ বছর এ দেশে এই কট্টরপন্থা চর্চার বিপরীতে একমাত্র শক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ধর্মীয় কট্টরপন্থাকে পরাজিত করে উদার ও পরিবর্তনশীলতার জাতীয়তাবাদ এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যার ফলে একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশÑ গণতন্ত্রের মধ্যে বসেও সমাজতন্ত্রকে ধারণ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু এই একক শক্তি ছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। এ কারণে যারা স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে আংশিকভাবে স্বীকার করে তারা বাকি অংশে ধর্মীয় কট্টরপন্থাকে সমর্থন করে। তাই জাসদের সিপাহী বিপ্লবে নারায়ে তকবির ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান ওঠে, সিপিবি খাল কাটতে পারে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। কারণ, ধর্মীয় কট্টরপন্থার লালনকারীদের প্রতি ঘুরিয়ে হলেও তাদের সমর্থন রয়েছে। আর এই সমর্থন আছে বলেই তারা কিছুটা আস্থা রাখে এই ধর্মীয় কট্টরপন্থা লালনকারীদের প্রতি। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকে যারা অস্বীকার করে তারা কেউই উদার গণতান্ত্রিক নয় বরং পাকিস্তানপন্থী ধর্মীয় কট্টরবাদী বা কট্টরবাদীদের লালনকারী শক্তি। বাংলাদেশে যে শক্তির যাত্রা শুরু বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা সংবিধান পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে। এই পরিবর্তনই বাংলদেশ রাষ্ট্রটিকে ও সমাজকে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও চেতনার ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠা বাঙালিত্বের চেতনা থেকে দূরে নিয়ে যায়Ñ সমাজ ও রাষ্ট্রকে তারা কট্টরপন্থায় নিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটে। এ লক্ষ্যেই ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে তারা সংবিধানের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের পরিবর্তে ‘মুুক্তিযুদ্ধ’ প্রতিস্থাপন করে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর ২২ বছরের সংগ্রাম ও বাঙালী জাতির বাঙালী হয়ে ওঠাকে তারা অস্বীকার করার সাংবিধানিক পথ খুলে দেয়। ’৭১-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠীকে তখন থেকেই ২২ বছরের সংগ্রামের ঐতিহ্য ছাড়িয়ে দূরে এনে ধর্মীয় কট্টরপন্থার দিকে নেয়ার পথ তৈরি শুরু হয়ে যায়। পঁচাত্তর থেকে ’৯৬ অবধি দীর্ঘ একুশ বছর নানান নামে সেই শক্তিই ক্ষমতায় থাকে যারা স্বাধীনতার চেতনা থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়েছে এবং স্বাধীনতার অন্যতম মূল ভিত্তি বাঙালী জাতীয়তাবাদকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে বাংলাদেশী নামে মূলত ধর্মকে প্রতিস্থাপন করেছে। একুশ বছর নির্বিঘেœ সমাজে কট্টরপন্থা বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। তারা চারাগাছ থেকে বড় গাছে পরিণত হতে পেরেছে। এই গাছ এখনও বড় হচ্ছে; রাষ্ট্রে ও সমাজে। এসব কিছুই ঘটছে মূলত ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সৃষ্টি হয়েছিল বলে। সেদিন প্রতিবিপ্লবীরা বিজয়ী না হলে আজ বাংলাদেশের এ অবস্থা হতো না। বঙ্গবন্ধুকে আংশিক অস্বীকার করে স্বাধীনতার চেতনা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ধারণ করার মতো একটি চাঁদের অমাবস্যা শক্তি এ দেশে তৈরি হতো না; তৈরি হতো না বঙ্গবন্ধুকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার মোড়ক রেখে ধর্মীয় কট্টরপন্থার লালনকারী শক্তি। এসব শক্তিই বাঙালী চেতনাকে ধ্বংস করে ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের আজ সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের জন্য মন্দের ভাল হলো বারো বছর হতে চলেছে এই ’৭৫-এর পনেরো আগস্টের প্রতিবিপ্লবী শক্তি ও তাদের সহযোগীরা ক্ষমতার বাইরে। তারা যদি ক্ষমতায় থাকত তাহলে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় এই পনেরো কোটির বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি দেশকে দিকে দিকে জেগে ওঠা ইসলামিক কট্টরপন্থার বাইরে রাখা সম্ভব হতো না। বরং তারাই ঠেলে দিতো ওদিকে। যার আভাস ২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি এ দেশের মানুষ দেখেছে। বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের তাই বড় সাফল্য, বাংলাদেশকে ইসলামিক কট্টরপন্থার বাইরে রাখতে পেরেছে। আর কোন দেশ কট্টরপন্থার বাইরে থাকলে যা ঘটে সেটাই ঘটেছে অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ধরে রাখতে হলে, দেশ থেকে কট্টরপন্থা দূর করতে হলে কতক সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের প্রতিবিপ্লবের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালী জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করে স্বাধীনতার মোড়কে যেসব শক্তি গড়ে উঠেছে এরা যে মূলত ধর্মীয় কট্টরপন্থার লালনকারীÑ এই সত্যকে স্বীকার করতে হবে। এই উপলব্ধির জন্য যে চরম সত্যটিকে মেনে নিতে হবে, তা হলো, বাংলাদেশের সব থেকে গভীর সঙ্কট সৃষ্টি হয় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে। কারণ, সেদিন স্বাধীনতার চেতনাকে হত্যা করে পাকিস্তানী ধারার কট্টরপন্থীরা বিজয়ী হয়। বর্তমানের যে সঙ্কট তা হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে দেশকে যেখানে ঠেলে দেয়া হয়েছে সেখান থেকে সম্মিলিতভাবে বের করে আনার চেষ্টা করা সম্ভব হচ্ছে না। কোথায় যেন সঙ্কটকালটি চিনতে ভুল হয়ে যাচ্ছে অনেকের। যেমন দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত ০৭-০৭-১৮ তারিখের একটি সংবাদের শিরোনাম, ‘সঙ্কট যে কোন সময়ের চেয়ে গভীরÑ আলী রীয়াজ।’ আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘অতীতে বাংলাদেশ যত ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কট বা অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করেছে, এখনকার সঙ্কট অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভিন্ন ও গভীর।’ (প্রথম আলো, ০৭.০৭.১৮) বঙ্গবন্ধুকে আংশিক বা সম্পূর্ণ অস্বীকার করলে যে বাংলাদেশ থাকে, সে দেশে জনাব আলী রীয়াজের কথা সত্য। কারণ, তখন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন বাংলাদেশের সব থেকে বড় সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত হয় না। আর যদি বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করা হয়, তাকে স্বীকার করে বাংলাদেশের চেতনাকে ধারণ করা হয়, তা হলে বাংলাদেশের সব থেকে বড় সঙ্কট ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। বর্তমানে যে সঙ্কট দেখা যাচ্ছে তা মোটেই নতুন কিছু নয়, ১৯৭৫ প্রতিবিপ্লবীদের কর্মকা-ের ফল মাত্র। তবে এটা ফল নয়, বিষফল। এই বিষফলের অনেক গাছ গত দশ বছরে উপড়ে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজে তার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এ কারণে বর্তমান সময়টাকে টালমাটাল মনে হতে পারে। তবে এই সঙ্কটের চরিত্র ভিন্ন নয় বরং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ভোরবেলা থেকেই চলছে। যতক্ষণ না এ দেশের প্রতিটি মানুষ ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতির সব থেকে গভীর সঙ্কটকাল হিসেবে চিহ্নিত না করছেন ততক্ষণ কোনভাবেই সঙ্কটমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেয়া সম্ভব নয়। [email protected]
×