ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৩ জুলাই ২০১৮

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি

এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আসন্ন ফল প্রকাশকে সামনে রেখে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। তবে দুঃখজনক হলো এ বিষয়ে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই। উপাচার্যরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। সেগুলোকে সমন্বয় করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জটিলতা ও গোপনীয়তা রক্ষা, মাইগ্রেশন পদ্ধতি কিভাবে থাকবে ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়ার জন্য প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ ভর্তি নীতিমালা। সেটি প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি বিধায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না উচ্চ শিক্ষা প্রার্থী শিক্ষার্থীদের। অথচ এই উদ্যোগ চলছে ২০০৮ সাল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা তথা সংস্কার করতে গিয়ে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে সময় অধিকাংশ ভিসি একমত পোষণ করলেও বেশ কয়েকজন স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় এর বিরোধিতা করেন। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতার আসার পর বর্তমান সরকার আবারও এ নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে ঢাবি, বুয়েটসহ কয়েকটি নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এর বিরোধিতা করেন একই অজুহাতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত উপাচার্যদের সভায় অধিকাংশ সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হলেও সংশ্লিষ্ট একটি মহলের টালবাহানায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। উল্লেখ্য, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক সময়ে অভিন্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিলেও স্বার্থান্বেষীদের আন্দোলনের কারণে তা ভ-ুল হয়ে যায়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কতিপয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লেখালেখি করলেও অজ্ঞাত কারণে তা ঝুলে আছে। এমনকি চলতি বছরের শুরুতে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের একটা কমিটি গঠন এবং কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও এ বিষয়ে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলোÑ একই পদ্ধতির পরীক্ষায় মূলত একই প্রশ্নপত্রে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ। এতে স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও খরচ অনেক কম হয় তুলনামূলকভাবে। ভর্তির চাপ ও বিড়ম্বনাও কমে অনেককাংশ। তদুপরি অনিয়ম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির আশঙ্কা থাকে কম। বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং বুয়েট, চুয়েট, বাকৃবিসহ বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের সারা দেশে ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি সম্মুখীন হতে হয় গুচ্ছের খরচের। এ বিষয়ে আর্থিক লেনদেনসহ স্বজনপ্রীতি, প্রশ্নফাঁস ও দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। একাধিক ভুয়া ভর্তিসহ এমনকি পরীক্ষায় আদৌ অংশ না নিয়েও ভর্তির অভিযোগ পর্যন্ত আছে। প্রতিবছর উত্থাপিত এতসব অনিয়ম-অব্যবস্থা-অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই। ইউজিসি যত তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়িত করতে পারে, ততই মঙ্গল। তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি এবং দুর্ভোগ কমতে পারে।
×