ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্থায়ী বাণিজ্য মেলা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ জুলাই ২০১৮

স্থায়ী বাণিজ্য মেলা

আবারও পিছিয়ে গেল পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার জন্য স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। এবার আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ছে। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে ১৭০ কোটি টাকা। ফলে ২০০৯ সালে নেয়া এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে সময় গিয়ে দাঁড়াল ১১ বছর। জানা যায়, যথাসময়ে জমি না পাওয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল নিউ টাউন এলাকায় ৩৫ একর জমির ওপর এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মেলার জন্য রাজধানীতে একটি স্থায়ী কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের পরপরই। স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্র নির্মাণ সরকারের অন্যতম একটি প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বর্তমান সরকারের এ মেয়াদে সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, সরকারের হিসাব অনুযায়ী গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। এমনি এক বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী নামে স্থায়ী বাণিজ্যমেলা কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার এই কেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এই উদ্যোগটি অন্যতম। প্রথমে ২৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু তেজগাঁওয়ে জমি স্বল্পতার কারণে সেটি হয়নি। এরপর পূর্বাচলে ৭৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্র নির্মাণে নেয়া হয় নতুন প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ৩ বছরের মেয়াদকাল পার হলেও এক-চতুর্থাংশ কাজও শেষ হয়নি। ফলে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আবারও বাড়ছে। এর মধ্যে চীনের অনুদান ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং সরকারী তহবিলের ১৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাস্তবতার নিরিখে অতিরিক্ত ১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ, সেন্টারের পরিসর বৃদ্ধিসহ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাকরণসহ বিভিন্ন কারণে ১৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে বিশেষায়িত বাণিজ্যমেলা আয়োজন করার জন্য একটি স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হবে। এতে ভোক্তাদের আকর্ষণ করার জন্য পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ক্রেতা ও ভোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করা ও তাদের জন্য বাণিজ্যের উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পিটিটিভনেস বৃদ্ধি পাবে এবং বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। এতে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদার হবে। রফতানি পণ্যের মান বাড়াতে এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে প্রতিবছর খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। সে সময় দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে ক্রেতারা সমবেত হন মাসব্যাপী এই পণ্যের মেলায়। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন করা হলেও সকল শ্রেণীর মানুষের সমাগমে মেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় মিলন মেলায়। এক বছর ধরে মানুষজন অপেক্ষায় থাকেন এই মেলার জন্য। এতদিন স্বল্প পরিসরে এবং অস্থায়ীভাবে আগারগাঁওয়ে এই মেলার আয়োজন করা হতো। স্থান সঙ্কুলানের কারণে এবং একটি স্থায়ী মেলা স্থলের প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকে শেখ হাসিনা সরকার পূর্বাচলে বিশাল পরিসরে কেন্দ্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে ক্রেতা চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন পণ্যের প্রসারে এই ধরনের মেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বার বার নানা উছিলায় নির্মাণ কাজ থেমে থাকলেও আর যেন সময়ক্ষেপণ না হয়, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যেন কাজটি সমাপ্ত হয়, তা নিশ্চিত হওয়া জরুরী।
×