ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাতের নাগালে মহাকাশযাত্রা!

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ১৩ জুলাই ২০১৮

হাতের নাগালে মহাকাশযাত্রা!

মহাকাশে ছুটি কাটাতে ইচ্ছুক? ২০২১ সালে সেখানে এক হোটেল তৈরি হবার কথা। বেসরকারী বাণিজ্যিক উদ্যোগের কারণে মহাকাশযাত্রার ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্য কমে চলেছে। অন্যদিকে ব্যয়ও কমছে। বিশাল মাত্রার পরিকল্পনা। চ্যালেঞ্জ তার থেকেও বড়। টেসলা কোম্পানির প্রধান এলন মাস্ক মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপন করতে চান। অ্যামাজন-এর প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস মোটা অঙ্কের ভাড়ার বিনিময়ে ‘ব্লু অরিজিন’ যানে করে মঙ্গলগ্রহ ও চাঁদে যাত্রী পাঠাতে চান। ব্রিটেনের শিল্পপতি রিটার্ড ব্র্যানসন-ও মহাকাশে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা করে তুলতে চান। ২ লাখ ডলারের বিনিময়ে তাঁর ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক’ যানে ৫ মিনিটের জন্য মাধ্যাকর্ষণহীনতার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যাবে। এ সব স্বপ্ন কি নিছক পাগলামি? গিডো শ্ভারৎস তা মনে করেন না। মহাকাশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি সুইজারল্যান্ডে এক মহাকাশ মিউজিয়াম গড়ে তুলতে ব্যস্ত। এ সব কি অবাস্তব স্বপ্ন নয়, যে কাজে কোটি কোটি ডলার ঢালা হচ্ছে? গিডো মনে করেন, ‘এই সব পরিকল্পনাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া উচিত। স্পেসএক্স-এর কথাই ভাবুন। ২০০২ সালে ৩০ জন কর্মী নিয়ে এলন মাস্ক এই কোম্পানি খুলেছিলেন। ২০০৮ সালেই সফল উৎক্ষেপণ ঘটল। আজ কর্মীসংখ্যা প্রায় ৭,০০০। এরই মধ্যে তারা ৪০টি রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে।’ গত বছরের মার্চ মাসে স্পেসএক্স প্রথমবার মহাকাশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট পাঠিয়েছিল। ফলে এক নতুন যুগের সূচনা হলো। এলন মাস্ক রকেটের নিচের দিকটা আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠিয়ে সেটি পুনর্ব্যবহার করছেন। ফলে মহাকাশ যাত্রার ব্যয় অনেক কমে যাবে। জেফ বেজস ও রিচার্ড ব্র্যানসনের কোম্পানিগুলিও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে। ব্যয়ের হিসেবের দিকে নজর দিলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। মার্কিন মহাকাশফেরির প্রত্যেক উৎক্ষেপণের ব্যয় ছিল প্রায় ৪৫ কোটি ডলার। ২০১১ সালে শেষবারের মতো এই যান মহাকাশযাত্রা করেছিল। ইউরোপের ‘আরিয়ানে ৫’ রকেট উৎক্ষেপণের জন্য ২২ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়। অন্যদিকে স্পেসএক্স কোম্পানির ‘ফ্যালকন ৯’ রকেট উৎক্ষেপণের ব্যয় ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ব্যয়ের মাত্রা দুই-তৃতীয়াংশ কম। তা সত্ত্বেও রকেট উৎক্ষেপণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এলন মাস্ক এই অঙ্ক একশোভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনতে চান। এই স্বপ্ন বাস্তবসম্মত কিনা, সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এই ঘোষণার ফলে আমেরিকা ও ইউরোপের রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থাগুলোর ওপর অবশ্যই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। গিডো শভারৎস বলেন, ‘ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা আরিয়ানে ৬ রকেট তৈরির ঘোষণা করেছে। একমাত্র নতুন সংস্থাগুলোর সস্তার রকেটের কারণেই তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। আরিয়ানে ৫ যথেষ্ট নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করছে। কিন্তু তার আর্থিক ব্যয়ভারের কারণে আরও কম দামের এক রকেট তৈরি করা হয়েছে।’ এই আর্থিক চাপ সুইজারল্যান্ডেও টের পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কোম্পানি রুয়াগ স্পেস আরিয়ানে ৫ ও ৬ মডেলের রকেটের মুখ তৈরি করছে। কোম্পানির প্রধান জানালেন, যে আজকাল অর্ডার পেতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম মূল্য হাঁকতে হয়। কিন্তু মূল্য হ্রাসের ফলে নতুন বাজারও খুলে যাচ্ছে। কোম্পানির প্রধান পেটার গুগেনবাখ বলেন, ‘অনেক আগে আমরা শুধু ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মতো শুধু রাষ্ট্রীয় গ্রাহকদের জন্য কাজ করতাম। আর আজ বাণিজ্যিক গ্রাহকদের অনুপাত ৫০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।’ মহাকাশে ছুটি কাটাতে যাবেন? শুনলে কল্পবিজ্ঞান মনে হলেও ২০২১ সালে মহাকাশে প্রথম স্পেস হোটেল গড়ে তোলা হচ্ছে। ধনকুবেররা মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্র পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। অতীতে মহাকাশযাত্রার আকাক্সক্ষা শুধু রাষ্ট্রীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। আজ তা বেসরকারী কোম্পানিগুলোর নাগালে এসে পড়েছে। সূত্র : বিবিসি
×