ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ১৩ জুলাই ২০১৮

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

পূর্ব প্রকাশের পর পাম জুমেইরাহ বিশ্বের ভ্রমণপিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য সাগরকে শাসন করে তার মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে অসাধারণ সব কীর্তি। শহরটির সমুদ্র অংশে কৃত্রিম আইল্যান্ড ডিজাইন করা হয়েছে যার নাম পাম জুমেইরাহ। আইল্যান্ডটি ডিজাইন করেছেন এইচএইচসিপি আর্কিটেক্টস। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্টিফিসিয়াল পরিকল্পিত কৃত্রিম দ্বীপমালা ও পর্যটনকেন্দ্র। এর দৈর্ঘ্য ৫২০ কিলোমিটার (৩২০ মাইল)। সাগর তীরের একাংশকে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে বালি দিয়ে ভরাট করে এই দ্বীপমালা তৈরি করা হয়েছে। ২০০১ সালে এই কাজ শুরু হয়ে ২০১৪ সালে শেষ হয় এবং ২০১৫ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়। পাম জুমেরা দ্বীপমালায় রয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। পাম জুমেইরাতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থাও রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৫০০ পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা এবং ২৮টি হোটেল ও রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। রাতে চারপাশের হোটেল আর রিসোর্টগুলো দেখলে মনে হয় যেন কাগজ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এগুলো। রিসোর্টে রয়েছে নানা আয়োজন। সব মিলিয়ে পাম জুমেরা মিনি এক পর্যটন দুনিয়া। পাম আইল্যান্ডস সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ দুবাইয়ের শান্ত সাগরের বুকে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছেন। তাও আবার তিনটি। কৃত্রিম হিসেবে দ্বীপগুলো বিশ্বে যত বিস্ময় জন্ম দিয়েছে তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ করছে এগুলোর আকৃতি। দ্বীপ তিনটি হুবহু পাম গাছ আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম দ্বীপগুলোর নাম পাম জুমায়রা, পাম জাবেলে আলী, পাম দেইরা। পাম জুমায়রা ও পাম জাবেলে আলী যথাক্রমে জুন ২০০১ ও অক্টোবর ২০০২-এ শুরু হয়ে নবেম্বর ২০১৪তে পাম জুমেয়রা এর কাজ শেষ হয়। পাম জাবালে আলী ও পাম দাইরার কাজ বর্তমানে প্রায় শেষ। দ্বীপ তিনটিতে রয়েছে এক শ’রও বেশি বিলাসবহুল হোটেল, নিজস্ব আবাসিক সৈকত এবং এ্যাপার্টমেন্ট, থিম পার্ক, রেস্তরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল ও খেলাধুলার সুবিধা। জুমেইরা হতে ৫০ শতাংশ বড় পাম জাবালে আলীতে আড়াই লাখ লোকের আবাসনের ব্যবস্থা থাকছে। এখানে রয়েছে ৬টি প্রমোদতরীর পোতাশ্রয়, থিম পার্ক ও সাগর-গ্রাম। সাত বিলিয়ন ঘনফুট বালির দ্বীপ পাম দাইরাকে আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। এখানে রয়েছে হোটেল ও রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা। পাম দ্বীপগুলো রাশি রাশি বালি আর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মরুভূমির বালির ওপর এমন বিশালায়তন কাঠামো তৈরি করা যৌক্তিক নয় বলে উপকূল থেকে ৬ নটিক্যাল মাইল দূরে পারস্য সাগরের তলদেশ হতে বালি আনা হয়। পাম আইল্যান্ড তৈরি করতে যে পরিমাণ বালি লেগেছে তা দিয়ে আমেরিকার এম্পায়ার এস্টেট ভবনকে আড়াই বার ভরে ফেলা যাবে। শান্ত সমুদ্রে বালি ফেলাটা অত জটিল কোনো বিষয় ছিল না। জাহাজের মাধ্যমে এ বালি রেইনবো পদ্ধতিতে স্প্রে করা হয়েছে পামগাছের আকৃতিতে । বালি সঠিক অবস্থানে পড়ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়েছে জিপিএস টেকনোলজি। স্যাটেলাইটের সাহায্যে প্রতি মুহূর্তেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে কিভাবে কোথায় আর কোন অনুপাতে বালি স্প্রে করতে হবে। যাতে আকৃতি হুবহু শাখা প্রশাখা ছড়ানো একটি পামগাছের মতো হয়। বালির চারপাশে বিশাল সব পাথরখণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে যাতে বালি স্রোতের সঙ্গে ভেসে না যায় । শুধু পাম জুমায়রা তৈরি করতে প্রয়োজন হয়েছে ৭০০ টনের বেশি পাথর। প্রত্যেকটা পাথর আলাদা আলাদা করে ক্রেন ব্যবহারের মাধ্যমে বসানো হয়েছে। পাম আইলান্ড তৈরিতে যত সংখ্যক ক্রেন ব্যবহৃত হয়েছে তা বিশ্বে আর কোনো স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়নি। ক্রেনের মাধ্যমে পাথর বসানো হলেও পাথরের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করতে এখানেও জিপিএস টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে পামগাছকে ঘিরে রাখা বৃত্তটাকে তৈরি করা হয়েছে। যাতে স্রোত থেকে দ্বীপটিকে রক্ষা করে। দ্বীপ তৈরির পাশাপাশি বালিকে চাপ প্রয়োগ করে ঘন করা হয়েছে যাতে ভেতরে কোনো শূন্যস্থান না থাকে। মজার ব্যপার হল এত বড় নির্মাণ শৈলীতে কোনো কনক্রিট বা স্টিল ব্যবহার করা হয়নি। নির্মাণের শুরুতে এ প্রজেক্ট পরিবেশবাদী ও প্রাণী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছিল। কারণ কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের ফলে সমুদ্র উপকূলের বাস্তুসংস্থানের ব্যাপক পরিবর্তন, দ্বীপ নির্মাণের সময়কালে উপকূলে প্রচুর পরিমাণে মাছ আর সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু ও নিয়মিত বহমান উপকূলীয় স্রোতের গতির পরিবর্তন। সমুদ্র ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এসব বাধা তোয়াক্কা না করেই প্রকৃতির বিপরীতে গড়ে উঠেছে পাম আইল্যান্ড। কৃত্রিম পাহাড় আরব বিশ্ব মাঝে মধ্যেই পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এবার বৃষ্টি আনতে একেবারে পাহাড় তৈরি করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সম্প্রতি দুবাই ভ্রমণে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আসলাম কৃত্রিম পাহাড় তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞ! দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়াতে এই কৃত্রিম পাহাড় বানানোর আয়োজন আরব আমিরাতের। আর এই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন সংস্থা কোন ধরনের পাহাড় তৈরি করলে, আবহাওয়ায় কেমন প্রভাব পড়তে পারে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চলছে কৃত্রিম পাহাড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। কতটা উঁচু হবে, কোন ধরনের ঢাল থাকবে- সবটাই পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছে। বৃষ্টিপাতের জন্য পাহাড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত পাহাড়ের একটি ঢালে বৃষ্টি হয় ও অপরদিক শুকনা থাকে। আরবে বৃষ্টি একটা বড় সমস্যা। গত কয়েক বছরে বৃষ্টির জন্য কৃত্রিম ব্যবস্থা করতে বিপুল পরিমাণ খরচ করেছে দেশটি। কৃত্রিম মেঘ তৈরি করার ফলে ২০১৬ সালে ২৪ ঘণ্টায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যে কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে বিমান পর্যন্ত বাতিল করতে হয়েছিল। পাহাড় তৈরি করলে পরিমিত বৃষ্টি হবে। ১.২ মাইল উচ্চতার পাহাড় তৈরি করতে মোটামুটিভাবে ২৩ হাজার কোটি ডলার খরচ হবে। এ ছাড়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ ডলার খরচ করে কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শহর ইতোমধ্যে ভোগ-বিলাস ও নানা অত্যাধুনিক স্থাপত্য দিয়ে বিশ্ববাসীকে নতুন রাজ্যের স্বপ্ন দেখিয়েছে দুবাই। এবার গালফ অঞ্চলের রাজ্যটি গড়তে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শহর। শুধু একটা শপিংমল নয়, ৪৮০ লাখ বর্গফুটের ওই শহরটির উপরিভাগ থাকবে কাচে ঘেরা। সূর্যের প্রাকৃতিক তাপ উপভোগ করার ব্যবস্থাও থাকবে। শীতকালে খুলে দেয়া হবে ওই কাচের আবরণ। পুরো শহরকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার পরিকল্পনাটি বেশ সাহসী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই রাজ্যে নির্মিতব্য কৃত্রিম ওই শহরটিতে প্রচলিত ধারার শপিংমল তো থাকছেই, পাশাপাশি থাকছে পর্যটকের জন্য বিভিন্ন ধরনের ১০০টি হোটেলের ২০ হাজার কক্ষ। আর শপিংমলের আয়তন হবে ৮০ লাখ বর্গফুট! যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিংমলে পরিণত হবে। একসঙ্গে ৫০ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকা শহরটি চালু হলে সেখানে বছরে ১৮ কোটি পর্যটক ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২০ সাল নাগাদ শহরটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্পের কর্মকত। সমাপ্ত
×