ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেড়েছে শাকসবজি চাল ও ডিমের দাম

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ১৩ জুলাই ২০১৮

বেড়েছে শাকসবজি চাল ও ডিমের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রয়লার মুরগি ও আলুর দাম কমলেও বেড়েছে শাকসবজি চাল ও ডিমের দাম। ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও আটার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩ টাকা কমে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২২-৩০ টাকায়। গত সপ্তায় কিছুটা কমলেও ফের বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও সবজির দাম। চাল ও ডিমের বাজর উর্ধমুখী। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার এবং ফার্মগেট কাঁচা বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, বাজেট ঘোষণার পর থেকে অস্থির চালের বাজার। সরু ও মোটা সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে। আমদানিতে ২৮ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর থেকে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৮ টাকা। গত এক মাসে দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া স্বর্ণা ও চায়না ইরির মতো মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। গত এক মাসে সাড়ে ৬ শতাংশের উপরে দাম বেড়েছে এসব চালের। একইভাবে প্রতিহালী ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকায়, যার মাসিক বৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এসব ডিম ৭০-৭৫ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোট ছোট খামারগুলো মুরগি বিক্রি করে ফেলায় ডিম উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সঙ্কটের মুখে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পুনরায় এসব খামার চালু না হলে ভোক্তাদের বাড়তি দামে ডিম খেতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাল আমদানি ও ডিম উৎপাদনে নীতিগত সহায়তা প্রদান না করা হলে ভোক্তাদের এই দুই পণ্য ভোগাতে পারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবার বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে চালের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। যদিও কুষ্টিয়া, শেরপুর ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাতাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম চাতালগুলোতে তেমন বাড়েনি। কাপ্তান বাজারের নূরু রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী নূরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মোটা এবং চিকন সব ধরনের চালের দাম উর্ধমুখী। তিনি বলেন, বিশেষ করে রেয়াতি সুুবিধা প্রত্যাহার করার পর থেকে আমদানিকারক, মিলার এবং চাতাল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে উন্নতমানের মিনিকেট ৬০-৬২ এবং নাজিরশাইল ৬২-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম বাড়ার জন্য আমদানিতে শুল্ক ধার্য্য এবং বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবার বাজেট ঘোষণার আগেই শুল্ক সুবিধা নিয়ে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়েছে। সেই চাল বাজারে আসার আগে আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর এখন ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা গ্রহণ করছেন। অর্থাৎ রেয়াতি সুবিধা নিয়ে আনা চাল এখন ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই করুনীয় নির্র্ধারণ করা প্রয়োজন। তা না হলে অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা আরও বেশি মুনাফা লুটবেন। এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের দাম আবার বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫ টাকা। আর মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। এছাড়া কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বেড়েছে বেশকিছু সবজির দাম। পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বেগুন, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, করলাসহ প্রায় সব সবজিতেই বাজার ভরপুর। এর সঙ্গে নতুন করে এসেছে বাঁধাকপি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা কেজি দরে। আর এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। গত সপ্তাহেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ১২০-১৩০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার বিষয়ে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, বাজারে সরবরাহ কম। বৃষ্টিতে মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার যারা আগাম চাষ করেছিলেন, তাদের অনেকের মরিচ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। এ কারণে কাঁচা মরিচের দাম বাড়তি। এছাড়া গত সপ্তাহে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ বাড়ছে। কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। তবে দেশীয় জাতীয় সব ধরনের মাছের দাম চড়া।
×