ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে নির্মাণ করা হচ্ছে পরিকল্পনাহীন বহুতল ভবন

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৮

  যশোরে নির্মাণ করা হচ্ছে পরিকল্পনাহীন  বহুতল ভবন

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ যশোর শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা। আর ক্রমশ বেড়ে উঠা এসব ভবনে গড়ে উঠছে মার্কেট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভবনগুলোয় যেমন বাড়ছে মানুষের আনাগোনা, তেমনি বাড়ছে যানবাহনের চাপ। তবে এসব ভবনে পার্কিংয়ের জন্য কোন স্থান না থাকায় এর সামনের সড়কগুলো বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের কাছে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য শহরে বাড়ছে যানজটের তীব্রতা। জানা গেছে, পৌর এলাকায় যে কোন ধরনের ভবন নির্মাণ করলে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম কেউ মানছেন না। পার্কিংয়ের জন্য স্থান না রেখেই একের পর এক ভবন নির্মাণ চলছে। পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেয়ার সময় নক্সায় পার্কিং স্পেস দেখানো হলেও সেটি রাখা হচ্ছে না। ব্যস্ততম সড়কের পাশের বহুতল ভবন ও মার্কেটের পার্কিংয়ের স্থান না থাকা, শহরে যানজট সৃষ্টির বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মনে করছেন ট্রাফিক পুলিশ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের ভাষ্য, শহরের প্রধান সড়কের পাশের বহুতল ভবনে অবস্থিত বিভিন্ন অফিস ও মার্কেটগুলোয় প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিক্সা, ইজিবাইকে চেপে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষ আসা যাওয়া করেন। কিন্তু পার্কিংয়ের স্থান না থাকায় এসব যানবাহন সড়কের ওপর যত্রতত্র রাখা হয়। ফলে শহরে যানজট সৃষ্টি হয়। যশোর পৌরসভা সূত্র বলছে, ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী কোন ভবনে যানবাহনের আসা যাওয়া ও পার্কিংয়ের জন্য মূল সড়ক থেকে ন্যূনতম তিন মিটার ব্যবধান রেখে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভবনের আয়তন ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুপাতে পার্কিংয়ের স্থান রাখার নিয়ম রয়েছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী আবাসিক, বাণিজ্যিক, বিপণি বিতান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মিলনায়তন, গুদাম, কারখানায় কমপক্ষে একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১১ দশমিক ৫ বর্গমিটার অর্থাৎ ১২৩ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে। তবে যশোর শহরের এসব প্রতিষ্ঠানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থাই নেই। সরেজমিন শহরের জনবহুল ও ব্যস্ততম বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পার্কিং না থাকায় বিভিন্ন বিপণি, ব্যাংক, বীমা অফিস, হাসপাতাল, ক্লিনিকের সামনের সড়কে যত্রতত্র প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিক্সা, ইজিবাইক রাখা হচ্ছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানাসহ সদর হাসপাতাল এলাকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ এখানকার অধিকাংশ হসপিটাল ও ক্লিনিকের পার্কিংয়ের জন্য কোন স্থান নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এসব এলাকায় যানবাহনের তীব্র জট হচ্ছে। এছাড়া শহরের চিত্রা মোড় এলাকার বঙ্গবাজার, চৌরাস্তা এলাকায় আরএস টাওয়ার, জেস টাওয়ার, রওনক চেম্বার, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামনে এলোমেলোভাবে যানবাহন রাখা হয়। যে কারণে সড়কটিতে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত সৃষ্ট যানজট মোকাবেলায় ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি যশোর পৌরসভাও একযোগে কাজ করছে। যশোর পৌরসভা সড়কে অবৈধ পার্কিং বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, ‘শহরে অবৈধ পার্কিং বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। বেশ কয়েকবার সড়কের ওপর অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ যোগাযোগ করা হলে যশোর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শহরের রাস্তাগুলো বেশ অপ্রশস্ত। পাশাপাশি শহরের বেশির ভাগ মার্কেটের পার্কিং স্পট নেই। যে কারণে এসব মার্কেটের সামনে যত্রতত্র যানবাহন রাখায় শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একটি মাত্র মার্কেট সিটি প্লাজার পার্কিং স্পেস থাকলেও সেটিও খুব অপ্রতুল।’ এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ সাজিয়া সুলতানা বলেছেন, ‘অপ্রশস্ত রাস্তা, পার্কিং স্পেস না থাকা, লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ও ফুটপাথ দখলের কারণে মূলত যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শহরে পৌরসভার অনুমোদনবিহীন ইজিবাইক ও রিক্সা চলাচল বন্ধ, ফুটপাথ দখলমুক্তের পাশাপাশি সড়ক বিভাজক নির্মাণের কারণে যানজট কমে আসছে। তবে আবাসিক-অনাবাসিক ও মার্কেট ভবনের পার্কিং স্পট না থাকায় শহরে যানজট বন্ধ হচ্ছে না।’
×