ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ক্রিকেটারদের কৃতিত্ব

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৭ জুলাই ২০১৮

নারী ক্রিকেটারদের কৃতিত্ব

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীদের অসামান্য সাফল্য দেশের সীমাবদ্ধ অঙ্গনকে ছাড়িয়ে আজ আন্তর্জাতিক বলয়েও বিস্তৃত। প্রবৃদ্ধির সিংহভাগ সূচকে সদর্পে বিচরণ করা অর্ধাংশ এই নারী জাতি খেলার মতো অনন্য আঙিনায়ও তাদের যুগান্তকারী অবদান প্রদর্শন করে দেশ এবং বহির্বিশ্বে নিজের আসনকে পোক্ত করেছে। ক্রিকেটের মতো একটি খেলায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা যে মাত্রায় পারদর্শিতা দেখিয়েছে, তা শুধু বিমুগ্ধ আর বিস্ময়ে অভিভূত করার বিষয়। গত জুনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বে বঙ্গললনারা ইতিহাস গড়ে নিজেদের শুধু যোগ্যতমই প্রমাণ করেনি, দেশের সম্মান ও গৌরব অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এবং সম্মানজনক আরও এক অধ্যায়। টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবার সেরা বিবেচিত হলো। প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডকে ২৫ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা অপরাজেয় জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে পুরো দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। নারী ক্রিকেটারদের এই অগ্রযাত্রা খুব বেশি দিনের নয়। ২০১১ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করে। ৭ বছরের অব্যাহত যাত্রায় চড়াই-উৎরাই যতই থাক না কেন, সাফল্যের পাল্লাটাও বেশ ভারি। নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে ক্রিকেট বিশ্বে গৌরবের আসন অর্জন করা দুর্লভ না হলেও অত সহজ ছিল না। যে কোন খেলা সে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল যাই হোক না কেন, যেদিন খেলে সেটা শুধু সেদিনেরই খেলা। অর্থাৎ শুধু ভাল খেলোয়াড় হলেও সবকিছুকে সামলানো যায় না। প্রতিপক্ষের ক্ষমতা এবং উপস্থিত পরিস্থিতিকেও বিবেচনায় রাখতে হয়। টসে জেতা যে কোন খেলার আকাক্সিক্ষত বিষয়, যা যে কোন দলকে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিয়ে মনোযোগী করে তোলে। নিজের মাঠের চাইতেও বিদেশের আঙিনায় নিজেকে সর্বোত্তম প্রমাণ করা এক অসীম সাহসিকতার ব্যাপার। স্বাগতিক দেশ নিজের পছন্দমতো পিচ তৈরি করে যা সর্বজনবিদিত। আর সফরকারী দল অপরিচিত পরিবেশকে সামাল দিয়ে নিজের সেরা খেলাটা উপহার দেয়ার প্রচেষ্টায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। সুতরাং এখানে সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা যমজ ভাইয়ের মতো পাশাপাশি অবস্থান করে। যারা সবকিছুকে সামলে ব্যাট, বল এবং ফিল্ডিংয়ে পারদর্শিতা দেখাতে পারে তারাই শীর্ষস্থানে চলে আসে। প্রথম যে এশিয়া কাপ টি-২০ উপহার দিল বাংলাদেশ, সে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কুয়ালালামপুুরে। দেশের মাটিতে নয়। টি-২০ এশিয়া কাপের শুরুতে শ্রীলঙ্কার কাছে শোচনীয়ভাবে হারে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা। পরবর্তীতে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে পাকিস্তানকে হারাতে সময় লাগেনি বাঙালী নারীদের। এরপর আর পেছনের দিকে তাকানো নয়। বীরদর্পে শুধুই এগিয়ে চলা। পরের ম্যাচে ভারতীয় নারীরা হেরে যায় বঙ্গললনাদের পারদর্শিতায়। পরবর্তী দুই ম্যাচে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা নির্ধারণীর চূড়ান্ত খেলায় ভারতের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়। পরাশক্তি ভারতকে ব্যাটিং, বোলিংয়ে দুর্দান্ত পারফরমেন্স প্রদর্শন করে টি-২০ এশিয়া কাপ দেশ ও জাতিকে উপহার দিল বাঙালী নারী ক্রিকেটাররা। সর্বশেষ পারদর্শিতা দেখায় বিশ্বকাপ টি-২০ বাছাই পর্বের খেলায়। এই পারদর্শিতার পেছনেও আছে সেই চিরায়ত ক্রিকেটের আর এক ইতিহাস। বিদেশের মাটিই শুধু নয় টসে হেরে যাওয়া নারী ক্রিকেটাররা অসামান্য দক্ষতায় চ্যাম্পিয়নের সর্বোচ্চ সম্মানটিও দখল করে নেয়। হল্যান্ডের স্পোর্টপার্ক মাঠে টসে জিতে আইরিশরা বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। ব্যাটিংয়েও আসে অসামান্য সাফল্য। খুব বেশি টার্গেট ছিল না প্রতিপক্ষের জন্য। ২০ ওভারে মাত্র ১২২ রান। প্রয়োজন ছিল দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের। সত্যিই ব্যাট-বলে-ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ এক শৈল্পিক ক্রিকেট প্রত্যক্ষ করল দর্শকরা। ৯৭ রানে আইরিশরা গুটিয়ে যায়। ২৫ রানের ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শুধু চ্যাম্পিয়ন ট্রফিই জেতা নয়, টুর্নামেন্টে অপরাজিত দলের মর্যাদায়ও অভিষিক্ত হলো নারী ক্রিকেটাররা। নারীদের সাফল্যের এই বিজয় নিশান আরও অব্যাহত ধারায় এগিয়ে যাক, এই আশা পুরো দেশবাসীর।
×