ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাইম ম্যাগাজিনের ভাষায় ওরা- নেক্সট জেনারেশন লিডারস। ওরা প্রত্যেকেই তরুণ এবং সফল। তাদের বেলায় সাফল্যই শেষ কথা নয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইতিবাচক চিন্তাধারা নিয়ে তারা উঠে এসেছেন এই তালিকায়। বদলে দিতে চাইছেন পরিচিত পৃথিবী। হয়ে উঠেছেন প্রজন্মের কণ্ঠস্বর। ধারাবা

প্রজন্মের কণ্ঠস্বর ॥ কারস্টিন ফোর্সবার্গ-সোনিতা আলিজাদেহ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৭ জুলাই ২০১৮

প্রজন্মের কণ্ঠস্বর ॥ কারস্টিন ফোর্সবার্গ-সোনিতা আলিজাদেহ

কারস্টিন ফোর্সবার্গ স্কুলের ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন নিজের স্কুলের ক্ষুদে চিড়িয়াখানা দেখতে। সেখানে প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি মোটেই। নয় বছর বয়সেই শিক্ষকদের সহযোগিতায় বন্ধুদের নিয়ে শুরু করেন ন্যাচার ক্লাব। এখন ৩৩-এ পা দিয়েও কারস্টিন ফোর্সবার্গ প্রাণীদের রক্ষায় উৎসর্গকৃত প্রাণ। কিন্তু তার সেই ছোট্ট ক্লাবটির আয়তন বেড়েছে, বেড়েছে প্রভাব ‘প্ল্যানেটা ওশেনো’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি সে দেশের অন্যতম বৃহৎ এনজিও। কাজ করছেন সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে। বিশেষ করে পেরুর উত্তরাঞ্চলের বিশাল আকারের সামুদ্রিক মৎস্য মান্টা রে সংরক্ষণে। ফোর্সবার্গের ভাষায় মান্টা রে ধ্বংসের যে প্রক্রিয়া চলছিল তা আমার দৃষ্টি কাড়ে। এমনিতেই ওদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। প্রতি দুই থেকে সাত বছরে একবার বাচ্চা দেয়। তাদের যে হারে শিকার করা হচ্ছিল সে বিষয়ে কারও ভ্রুক্ষেপও ছিল না। এই অসাধারণ সুন্দর প্রাণীটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছিল। ফোর্সবার্গ মান্টা রে রক্ষায় আইনগত সুরক্ষার দাবিতে জনমত গঠনে প্রচারণা চালান। সাধারণত নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন। তার দীর্ঘ দুই বছরের সংগ্রামের পর সরকার ফোর্সবার্গের দাবি বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয়। ফোর্সবার্গ জানেন বিষয়টি সহজ নয় মোটেই। চাই দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা। পরিবেশগত কোন সমস্যার সমাধান তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। এ জন্য সময় প্রয়োজন। আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সবার সহযোগিতা পেলেই কেবল আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব। . সোনিতা আলিজাদেহ সোনিতা আলিজাদেহ অভিভাবকদের স্থির করে দেয়া পাত্রকে বিয়ে করবেন বলে তার প্রথম ওয়েডিং পোশাকটি পরেননি। যদিও মোল্লাতন্ত্র শাসিত ইরানে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। প্রথম ওয়েডিং পোশাকটি তিনি পরেছিলেন একটি মিউজিক ভিডিওর জন্য। বিয়ের নামে তাকে নয় হাজার ডলারে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে পারিবারিকভাবে এ কথা জানার পর তিনি তার প্রথম র‌্যাপ সং রেকর্ড করেন ১৭ বছর বয়সে শিরোনাম- বিক্রির জন্য কন্যা। যে গানে তার উচ্চারণ, ‘আমি চিৎকার করে জানাতে চাই একটি মেয়েকে আজীবন নীরবতায় ঠেলে দেয়ার কথা।’ তার গান ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে আফগানিস্তানসহ বাল্যবিবাহ প্রথায় পরিণত হয়েছে এমন সব অঞ্চলে। বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। আজ ২১ বছর বয়সে আলিজাদেহ পরিণত হয়েছেন নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে নিজ প্রজন্মের সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে। শুধু গান নয় লেখালেখিতেও সমান সক্রিয় তিনি। তার লেখা একটি বইয়ের বিক্রি ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি। বক্তা হিসেবেও তুখোর। গাইতে পারবেন এমনটা ভাবতেও পারেননি একটা সময়। তার ৬ বছর বয়সে পরিবার ইরানে পালিয়ে আসে আফগানিস্তান থেকে। বেড়ে উঠেছেন নাম পরিচয়হীন শিশুশ্রমিক হিসেবে। দশ বছর বয়সে তাকে পনের বিনিময়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। তবে তার সৌভাগ্য সেটি হয়নি। আলিজাদেহ তার বান্ধবীদের দেখেছেন বাল্যবিয়েতে রাজি না হওয়ায় নির্মমভাবে প্রহৃত হতে। সঙ্গীত রচনার শুরু ‘পপ’ দিয়ে হলেও এমিনেমের গান শুনে নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য র‌্যাপকে বেছে নেন। তখনকার বাস্তবতায় ইরানে মহিলাদের গান গাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। বাধ্য হয়েই নিজের লেখা গান রাখতেন লুকিয়ে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত গান ‘বিক্রির জন্য কন্যা’ গাওয়ার দিনগুলো আজ তার কাছে মধুর স্মৃতি। আলিজাদেহ আইনজীবী হতে চান। জোরপূর্বক বা বাল্যবিয়ের প্রথা ভেঙ্গে দিতে চান। ইরানে ফেলে আসা বন্ধুদের স্মৃতি তাকে তার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। তার ভাষায়, আমি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করতে চাই। আমি চাই তারা এটা অনুভব করুক তারা যা হতে চায় তা হওয়ার যোগ্যতা, অধিকার দুটোই তাদের আছে।
×