ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিংবদন্তি হতে পারতেন রুডি ভোলারও ...

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৭ জুলাই ২০১৮

  কিংবদন্তি হতে পারতেন রুডি ভোলারও ...

রুমেল খান ॥ ‘আশা বেঁচে আছে জীবন-খাঁচায়/জীবনের জলসাঘরে কেবলই নাচায়/এই আশাই আজও মোরে বাঁচায়/জীবন কেটে যায় আশায় আশায়/কখনও ঘৃণা, কখনও ভালোবাসায় ...’এই অসীম বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে আছে কোটি কোটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ। এই কোটি কোটি ছায়াপথেরই একটি হচ্ছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে আমাদের নিজস্ব সৌরজগত। এই সৌরজগতেরই একটি ক্ষুদ্র গ্রহ হচ্ছে পৃথিবী। এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর অসংখ্য প্রাণীকূলের মধ্যে আছে মনুষ্য জাতি। আর মানুষ জাতির জীবনকালও ক্ষুদ্র। কিন্তু এই একজীবনে তাদের মনে যে আশা ও স্বপ্ন বেঁচে থাকে, সেটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের চেয়েও অনেক বড়। তবে মানুষের জীবন ও ভাগ্য দুটোই বড় বিচিত্র। সে যা চায়, তা অনেক সময় পায় না। কথায় আছে, ‘মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক।’ আজ থেকে ১৬ বছর আগে অনেক বড় কিছু পাওয়ার আশায় একটি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন রুডলফ রুডি ভোলার। সেজন্য নিজের সব মেধা-শ্রম ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবী মুখ তুলে তাকাননি তার পানে। স্বপ্নপূরণ আর ইতিহাসের তৃতীয়বারের মতো পুনরাবৃত্তির খুব কাছাকাছি গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। হয়েছিলেন আশাহত। দগ্ধ হয়েছিলেন হতাশার অনলে। আচ্ছন্ন হয়েছিলেন নীল বেদনায়। ব্রাজিলের মারিও জাগালো এবং জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর এবং ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশমের আগে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি জেতার বিরল কৃতিত্ব অর্জন করতে পারতেন তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির রুডি ভোলার। জার্মানির হয়ে ৯০ ম্যাচে ৪৭ গোলের অধিকারী এবং ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির অধিকারী স্ট্রাইকার পজিশনের তারকা ভোলার ১৯৯০ বিশ্বকাপ (ইতালিতে অনুষ্ঠিত) জেতেন খেলোয়াড় হিসেবে। যদিও ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কাছে ফাইনালে হেরে না গেলে (৩-২ গোলে) মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নিতে পারতেন। ১৯৯৪ সালে খেলা ছেড়ে দিয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে নতুন অধ্যায়-ক্যারিয়ার শুরু করেন রুডি। স্বদেশী ক্লাব বেয়ার লেভারককুসেনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। ওই বছরই ক্লাবটির হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে কোচ হন ইতালির এএস রোমার। ২০০৫ সালে আবারও ফিরে আসেন লেভারকুসেনে। ওই বছরই ক্লাবটিতে কোচ হিসেবে শেষবারের মতো দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ওই বছরই একই ক্লাবে আবারও স্পোর্টিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করে ওই বছরই অবসর নেন। মজার ব্যাপারÑ লেভারকুসেনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেছিলেন ভোলার। সেই লেভারকুসেনেই একই পদে থেকে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন তিনি। তবে দুঃখের বিষয়Ñ খেলোয়াড়ি জীবনে ক্লাব পর্যায়ে ২টি শিরোপা (রোমার হয়ে ১৯৯০ সালে কোপা ইতালিয়া এবং ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্সেইলির হয়ে ১৯৯২ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ) জিতলেও ক্লাবের কোচ হিসেবে কোন শিরোপা জিততে পারেননি রুডি। তবে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে (২০০০-২০০৪ পর্যন্ত দায়িত্বে, এ সময়ে তার অধীনে জার্মানি ৫৩ ম্যাচের ২৯টিতে জেতে, ১১টিতে ড্র করে এবং ১৩টিতে হারে। সাফল্য : ৫৪.৭২%) এর চেয়েও বড় কিছু অর্জনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন ২০০২ বিশ্বকাপ আসরে। সেবার জাপান-কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ওই আসরে ভোলারের অধীনে জার্মানি ফাইনালে ওঠে সৌদি আরবকে ৮-০, ক্যামেরুনকে ২-০ (আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র), প্যারাগুয়েকে ১-০, যুক্তরাষ্ট্রকে ১-০ এবং স্বাগতিক দক্ষিণ কোরিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে। ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ব্রাজিলকে। ৩০ জুন জাপানের ইয়োকোহামায় অনুষ্ঠিত সেই ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় জার্মানি। ব্রাজিলের হযে দুটোই করেন তারকা ফরোয়ার্ড রোনাল্ডো। লুই ফিলিপ স্কলারির রণকৌশলের কাছে হার মানেন রুডি ভোলার। ফলে বঞ্চিত হন ব্রাজিলের মারিও জাগালো (জাগালো খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ এবং কোচ হিসেবে ১৯৭০ বিশ্বকাপ জেতেন) এবং স্বদেশী বেকেনবাওয়ারের (বেকেনবাওয়ার খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৪ বিশ্বকাপ এবং কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতেন। বেকেনবাওয়ারের কোচিংয়েই ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন রুডি) সমকক্ষতা অর্জন করতে। আর এটাই ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত! এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। দলের কোচ ছিলেন দিদিয়ের দেশম। দেশম এর আগে ফ্রান্সের খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। আর এবার জিতলেন কোচ হিসেবে।
×