ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে অপহৃত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ২১ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ

প্রকাশিত: ০২:৪৪, ১৭ জুলাই ২০১৮

রংপুরে অপহৃত ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ২১ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের বাদিয়াপাড়া গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী অপহরণের ২১ দিনেও উদ্ধার করতে পারনি রংপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ। গত ২৭ জুন বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। অপহৃতার মা মলুদা বেগম জানান, থানায় মালা করায় আসামিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। থানায় দুই বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও আসামিদের গ্রেফতার ও মেয়েকে ্উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা জামান ববি সাংবাদিকদের জানান, এর আগে সেখান থেকে চার পাঁচটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। তাদের পাওয়া যায়নি। এটা মানবপাচার হতে পারে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ জুন অপহৃতা স্কুলছাত্রী তার বান্ধবী জান্নাতী বেগমের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার জন্য তার বাসায় যায়। এরপর সেখানে জান্নাতী বেগমের দুলাভাই আসাদ কৌশলে তাদের দুইজনকে নিয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বিকেলে জান্নাতী বেগম ফিরে এলেও অপরজন ফিরে না আসায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এলাকাবাসীর চাপে জান্নাতীর বাবা সুলতান, দুলাভাই আসাদসহ স্বজনরা স্বীকার করে যে, ওই ছাত্রীকে দুইজন অপরিচিত লোকের হাতে তারা তুলে দিয়েছে। পরে এ ঘটনা নিয়ে অপহৃতার মা কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি রেকর্ড করে। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি জানা, নিখোঁজ ছাত্রীতে উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৫ জুলাই কোতয়ালী থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোতয়ালী থানার এসআই আরিফ মামলাটি রেকর্ড না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন। তিনি উল্টো অপহৃতার মা-সহ স্বজনদের ডেকে থানায় নিয়ে মামলা না করার পরামর্শ দেন। আসামিদের পাশে বসিয়ে ওই ছাত্রীর স্বজনদের বিভিন্ন হুমকি দেয়। কোন উপায় না দেখে স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসায় এসে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি কোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়াকে ফোন করেন। এ বিষয়ে তার সাথে দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান। এর প্রেক্ষিতে ১৩ জুলাই শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি অপহৃতার স্বজনদের নিয়ে কোতয়ালী থানায় যান। ওসির কক্ষে গিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেন এখনও মামলা হলো না আসামিদের গ্রেতার করে স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হচ্ছে না এ বিষয় ওসির কাছে জানতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান। নাসিমা জামান ববি জানান, তিনি এসআই আরিফের বিরুদ্ধে অপহরণকারীদের পক্ষ নেওয়া, নিজের কক্ষে তাদের সঙ্গে গল্প করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এক পর্যায়ে ওসি বাবুল হোসেন এসআই আরিফকে তার কক্ষে ডেকে পাঠালে ওসি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওসির চেম্বারে ঢুকেই এসআই আরিফ অপহৃতার মামা আলমগীরকে পেটাতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করলে তাকেও বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন পুলিশের ওই এসআই। এ ঘটনা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ববির সঙ্গে এসআই আরিফের বাক-বিতন্ডা হয়। এ নিয়ে থানায় মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বাসায় চলে আসেন। কোতয়ালী থানার ওসি বাবুল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিযোগ এবং অপহৃতের স্বজনকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে এসআই আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারের জন্য তথ্য সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই স্কুলছাত্রী অপহরণের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ৯ দিন পর পুলিশ মামলা রেকর্ড করে।
×