ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটা আন্দোলনে হামলা এবার ছাত্রলীগকে সরাসরি দুষলেন ঢাবি শিক্ষকদের একটি ছোট অংশ

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ১৮ জুলাই ২০১৮

কোটা আন্দোলনে হামলা এবার ছাত্রলীগকে সরাসরি দুষলেন ঢাবি শিক্ষকদের একটি ছোট অংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলার জন্য এবার সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সরাসরি দুষলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি ছোট অংশ। এতদিন ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে কর্মসূচী চললেও মঙ্গলবার শিক্ষকদের একটি অংশ দাবি নিয়ে সামনে এসেছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে। নতুন এ ব্যানার নিয়েই মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন থেকে গত রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচীতে হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দীন খান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনাসির কামালসহ আরও কয়েকজন। ড. আব্দুর রাজ্জাক খান দাবি করেন, মন্ত্রী বলুক আর যেই বলুক বা তাদের জেনারেল সেক্রেটারি (জাকির) বলুক, আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই, এরা ছাত্রলীগের কর্মী, এরা গু-াবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়েছে। ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ তাদের ইতিহাস জানে না, তাদের ঐতিহ্য জানে না। তোফায়েল সাহেব (বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) আর রাজ্জাক সাহেবের (প্রয়াত মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক) ছাত্রলীগ আর এই ছাত্রলীগ আপনি মেলাবেন? এটা সিম্পলি গু-াবাহিনী। যাদের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, তারা কোথায় পড়ছে, আমি জানি না। এই ধরনের আচরণ আমি আমার ২০ বছরের শিক্ষক জীবন ও সাংবাদিকতা জীবনে দেখি নাই। শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক হামলার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই শিক্ষক। দাবি করেন, অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে তাকে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে, এজন্য তিনি থানায় জিডি করেছেন। ড. সামিনা লুৎফা প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনে যুক্তদের ‘বাম ঘরানার শিবির’, ‘জঙ্গীর মতো’, ‘জামায়াত-শিবির’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়, যারা নিপীড়ক তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হচ্ছে না। কেবল যারা নিপীড়িত, তাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিক থেকে। শহীদ মিনারের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই সমাবেশস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত ছিলেন না, পুলিশ বাহিনীর কেউ ছিলেন না, এভাবে নিপীড়নের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়া হয়েছিল। অনেক পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা আসেন, তাও ঘটনাস্থলের শিক্ষকরা ডাকার পর। প্রক্টর পুরো ঘটনার জন্য একরকম শিক্ষকদেরই দায়ী করেন। নিপীড়ক ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের একইভাবে জড়িয়ে প্রেসকে দেয়া প্রক্টরের বক্তব্য স্পর্ধামূলক এবং তার বক্তব্যে আমরা বিক্ষুব্ধ। সংবাদ সম্মেলন থেকে এই শিক্ষকরা চারটি কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কর্মসূচীর মধ্যে আছে, ১৯ জুলাই বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকদের সংহতি সমাবেশ, ২৩ জুলাই কলা ভবনের সামনে বটতলায় নিপীড়নবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষক লাঞ্ছনার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছে পত্র প্রেরণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান। তবে ছাত্রলীগ বলেছে, শহীদ মিনারের হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগকে জড়িত করার সুযোগ নেই। শিবিরের সম্পৃক্ততার পর এখন আন্দোলন দুইভাবে বিভক্ত। মতবিরোধ চলছে। প্রগতিশীল যেসকল শিক্ষার্থী এর সঙ্গে এতদিন ছিলেন শিবিরের চেহারা প্রকাশের পর তারা আর আন্দোলনে নেই। এমন অবস্থায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগে শিক্ষার্থী পরে লীগ। সেখানে যদি কেউ গিয়ে থাকে তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেতে পারে। ছাত্রলীগের হয়ে কেউ যায়নি। হামলাকে ছাত্রলীগ কখনও সমর্থন করে না। তারা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করেছে। যদি ছাত্রলীগের কেউ গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেবেন কিনা এমন প্রশ্নে জাকির বলেন, আমরা খোঁজ নেব। তবে আমি নিশ্চিত করেই বলছি, ছাত্রলীগের কেউ ছিল না। প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি ॥ এদিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানির পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা উপাচার্যকে স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়ে প্রক্টরের পদত্যাগ এবং ১৪ ছাত্রলীগ নেতার নাম ও ছবি চিহ্নিত করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান। নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পড়ে শোনান রেজা আবু রায়হান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এদিকে সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম ভবন এলাকায় বিজ্ঞান লাইব্রেরির সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। কোটা ব্যবস্থা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
×