ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভল্টের সব সোনা ঠিকই আছে : অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৩০, ১৮ জুলাই ২০১৮

ভল্টের সব সোনা ঠিকই আছে : অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সব সোনা ঠিকই আছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, সরকারী কাজ করতে গেলে সামান্য কিছু ধারণাগত বা জ্ঞানগত ফারাক সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ৪০-৮০-র একটি ব্যাপার হয়ে গেছে। সোনার ওজন পরিমাপে বেশি-কম হতে পারে। উভয় কর্তৃপক্ষ বলেছে এবং আশ্বস্ত করেছে, সোনার কিছুই হয়নি। তবে প্রতিবেদন তৈরিতে কিছু আমলাতান্ত্রিক গাফিলতি থাকতে পারে। বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে এক বৈঠকের পর অর্থ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলাম, এনবিআর সদস্য কালিপদ হালদারও, অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নূরুল আবছার, কমিশনার অব কাস্টমস মইনুল খান, এনবিআরের সদস্য ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুর রহমান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দেড় ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এম এ মান্নান বলেন, স্বর্ণ নিয়ে এই ঘটনাকে মোটেও ছোট করে দেখা হচ্ছে না, কারণ সামান্য ফাঁক দিয়েও বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি হবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করব। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবারও বসব। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব এখন বিদেশে আছেন। তিনি দেশে ফেরার পর সবকিছু জানাব। তারপর সিদ্ধান্ত হবে, এ বিষয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হবে কি না। অর্থ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় ওই খবর দেখে প্রথমে তিনি আঁতকে উঠেছিলেন। তবে এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। যেভাবে খবরের কাগজে এসেছে এটা ভয়াবহ ব্যাপার মনে হয়েছে আমার কাছে। আমি সারাদিন এটার খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আমার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী দেশে নেই, আমার যতটুকু সম্ভব বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলেছি এবং তথ্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ব্যাখ্যা দেয়ার পর সেই উদ্বেগ প্রশমিত হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার মধ্যে যে ভীতি ছিল, সন্ধ্যা নাগাদ তা কমে যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে আশ্বস্ত হয়েছে-যে মাত্রায় খবর পরিবেশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। অনেক বড় মাত্রায় এটি এসেছে, দুনিয়া কাপাঁনো মাত্রায় আমাদের দেশের জন্য। এটি সঠিক নয় বলে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ভয়েরও কোনো ব্যাপার নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান যখন একসঙ্গে কাজ করে, তখন মাঝেমধ্যে ধারণাগত ফারাক হতে পারে, এটি নতুন কিছু নয়। মান্নান বলেন, তার কথা যে ঠিক, তা জনগণ বা যে কোনো সংস্থা চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে দেখে আসতে পারে। এখনো দেশে মান্ধাতা আমলের সোনা মাপার কষ্টিপাথর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, এখন সর্বশেষ কিছু সিস্টেম ইলেক্ট্রনিক্সে পরিমাপ মাপ করা হয়। এর মধ্যে চুল পরিমাণ কিছু বেশকম আসতে পারে রিডিংয়ে। তবে ভয়ের কিছু নেই, সোনা ঠিকই আছে। প্রসঙ্গত, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা সোনায় অনিয়ম নিয়ে মঙ্গলবার দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ভল্টে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি মিশ্র বা সংকর ধাতু হয়ে গেছে। ছিল ২২ ক্যারেট সোনা, হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়ে। প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে তারা দাবি করে, জমা রাখা সোনার পরিমাণে কোনো হেরফের হয়নি। সোনার পরিমাণ একই আছে। বাংলা চার আর ইংরেজি আট দেখতে একই রকম বলে লিখতে ভুল হয়েছিল। এটি করণিক ভুল (ক্ল্যারিকেল মিসটেক)। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভল্ট থেকে কিছু বাইরে যাওয়ার সম্ভবনা মোটেও নেই। সেখানে ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, গবর্নরও অনুমতি ছাড়া ভল্টে যেতে পারেন না। তিনি বলেন, পুরো সিস্টেম নিরাপত্তা, মাপঝোঁক, ব্যক্তি, যারা কাজ করে আমারা পুরোটাই রিভিউ করা হবে। যদি কারো সামান্যতম গাফিলতি পাওয়া যায়, তাহলে আইনানুগ শাস্তির বিধান করা হবে।
×