ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগার ভেঙ্গে আসে বিপ্লবী এক গাঙচিল...

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

কারাগার ভেঙ্গে আসে বিপ্লবী এক গাঙচিল...

মোরসালিন মিজান ॥ কারাগার ভেঙ্গে আসে বিপ্লবী এক গাঙচিল/ নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি/অমর কবিতার অন্তমিল...। ফকির আলমগীরের কণ্ঠে বারবার শোনা গান। আরও একবার শোনা হলো। বুধবার মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুঁড়তে ছুঁড়তে গানটি গাইলেন খ্যাতিমান গণসঙ্গীত শিল্পী। তখন মনে হচ্ছিল এ হাত শ্রমিকের। এ হাত শেকল ভাঙ্গার। নিজের দল ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরাও সঙ্গে গাইছিলেন। চমৎকার কোরাস। গানটির, আহ, কী কথা! বুকের ভেতরে ঢেউ তুলে। সুরে একটা শিহরণ। শিল্পীরা গেয়ে যানÑ মৃত্যুর দরজায় করাঘাত করে আসে যুদ্ধ/বিপ্লব আসবেই আফ্রিকা হাসবেই/অগণিত কালো হাত পৃথিবীকে/করবেই শুদ্ধ...। পরে আরও বেশ কিছু গান। কবিতা। ম্যান্ডেলার জীবন, মুক্তিসংগ্রামের নানা অধ্যায় তুলে ধরলেন বক্তারা। এভাবে উদ্যাপিত হলো নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মদিন। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘শুভ হোক তোমার জন্মদিন’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। জন্মশত বর্ষ হিসেবে আয়োজনটি খুব বড় ছিলÑ ঠিক তা নয়। তবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, এ কথা বলতেই হবে। আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা একইসঙ্গে পৃথিবীকে শুদ্ধ করার, পঙ্কিলতা মুক্ত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনও যেখানে নিপীড়ন নির্যাতন, শোষণ যেখানে, সেখানে তিনি অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটি আরও বেশি আত্মীক। বাঙালীরা তাকে ভালবাসে। শ্রদ্ধা করে। একই কারণে ম্যান্ডেলা নিজে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। এ দেশে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলে তিনি। তখন বলেছিলেন, ‘আমিও বাংলার বন্ধু হতে চাই। যে জাতি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, এমন একটি জাতিকে শ্রদ্ধা জানাতে আমি এসেছি বাংলাদেশে।’ এরপর যেন সম্পর্কটি আরও গভীর হয়। সে গভীরতার কথা তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় গানে। সেখানে মহান নেতার স্তুতি করে শিল্পীরা গায় : শত সূর্যের শক্তি নিয়ে/কালো মানুষের রক্ত দিয়ে/অবিরাম তুমি লিখে চলো ঐ অবিনাশী গান...। বহ্নিশিখার শিল্পীরা ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত একটি গান নিয়মিত বিরতিতে করেন। এদিন আরও অনিবার্য হয়ে ওঠে ‘জিন্দাবাদ ম্যান্ডেলা/ম্যান্ডেলা জিন্দাবাদ’ গানটি। সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানে মহান নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান শিল্পীরা। ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, আনন্দন, স্বভূমি লেখক শিল্পীকেন্দ্র, পদাতিক সঙ্গীত সংসদ এবং সম্বরের শিল্পীদের গানেও স্মরণ করা হয় আফ্রিকান নেতাকে। নেলসন ম্যান্ডেলা বেঁচে আছেন আছেন অজ¯্র কবিতায়। বাংলাদেশের কবিরাও তাকে নিয়ে লিখেছেন। অনুষ্ঠানে সেসব কবিতার কিছু আবৃত্তি করে শোনান বাচিক শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শাহাদাৎ হোসেন নিপু একইসঙ্গে আবৃত্তি শিল্পী। তবে কবিতা থেকে নয়, গীতি কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন তিনি। তার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ম্যান্ডেলার বিদায় বেলাটি, যেখানে বলা হচ্ছে: তোমার প্রেরণা পেয়েই পেরোবো আগামীর কালবেলা/বিদায় মদিবা, বিদায় ম্যান্ডেলা। বরাবরের মতোই ভরাট কণ্ঠে সুন্দর আবৃত্তি করেন রফিকুল ইসলাম। ‘ঈশ্বর নেই, আমি আছি’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে ম্যান্ডেলার প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে ছিল আলোচনা। এ পর্বের শুরুতে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। পরে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নেলসন ম্যান্ডেলাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়াস নেন মফিদুল হক, আখতর উজ জামান, গোলাম কুদ্দুছ, ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ড. মালেকা বেগম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড. আবুল আজাদ। সব মিলিয়ে ঘূণে ধরা চেতনায় কেমন যেন একটা ডাক দিয়ে গেল ‘জয় মানবতা জয় মুক্তি’ স্লোগানে আয়োজিত জন্মোৎসব।
×