ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে

রাশেদের খুনীরা এখনও ধরা না পড়লেও ক্লু রেখে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ জুলাই ২০১৮

রাশেদের খুনীরা এখনও ধরা না পড়লেও ক্লু রেখে গেছে

শংকর কুমার দে ॥ ‘অপরাধীরা কোন না কোন ক্লু রেখে যায়’-অপরাধ বিশেষজ্ঞদের এই কথাই সত্যে পরিণত হলো কাজী রাশেদ হত্যাকা-ের তদন্তে। রাজধানীর বনানী থানাধীন মহাখালীতে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী কাজী রাশেদকে খুনের পর পালিয়ে গেছে খুনীরা। খুনীরা পালিয়ে গেলেও খুন করার পর তারা চিহ্নিত হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে (সিসি ক্যামেরায়)। কাজী রাশেদকে হত্যার পর খুনীরা পালিয়ে যাওয়ার পর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখা যায়, আরেক স্থানীয় যুবলীগ কর্মী সুদর্শন সোহেলসহ তার সহযোগীরা খুন করার পর লাশ টেনে গুম করার চেষ্টা করছে। খুনের অভিযুক্ত সুদর্শন সোহেলসহ তার সহযোগীরা এখনও ধরা না পড়লেও ক্লু রেখে গেছে খুনী চক্র। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বনানী পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর বনানী থানাধীন মহাখালীতে কাজী রাশেদকে খুনের পর লাশ সরিয়ে নেয়া হয়। লাশ সরিয়ে নেয়ার সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে সুদর্শন সোহেলের সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকা-ের পর থেকে পলাতক সুদর্শন সোহেল। পুলিশ তার অফিসের কম্পিউটারে ধারণকৃত সিসি ক্যামেরার সব ফুটেজ জব্দ করেছে। বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুদর্শন সোহেল। আর খুন হওয়া কাজী রাশেদ ছিলেন বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সুদর্শন সোহেলের দেহরক্ষী। রাজধানীর মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর ভবনের (কঙ্কাল বাড়ি) নিচতলায় কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রেইনবো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ নামের একটি অফিস রয়েছে সুদর্শন সোহেলের। সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির নামের নিচে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে- প্রকাশক : ইউসুফ সরদার (সোহেল)। সুদর্শন সোহেলের অফিস এটা। এখানে বসেই রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার ডিশ ব্যবসা, টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও মাদকব্যবসাসহ নানা অবৈধ কাজে যুক্ত ছিলেন সুদর্শন সোহেল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানান, গত শনিবার গভীর রাতে কাজী রাশেদকে খুন করার পরের দিন রবিবার ভোরে বাড়ির পেছনের গলি থেকে উদ্ধার করা হয় তার গুলিবিদ্ধ লাশ। রাশেদের লাশ সুদর্শন সোহেলের অফিসের সামনের সরু পথ দিয়ে টেনে ভবনটির সীমানা প্রাচীরের উল্টোপাশে ফেলে দেয়া হয়। এই খুনের ফুটেজ এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৪ মিনিটে হাতে পলিথিনের ব্যাগ পেঁচিয়ে রাশেদের নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে সরু ওই গলিপথ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৪ যুবক। একটু পরই দেখা যায়, যুবকরা ফিরে আসছে। এ সময় পাশের দেয়ালে হাতে লেগে থাকা কিছু একটা (রক্ত!) মোছেন দিপু। তারা একে একে ধীরে সুস্থে অফিসের সামনের গলি দিয়ে বেরিয়ে যান। ফুটেজে দেখা যাওয়া চার যুবক হলেন-মহাখালী দক্ষিণপাড়ার ডিশ ব্যবসায়ী ফিরোজ, সুদর্শন সোহেলের বডিগার্ড হাসু, সুদর্শন সোহেলের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক দিপন ওরফে দিপু। চতুর্থ জন ফর্সা লম্বা গড়নের। তার পরিচয় উদ্ঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুদর্শন সোহেলের অফিসে বা এর আশপাশে তার বডিগার্ড কাজী রাশেদকে হত্যা করা হয়েছে। নারীঘটিত কিংবা চাঁদার ভাগাভাগির মতো কোন বিষয় এ হত্যার নেপথ্য কারণ বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। শনিবার দিনগত রাত আনুমানিক সোয়া ২টার দিকে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল বলে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক অধিবাসী। ঘটনার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে ঝুলছে তালা, লাপাত্তা সুদর্শন সোহেল ও তার সহযোগীরা। খুনের ঘটনার পর পুলিশ এখনও খুনী চক্রের সদস্যদের কাউকেই ধরতে পারেনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর বনানী এলাকার স্থানীয় যুবলীগ নেতা সুদর্শন সোহেল বিশাল এক গ্যাং গড়ে তুলেছেন মহাখালীতে। এর অন্যতম সদস্য হলেন ফিরোজ, দিপু, হাসু, বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরদার, দক্ষিণপাড়ার রিপন, সাততলা বস্তির শাহ আলম ওরফে প্রিন্স আলম, বনানীর ২ নম্বর রোডের ঘোড়া জুয়েল। তাদের কাছে রয়েছে বৈধ-অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তারা সুদর্শন সোহেলের নেপথ্য পৃষ্ঠপোষকতায় গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকায় ডিশ ব্যবসা, টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও মাদককারবারসহ নানা রকম অপকর্ম করত। মহাখালীস্থ বনভবনের উল্টো পাশে একটি কোম্পানি দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। কয়েকদিন আগে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল এ গ্যাং। বনানী থানার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কী কারণে রাশেদকে হত্যা করা হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সুদর্শন সোহেল ও তার সহযোগীসহ অভিযুক্ত খুুনীদের গ্রেফতার করতে পারলেই রাশেদ হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বনানী থানার পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×