ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈঠক শেষে চৌদ্দ দলের মুখপাত্র নাসিম

ব্যারিস্টার হুদার ৯ দলের জোট ১৪ দলে জোটবদ্ধ হতে চায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ জুলাই ২০১৮

ব্যারিস্টার হুদার ৯ দলের জোট ১৪ দলে জোটবদ্ধ হতে চায়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক হতে চায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন নয়টি দল। বুধবার ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তারা ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা তাদের আগ্রহের কথা শুনেছি। আমাদের জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি জানাব। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়েই আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তিকে জাতীয় নির্বাচনে চূড়ান্ত পরাজিত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপিসহ নয়টি দল আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। আমরা বৈঠক করেছি, ওনারা আমাদের সঙ্গে থাকার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। এই লক্ষ্যে আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। একাত্তরের ঘাতকদের লালনকারী খালেদা জিয়ার অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ছোট বড় সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় এ লড়াইয়ের সঙ্গে শরিক হতে চায় এই ৯ দল। মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, চক্রান্ত করে কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আওয়ামী লীগ লড়াই করে বিজয়ী হতে চায়। তিনি বলেন, এদেশে একটি অশুভ শক্তি আছেÑ যারা একাত্তরের ঘাতকদের আশ্রয় দিয়েছিল, পঁচাত্তরের ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছিল। তারা এখনও চক্রান্ত করছে। অসাম্প্রদায়িক সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির মোকাবেলা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ব্রিফিংকালে তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি বলতে তাদেরই বোঝায় যারা অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিশ্বাস করে এবং সেই জাতীয়তাবাদী শক্তি আজ সাম্প্রদায়িকতার কলুষে কলুষিত। ওই জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সুদৃঢ় করার জন্য জাতীয়তাবাদী জোট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগী হয়ে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, যে সমস্ত চক্রান্ত হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধে, সেটাকে মোকাবেলা করার জন্যই এই অসাম্প্রদায়িকতা জোট করার জন্য কাজ করব। আমরা মনে করি অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী জোট মিলিত হয়ে সবার সমন্বয়ে শক্তিশালী জোটে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী করতে পারব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশ স্বাধীন করেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করতে চাই। জয় বাংলা বলে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে ১৪ দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তৃণমূল বিএনপির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্স, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক জোটের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। তবে জোটের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে অনেকেই জোট সম্প্রসারণের বিপক্ষে। তাঁদের মতে, ১৪ দল হচ্ছে আদর্শিক জোট। এতে কাউকে যুক্ত করলে আদর্শগত মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। তবে কোন দল বা জোটের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য করতে আপত্তি নেই শরিকদের। প্রসঙ্গত, নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোটটি ২০১৫ সালে গঠনের পর আরও একবার ১৪ দলের সঙ্গে যুক্ত হতে বৈঠকে বসেছিল। ওই সময় ক্ষমতাসীন জোট থেকে নাজমুল হুদাকে সরাসরি জোটভুক্ত না হয়ে যুগপৎভাবে কর্মসূচী পালনের পরামর্শ দেয়া হয় এবং জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নির্বাচনের আগে বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়।
×