ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ড শেষে কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ জেলে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৯ জুলাই ২০১৮

রিমান্ড শেষে কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ জেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসায় ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। আরেক আন্দোলনকারী মোঃ সোহেল ইসলামকে কারাগার থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচার এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে ঢাবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আজ দুপুর ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষকদের একটি গ্রুপ। বুধবার পাঁচদিনের রিমান্ড শেষ কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তার আইনজীবী জাহিদুর রহমান জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নুরের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে ৮ জুলাই ভিসির বাসা ভাংচুর ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দুই মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফেসবুক লাইভে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে গ্রেফতার মোঃ রাশেদ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২ জুলাই পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১ জুলাই শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়ের যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাশেদ খান কোটা সংস্কার চাই নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে ভিডিও লাইভে এসে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য দেন। এসব মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এমন অভিযোগে শাহবাগ থানায় রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এদিকে আন্দোলনকারী আরেক নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ সোহেল ইসলামকে কারাগার থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোহেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বুধবার এ বিষয়ে দায়ের করা এক আবেদনের শুনানি করে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবীর আদালত এ আদেশ দেয়। নিরাপত্তার দাবিতে ঢাবির সকল ডিপার্টমেন্টের সম্মিলিত মানববন্ধন ॥ সকল ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে বিচার, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সকল ডিপার্টমেন্টের সম্মিলিত মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্বের অবসান দাবি করা হয়েছে। বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তাতে লেখা- ‘ফার্স্ট সেফটি, দ্যান ক্লাস’; শিক্ষকদের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘ছাত্রকে জেলে নয়, ক্লাসে ফেরত চাই’; ‘সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’; ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই’ ইত্যাদি। মানববন্ধনে অথনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুসাদ ফরিদী বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। তারা ক্যাম্পাসে ন্যায্য দাবি নিয়ে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাতে আজ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সকল আন্দোলনের সূতিকাগার। কিন্তু আজ আমাদের শিক্ষার্থীরাই ছোটখাটো দাবি নিয়ে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছে। তাই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করবে, এ রকম ক্যাম্পাস তো আমরা চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করবে। এটা তাদের অধিকার। কোটা সংস্কার আন্দোলন কি কোন নিষিদ্ধ আন্দোলন? যদি তা না হয় তবে কেন আমাদের ভাইদের গ্রেফতার করা হলো, রিমান্ডে নেয়া হলো? মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- গ্রেফতারকৃত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে আজ দুপুর ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষকদের একটি গ্রুপ। জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত বাম ঘরানা শিক্ষকদের একটি অংশ এ কর্মসূচীর উদ্যোক্তা হলেও কর্মসূচীতে ঢাকা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচী সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
×