ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফ্রিকানরাই সত্যিকারের বিশ্বকাপজয়ী!

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

আফ্রিকানরাই সত্যিকারের বিশ্বকাপজয়ী!

জিএম মোস্তফা ॥ দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। সদ্য সমাপ্ত রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দীর্ঘ দুই দশক পর আবারও শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসে দিদিয়ের দেশমের দল। এর আগে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের এই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল দেশম-অঁরি-জিদানরা। বিশ বছর পর আবারও সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে দেশমের শিষ্যরা। তবে ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী এই দলের বেশিরভাগ সদস্যই অভিবাসী। যে কারণেই ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিশ্বাস ফ্রান্স নয় বরং আফ্রিকানরাই ২০১৮ বিশ্বকাপের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। দেশটির জাতীয় পুলিশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘ফ্রান্সের দলটাকে মনে হয় আফ্রিকার দল। সত্যি কথা বলতে আফ্রিকানরাই বিশ্বকাপ জিতেছে, যারা অভিবাসী হিসেবে আফ্রিকায় এসেছিল তারাই এই জয়ের নায়ক। অথচ আফ্রিকানদের কতই না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে তারা। কিন্তু আফ্রিকান ফুটবলার কিংবা তাদের সন্তানদের সৌজন্যেই এবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে ফ্রান্স।’ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশের নীতিই বেশ কঠোর। ফ্রান্সও তার বাইরে নয়। দুই দশক ধরে দেশটিতে অভিবাসীদের রুখতে আইন ও শক্তিপ্রয়োগ করে যাচ্ছে ফ্রান্সের শাসকগোষ্ঠী। সেখানকার সমাজে অভিবাসীবিরোধী বীজ বুনে দেয়া হচ্ছে, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ ফ্রান্সের যে দলটি রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতেছে সে দলের ২৩ জনের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ জন খেলোয়াড় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এদের অনেকে নিজে অথবা তাদের পরিবার আফ্রিকা থেকে অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে এসেছিল। এমনকি এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় সেনসেশন ১৯ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপের পরিবারও আফ্রিকান অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছে। এমবাপের মা আলজিরিয়ান, বাবা ক্যামেরুনের। এ ছাড়া দলের রক্ষণসৈনিক স্যামুয়েল উমতিতি ক্যামেরুনে, স্টিভ মান্দানা কঙ্গোতে জন্মগ্রহণ করেছেন। পল পোগবার বাবা-মা এসেছেন গিনি থেকে। এনগোলো কন্তের পরিবার এসেছে মালি থেকে। ব্লেইস মাতুইদির বাবা-মায়ের জন্ম এ্যাঙ্গোলায়। প্রেসনেল কিমপেবে ও স্টিভেন এনজনজির বাবার জন্ম কঙ্গোতে। কোরেনটিন টলিসোর বাবা এসেছেন টোগো থেকে। এ তালিকা লম্বা হতেই থাকবে। বলতে গেলে অভিবাসীরাই ফ্রান্সকে বিশ্বকাপটা এনে দিল। গত রবিবার শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে ফ্রান্স। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে এদিন দুই গোলদাতাই আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। কিলিয়ান এমবাপে আর পল পোগবা। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই তাদের পারফর্মেন্স ছিল নজরকাড়া। মোটকথা তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সই এবারই ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অথচ অভিবাসীদের প্রতি ফ্রান্সের আচরণ খুবই বৈষম্যমূলক। ২০১৫ সালের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্যারিসের বাইরে একটি আবাসন প্রকল্পে দুই কিশোরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা শহরাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই দুই কিশোরকে পুলিশ ধাওয়া করার এক পর্যায়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট করে হত্যা করে। চলতি বছরের জুন মাসে প্যারিসের পাশের শহর নান্টেসে পুলিশ গিনি থেকে আসা একজন অভিবাসীকে চেকপোস্টে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। অভিবাসন ও অভিবাসীদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে বিশাল সঙ্কটে ভুগছে। সব জায়গাতেই অভিবাসীদের ওপর পুলিশ চড়াও হয়েছে, বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়নি, এমনকি তাদের ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা থেকেও অনেক সময় বঞ্চিত রাখা হয়েছে। যে অভিবাসীদের ওপর এত নির্যাতন, তারাই ফ্রান্সের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গৌরবটি এনে দিল। এছাড়া বিশ্বকাপজয়ী এই দলে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়ও ছিল বেশ ক’জন। তারা হলেন দলপতি হুগো লরিস, চার গোল করে আলো ছড়ানো এ্যান্টনি গ্রিজম্যান এবং অলিভিয়ের জিরুড।
×