ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিসে উৎসব চলছেই...

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

প্যারিসে উৎসব চলছেই...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘোরের মধ্যে দিন কাটছে ফরাসীদের। দীর্ঘ ২০ বছর পর বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের আনন্দে মাতোয়ারা ফ্রান্স। রবিবার বিশ্বজয়ের পর সোমবারই ট্রফি নিয়ে প্যারিসে ফিরেছেন এ্যান্টনিও গ্রিজম্যান, পল পগবারা। মাঝে কেটে গেছে তিনদিন। অথচ দেশটির মানুষের মনে এখনও লেগে আছে রংয়ের ছোঁয়া। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়-ক্যাফেতে সর্বত্রই চলছে বিশ্বজয়ী বীরদের প্রশংসা। সংবাদ মাধ্যমের প্রথম পাতার শিরোনামে এখনও ফুটবলারদের বন্দনা। একের পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশে আবেগঘন বক্তব্য রাখছেন অধিনায়ক হুগো লরিস, বড় তারকা গ্রিজম্যান ও তাদের বস দিদিয়ের দেশম। সবমিলিয়ে উৎসবের আমেজেই দিন কাটছে ফ্রান্সবাসীর। এ উৎসব যেন ফুরোবার নয়...! অধিনায়ক হুগো লরিস তাদের অনাগত উত্তরসূরিদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরাই ফ্রান্সের ভবিষ্যত। আমি নিশ্চিত একদিন তোমরা এরচেয়েও বড় উৎসবের উপলক্ষ এনে দেবে দেশকে। চলার পথে যত বাধাই আসুক, স্বপ্ন দেখা কখনও ছাড়বে না।’ অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন ফাইনালের তিন হিরো এমবাপে, গ্রিজম্যান ও পগবা। ১৯ বছর বয়সী এমবাপের হাতে এবার ব্যালন ডি’অর দেখছেন অনেকেই। কিন্তু এমবাপে ওসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না, ‘আমার সামনে অনেক পথ পড়ে আছে। ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে আমার সত্যিই আগ্রহ নেই। এই যে দেশের সবার মুখে হাসি, সবার মনে আনন্দÑ এটাই বড় প্রাপ্তি। ফ্রান্সকে খুশি করতে পেরে আমরা সবাই গর্বিত।’ শোভাযাত্রায় চেঁচিয়ে গলা ভেঙ্গে গেলেও এলিসি প্রাসাদের বাগানে অতিথিদের বিনোদিত করতে বেসুরো গলায় গান ধরেন পগবা। সতীর্থদের নিয়েও মজা করেন এই ম্যানইউ তারকা। পগবার মাঝমাঠের সঙ্গী এনগোলো কান্তে একটু লাজুক স্বভাবের। প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। এতটাই যে বিশ্বকাপ জয়ের রাতে পরম আরাধ্য ট্রফিটা হাতে নিয়ে ছবি তুলতেও নাকি লজ্জা পাচ্ছিলেন। সেই কান্তেকে নিয়ে রীতিমতো গান বেঁধে ফেলেছেন পগবা। কান্তে তাতে বিব্রত হলেও সোমবার রাতেই দেশের প্রেসিডেন্টের সামনে গানটি গেয়ে শোনান পগবা, ‘এনগোলো কান্তে, পা লা লা লা। সে ছোটখাটো দুর্দান্ত এক মানুষ, সে আটকেছে লিওনেল মেসিকে। সে যোদ্ধা, তবু সে লজ্জা পায়, পা লা লা লা...।’ সোনার ট্রফির সোনালি আভায় পগবার মতোই গোটা ফরাসী জাতিরই এখন সময়টা কাটছে দারুণ ফুর্তিতে। তার আগে শিরোপা নিয়ে প্যারিসে পা রেখেই ফুটবলাররা পেয়েছেন রাজসিক সংবর্ধনা। দলের সবাইকে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফরাসী সরকার। তবে দেশবাসীর হাসিমুখই এমবাপে, গ্রিজমানদের বড় প্রাপ্তি। শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ লাখ সমর্থকের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন চ্যাম্পিয়নরা। হুডখোলা বাসে চেপে শজঁ-এলিসি এ্যাভিনিউতে বিজয় র‌্যালিতে যোগ দেন বিশ্বকাপজয়ী নায়করা। এখানেই শেষ নয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রেঁদ্ধার বাসভবনেও রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা জানানো হয় চ্যাম্পিয়নদের। এলিসি প্রাসাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় তিন হাজার। তাদের মধ্যে স্থানীয় কিছু ক্লাব ও একাডেমির প্রায় এক হাজার ক্ষুদে ফুটবলার ছিল। এদের অধিকাংশই প্যারিসের শহরতলির নি¤œবিত্ত পরিবারের সন্তান। যে এলাকা থেকে উঠে এসেছেন ফ্রান্সের সোনার ছেলে কিলিয়ান এমবাপের মতো বিশ্বকাপজয়ী দলের আরও অনেকেই। এই শিশুদের মধ্য থেকেই উঠে আসবে আগামীর এমবাপে, পগবারা। তাদের চোখে সেই স্বপ্নের বীজ বুনে দিতেই বিশ্বকাপ ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়। শুধু ট্রফি ছুঁয়ে দেখা নয়, স্বপ্নের নায়কদের সঙ্গে ছবিও তুলেছে ওরা। ফ্রান্সের প্যারিসে বিশ্বকাপ জয় উদ্যাপন নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া সংঘর্ষ ও পাল্টা-ধাওয়া হয়েছে সমর্থকদের। জয় উদযাপনে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সমবেত হয় অসংখ্য মানুষ। তাদের কারণে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের দাঙ্গা বাধে। পুলিশ সমর্থকদের উদ্দেশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে তারা।
×