ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় যে পাঁচ দেশের ...

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৯ জুলাই ২০১৮

ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় যে পাঁচ দেশের ...

রুমেল খান ॥ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ফিফা বিশ্বকাপ। মাত্র ক’দিন আগেই ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে একবিংশ আসরের পর্দা নামলো। আগামী চার বছরের জন্য বিশ্ব ফুটবলের সেরার মুকুট ফ্রান্সের মাথায়। বিশ্বকাপ চার বছর পরপর আসে কিন্তু তার মাঝখানে সবাই মেতে থাকে ক্লাবের খেলাগুলো নিয়ে। আগামী আগস্ট মাস থেকে আবার শুরু হচ্ছে ক্লাব ফুটবলের আসর। সকলে এবার বুঁদ হয়ে থাকবে ক্লাব ফুটবলে। ক্লাব ফুটবলের দ্বৈরথ দেখতে ঘুম বিসর্জন দেবে ফুটবলপ্রেমীরা। পাঠকরা কী জানেন ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বেশি কোন দেশের খেলোয়াড়? পুরো বিশ্বে মোট ১৩৭ লীগ চালু রয়েছে। বিদেশী লীগে খেলার সুবাদে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা যেমন পরিপক্ব হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার যেমন যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সেই সঙ্গে একটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকাও রাখে। আসুন জেনে নেই বিশ্বের বিভিন্ন ক্লাবে যেসব খেলোয়াড়রা খেলে তাদের সংখ্যার ভিত্তিতে শীর্ষ পাঁচ দেশের আদ্যোপান্ত। * ব্রাজিল ॥ এই তালিকার সবার শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। ব্রাজিলকে বলা হয় ফুটবলের দেশ। দেশটির আনাচে-কানাচে হাজার হাজার ফুটবলারের জন্ম হয়। বর্তমানে বিদেশে লীগগুলোতে সর্বমোট ১ হাজার ২০২ ফুটবলার খেলছেন। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফুটবলার উয়েফাভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলছেন। তবে ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ফুটবলার খেলেন পর্তুগালে। পর্তুগালের শীর্ষ দুটি লীগে ব্রাজিলের মোট ২২১ ফুটবলার খেলেন। পর্তুগাল কেন? এই দুটি দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি একই ধরনের। তাছাড়া ব্রাজিল একসময় পর্তুগালের উপনিবেশ ছিল। এ জন্যই দুটি দেশের মধ্যে অনেক মিল। পর্তুগালের পরেই রয়েছে জাপান। জাপানী লীগের ক্লাবগুলোতে বর্তমানে ব্রাজিলের প্রায় ৫৪ ফুটবলার খেলেন। বিশ্বের প্রায় ৮০ দেশে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। * ফ্রান্স ॥ তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে ফ্রান্স। কিন্তু ফ্রান্সের কোন ক্লাব এখন পর্যন্ত ইউরোপিয়ান শিরোপা জিততে পারেনি। ফ্রান্সের সেরা ফুটবলাররা তাদের ঘরোয়া লীগের চেয়ে বিশ্বের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লীগগুলোতে খেলতে পছন্দ করেন। এ কারণেই হয়তো ফ্রান্সের ক্লাবগুলো ইউরোপিয়ান পর্যায়ে তেমন কোন সাফল্য পাচ্ছে না। বর্তমানে ৭৮১ পেশাদার ফরাসী ফুটবলার বিদেশী লীগগুলোতে খেলেন, যার মধ্যে ১০৭ জন খেলেন ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোতে। মোট খেলোয়াড়ের মধ্যে ৮১ শতাংশ উয়েফাভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলেন। এর মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ খেলেন ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, লুক্সেমবার্গ এবং জার্মানিতে। ফ্রান্সের অধিকাংশ ফুটবলারই আলজিরিয়ান বংশোদ্ভূত। মজার বিষয়Ñ তারা অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে এসেছেন এবং ফুটবলার হওয়ার পরে তারা আবার আলজিরিয়ার ঘরোয়া লীগের শীর্ষ ক্লাবগুলোতে খেলতে যান। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশে ফরাসী ফুটবলাররা খেলছেন। * আর্জেন্টিনা ॥ ইউরোপের প্রায় বড় বড় সব লীগে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা আধিপত্য বিস্তার করেছে। ফিফার সূত্রমতেÑ বিশ্বের বিভিন্ন ফুটবল লীগে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিতভাবে আর্জেন্টিনার প্রায় ২৬ লাখ ফুটবলার খেলছে। কয়েক বছর আগেও আর্জেন্টিনা ছিল শীর্ষ ফুটবলার রফতানিকারক দেশ। তবে বর্তমানে আর্জেন্টিনার ৭৫৩ ফুটবলার বিদেশী লীগগুলোতে খেলছেন। যাদের মধ্যে ৫০ ভাগই খেলছেন চিলি, মেক্সিকো, ইতালি, স্পেন এবং বলিভিয়ায়। এই ৭৫৩ ফুটবলারের মধ্যে ৩৭ ভাগ ফুটবলারই দেশ ছেড়েছেন উয়েফাভুক্ত দেশগুলোর ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। আর্জেন্টাইন ঘরোয়া লীগ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তের ফুটবল ক্লাবগুলোকে আকর্ষিত করে এবং এখান থেকে অনেক খ্যাতিমান ফুটবলার জন্ম নিয়েছে। এছাড়া আর্জেন্টাইন ফুটবল লীগে খেলার সুযোগ পাওয়া অনেক কঠিন হওয়ায় অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা এরচেয়ে সহজ লীগগুলোতে খেলার জন্য দেশ ছাড়ছেন। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ খেলোয়াড় অনিবন্ধিতভাবে বিদেশী লীগে খেলতে যাওয়ায় আর্জেন্টিনার মোট কত খেলোয়াড় বাইরের লীগে খেলছেন সেই হিসেব পাওয়া খুব কঠিন। তবে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন এই ফুটবলাররা। * সার্বিয়া ॥ অবাক হলেও সত্যি, এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে সার্বিয়া। কারণ ইউরোপের ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সার্বিয়া নিচের দিকেই রয়েছে, যদিও তারা সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবলের এই দেশটি প্রচুর সংখ্যক ফুটবলার রফতানি করে থাকে। যুগোসøাভিয়া এবং মন্টিনিগ্রো থেকে আলাদা হওয়ার পর সার্বিয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে ফিফা এবং উয়েফার সদস্য হয়েছে। বর্তমানে সার্বিয়ার সর্বমোট ৪৬০ পেশাদার ফুটবলার বিশ্বের বিভিন্ন লীগে খেলছেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশই উয়েফাভুক্ত দেশগুলোতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলছেন। সার্বিয়ার অধিকাংশ ফুটবলার অভিবাসী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো এবং হাঙ্গেরিতে অভিবাসী হিসেবে চলে গেছে। তবে বর্তমানে যে ফুটবলাররা বাইরের দেশের লীগগুলোতে খেলছেন, তারা সার্বিয়ার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছেন। * ইংল্যান্ড ॥ ফুটবলের জনক বলা হয় ইংল্যান্ডকে। ফুটবল বিশ্বের সর্বপ্রথম লীগ চালু হয় ইংল্যান্ডে। বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট লীগ হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। এই লীগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত ফুটবলার এসে খেলেন। তবে অন্য দেশের ফুটবলাররা শুধু ইংল্যান্ডেই এসে খেলেন, তা নয়। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রাও অন্য দেশের লীগগুলোতে খেলে থাকেন। বর্তমানে ইংল্যান্ডের ৪৫১ ফুটবলার অন্য দেশের লীগগুলোতে খেলছেন। এই খেলোয়াড়দের ৭৯ শতাংশ উয়েফাভুক্ত দেশগুলোতে খেলছেন। ৫৭ শতাংশ ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে এবং বাকি ফুটবলাররা গ্রেট ব্রিটেনে খেলছেন। তবে ইংলিশ ফুটবলারদের বড় একটি অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে পছন্দ করেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে ইংল্যান্ডের বেশ মিল রয়েছে। ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের পরে বেশিসংখ্যক ফুটবলার আমেরিকায় খেলতে পছন্দ করেন।
×