২০১৩ সালে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের সঙ্গে একটি মুঠোফোনের বিজ্ঞাপনে এক নতুন মুখের বলা সংলাপ-‘এ তো অসম্ভব’ বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। আর সেই সংলাপ এবং হার্টথ্রব বিউটি দিয়ে সে সময় সবার নজর কাড়েন সেই মেয়েটি। তিনি বর্তমান সময়ে শোবিজের প্রিয়মুখ টয়া। এবার ছোট পর্দা থেকে টয়ার অভিষেক হতে যাচ্ছে বড় পর্দায়। গত ৬ জুন সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে টয়া অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বেঙ্গলি বিউটি’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাহশান নূর। বর্তমানে ছবিটি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। চলতি বছর ভালবাসা দিবসে ‘বেঙ্গলি বিউটি’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেন্সর ছাড়পত্র পেতে দেরি হাওয়ায় ছবিটি মুক্তির মিছিলে পিছিয়ে পড়ে। আগামী ২০ জুলাই সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা রাহসান নূর। সত্তর দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে এক বেতার কর্মীর সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও এক মেডিকেল ছাত্রীর সঙ্গে তার সম্পকের্র রসায়ন রূপায়ণ করা হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন হওয়া চলচ্চিত্রে ঘটেছে রোমান্টিক গল্পের সমৃদ্ধ চিত্রায়ণ। ছবিটিতে সত্তর দশকের একজন মেডিক্যাল ছাত্রীর চরিত্রে দেখা যাবে টয়াকে। যে কিনা রেডিও শুনে একজনের প্রেমে পড়ে। এই চরিত্রে নিজেকে তৈরি করতে সত্তর দশকের অনেক ছবি দেখতে হয়েছে তাকে। সে সময়ে মেয়েরা কী ধরনের পোশাক পরতেন, কিভাবে কথা বলতেন সবকিছুই আয়ত্ত করেছিলেন বলে জানান টয়া। অভিষেক প্রসঙ্গে মুমতাহিনা টয়া বলেন, ‘ছোট পর্দায় কাজ করলেও বড় পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছা কার না থাকে! আমারও শুরু থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় পর্দায় আসব। কিন্তু এতদিন ব্যাটে-বলে না মেলায় করা হয়নি। এই প্রথম আমার সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তাই মনের মধ্যে একটু ভয় ও নার্ভাসনেস কাজ করছে।’
ছবিটি প্রযোজনা করেছেন রাফি তামজিদ। ছবির গল্প ও চরিত্র প্রসঙ্গে টয়া বলেন, মে মাসে আমরা শুটিং শেষ করেছি। এই ছবিতে আমার চরিত্র ভিন্নরকম। সত্তর দশকের এক নারীর চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। চরিত্রের প্রয়োজনে আমার লুকেও সত্তর দশকের নারীদের মতোই ছবিতে দেখানো হয়েছে। এটুকু বলতে চাই, ‘বেঙ্গলি বিউটি’ চমৎকার একটি গল্পের চলচ্চিত্র। ছবিতে পুরনো দিনের ঢাকার চিত্রও ফুটে উঠবে।’
‘বেঙ্গলি বিউটি’র প্রাক-প্রদর্শনী ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। ছবিটি দেখতে গিয়ে অনেকেই ভুগেছেন হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ‘গুড মর্নিং ভিয়েতনাম’র নস্টালজিয়ায়।
টয়া-রাহসান ছাড়াও সারা আলম, আশফাক রেজওয়ান, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুম বাশার, জিএম শহিদুল আলম, সারা আলমনাজিবা বাশার, নেইলি আজাদ প্রমুখ অভিনয় করেছেন এ চলচ্চিত্রে। ‘বেঙ্গলি বিউটি’র শূটিং হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরা, বাংলাদেশ বেতারের পুরনো অফিস, শাহবাগ, বনানী, পুরানা পল্টনের বিভিন্ন লোকেশনে।
২০১০ সালের ‘লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতার শীর্ষ পাঁচ-এ থাকা টয়া বর্তমানে নাটক, টেলিফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, বিজ্ঞাপন, উপস্থাপনা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিওসহ কাজ করছেন চলচ্চিত্রে। বাকপটু এ মডেল অভিনেত্রী বন্ধু মহলে ‘টমবয়; হিসেবে বেশ পরিচিত। সেই ছোটবেলা থেকেই টয়ার চেহারা আর চালচলন ছিল অনেকটা ছেলেদের মতো। কথায় যেমন পটু তেমনি চঞ্চল। তুখোড় আড্ডাবাজ। শূটিং স্পটের যেখানেই হৈহুল্লোড় সেখানেই টয়া! চুপচাপ থাকতে একদম পছন্দ করেন না। লাফালাফিতে তার জুড়ি মেলে না। সে কারণেই নাটকের ডানপিটে চরিত্রগুলোতে পরিচালকদের প্রথম পছন্দ টয়া। অভিনয়ের পাশাপাশি মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবেও বেশ আলোচিত টয়া। বিশেষ করে মমতাজের গাওয়া ‘লোকাল বাস’ গানের মডেল হয়ে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে ভিজ্যুয়ালাইজারের ব্যানারে টয়া মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কাজী শুভর গাওয়া ‘সুন্দরী’। যেখানে অন্যরূপে টয়াকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
অভিনেত্রী ও মডেল মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও চলচ্চিত্রে কাজ করার আগ্রহ ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে পুরো বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে কাজ করার চেয়ে তার বেশি আগ্রহ ছিল বিকল্প ধারার গল্পনির্ভর চলচ্চিত্রের প্রতি। টয়া স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অনেক আগেই দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছেন। বিশেষ করে তার অভিনীত ‘বখাটে’ ও ‘রূপ’ স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিগুলো আলোচিত হয়। যে, ‘টমবয়’ টয়া তথা ‘বেঙ্গলি বিউটি’ সবাইকে ছাড়িয়ে কতটা হলমুখী করতে পারে বাঙালী দর্শককে। এখন অপেক্ষার পালা ২০ জুলাই!
আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
