ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী অনুদানে চলচ্চিত্র ওমর ফারুকের মা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৯ জুলাই ২০১৮

সরকারী অনুদানে চলচ্চিত্র ওমর ফারুকের মা

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢাকার কয়েকটা মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিতে হামলা চালালে ধরা পরে রুমী , বদি, আলতাফ মাহমুদ, জুয়েল এবং আজাদ। এদের মধ্যে আজাদের ওপর পাকিস্তানীরা প্রচ- অত্যাচার চালিয়েও কথা বের করতে পারে না। তখন তার মাকে বলা হয়, ছেলে যদি সবার নাম-ধাম ইত্যাদি বলে দেয়, তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। আজাদের মা ছেলের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, শক্ত হয়ে থেক, কারও নাম বলে দিও না। আজাদ বলে, মা দু’দিন ভাত খাই না, ভাত নিয়ে এসো। মা পরের দিন ভাত নিয়ে হাজির হন বন্দী শিবিরে, কিন্তু ছেলের দেখা আর মেলে না। আর কোন দিনও ছেলে তার ফিরে আসে নাই, এই মা আর কোন দিনও জীবনে ভাত খান নাই। যুদ্ধের ১৪ বছর পরে ১৯৮৫ সালে মা মারা যান, সেই ৩০ আগস্ট যে দিন আজাদ পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে। নিঃস্ব, রিক্ত-বেশে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁকে কবরে শায়িত করলে আকাশ থেকে ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে বৃষ্টি। তথ্য আনিসুল হকের ‘মা’ থেকে নেয়া। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ঢাকা শহরের আজাদ-রুমীদের মতো আরও অনেক সূর্য তরুণের অসমসাহসিকতা এবং দুর্বার দেশপ্রেম কেবল বড় শহরের মধ্যে গ-িবদ্ধ ছিল না বরং মরণ নেশায় মত্ত দেশপ্রেম পৌঁচ্ছে গিয়েছিল বাংলার শত শত নদীর বাঁকে। আমাদের সহজ সরল বাংলা মায়েরা তাদের একমাত্র সম্বল হৃৎপি-তুল্য সন্তানদের উৎসর্গ করেছিলেন বাংলা মায়ের পদযুগলে। আহারে কি মহৎ আমাদের মায়েরা! এমনি এক মহৎ মা হলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুকের মা কুলসুম বেগম। যিনি আজ অবধি বেঁচে আছেন সন্তানের শ্রেষ্ঠ বীরকর্ম শেষে ফিরে আসার অপেক্ষায়! মায়ের নির্ঘুম রাত্রি, উন্মুক্ত দ্বার আজও ওমর ফারুকের অপেক্ষায়... কে বলবে মাকে ওমর ফারুক আর ফিরে আসবে না। কার আছে এমন হিমাদ্রীসম মায়ের হৃদয় ভাঙ্গার সাহস! নেই। কারোর নেই! মায়েরও তাই অন্তহীন অপেক্ষা, কোন একদিন রাত্রি শেষে আধজাগরণ মায়ের খাটের পাশে দাঁড়িয়ে ওমর ফারুক বলবে মা ভাত দেও। মা তার মানিককে সুতির কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়াবেন, যে ভাত তার জন্য আগেই রান্না করা ছিল। জীবন সায়াহ্নে এসে আজও মায়ের বিশ্বাস ছেলে আমার আসবে! যে কারণে, বেশি করে ভাত রোজই রাঁধতে বলেন, পরিবারের অন্যদের। বর্তমান পিরোজপুর জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক তৎকালীন ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা যাকে যুদ্ধকালীন সময়ে দেশীয় ঘৃণ্য দালান এবং পাকিস্তানী বন্য পশুরা নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছিল। ওমর ফারুকের সংক্ষিপ্ত জীবন, দর্শন, দেশপ্রেম এবং মুক্তি সংগ্রামে তার দুর্বার সাহস বিস্তারিত লিখে লেখার দৈর্ঘ্য বড় করতে চাই না। বরং তার আত্মত্যাগের মহিমার স্বীকৃতি এবং তার মায়ের অনন্ত অপেক্ষা নিয়ে সরকারী অনুদানে নির্মিত হতে যাচ্ছে ‘ওমর ফারুকে মা’ নামক বীরত্বগাথা বরং সেটাই কৌতূহলের। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি (৩৫-৪০ মিনিট) নির্মাণ করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার সমাজের পরিচিত মুখ জাহিদুর রহমান বিপ্লব। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় এই সিনেমার সার্বিক বিষয় নিয়ে। কিভাবে এই গল্পের সঙ্গে তার প্রথম পরিচয়, কিভাবে জুটল সরকারী অনুদান, শূটিংয়ের লোকেসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। জাহিদুর রহমান বিপ্লব, বছর দুই আগে এই গল্পটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে, শুনে আমি ভীষণভাবে আবেগতাড়িত হই। ‘বিশ্বাস করবেন না আমি কেঁদে ফেলি!’ মুক্তিযুদ্ধের এই ধরনের গল্পগুলো আমাকে ভীষণভাবে তাড়িত করে। তখন থেকে এই গল্প নিয়ে কাজ করতে মনের ভেতর একটা তপ্ত বাসনা তৈরি হয়। কাজ শুরু করছেন কবে? লোকেসন এবং অন্যান্য বিষয় মোটামুটি রেডি আসা করি সামনের মাসে, না হলে বড়জোর আর এক মাস- আপনার সঙ্গে আর কে কে আছেন? সিনেমার চিত্রনাট্য করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কাহিনীকার মাসুম রেজা আর পরিচালনার পাশাপাশি ছবিটির প্রযোজনা, ক্যামেরা পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফি আমিই করছি। ওমর ফারুক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নির্ভীক যোদ্ধা, স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস গ্রুপে। ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ পিরোজপুরের টাউন ক্লাব চত্ব¡রে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন, পুড়িয়ে ফেলেন শহরের যত পাকিস্তানী পতাকা, সন্ধ্যায় অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ট্রেজারি ভেঙ্গে অস্ত্র লুট করেন এ যেন দিগি¦জয়ী এক বীর ওমর ফারুক। স্বাধীনতা সংগ্রামের অখ- আখ্যানের এই অংশ নতুন প্রজন্মের কাছে দৃপ্তিরশ্মী পৌঁচ্ছে দেবে এমনটাই আশা জাহিদুর রহমান বিপ্লবের...
×