ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী বিষয়ক রিপোর্টে জনকণ্ঠের সাংবাদিক ওয়াজেদ হীরা পেলেন সেরা পুরস্কার

প্রকাশিত: ০২:৫১, ১৯ জুলাই ২০১৮

নারী বিষয়ক রিপোর্টে জনকণ্ঠের সাংবাদিক ওয়াজেদ হীরা পেলেন সেরা পুরস্কার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণমাধ্যমে নারীদের প্রতি সহিংসতা, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধসহ নারী বিষয়ক প্রতিবেদন করায় দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিকসহ ৬ সাংবাদিককে পুরস্কার দিয়েছেন উইমেন জার্নালিষ্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও নারী উন্নয়ন শক্তি। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে তিনজন সাংবাদিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তিনজন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ওয়াজেদ হীরা প্রথমস্থান অর্জণসহ এই পুরস্কার লাভ করেন। জনকণ্ঠের এই তরুণ সাংবাদিক ওয়াজেদ হীরা এর আগেও সাংবাদিকতায় পুরস্কার অর্জণ করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য। এবার নারীদের নিয়ে রিপোর্ট করে এই পুরস্কার অর্জণ করেন। বৃহস্পতিবার উইমেন জার্নালিষ্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও নারী উন্নয়ন শক্তির যৌথ আয়োজনের এই অনুষ্ঠানে সেরা সাংবাদিকদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ব্যববস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নারী উন্নয়ন শক্তি’র নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উইমেন জার্নালিষ্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি। এসময় নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারীরা এখন আর বুঝা নয়। আদি কালের সেই ধারণা যোগ্যতা দিয়ে পাল্টে দিয়েছে নারী সমাজ। ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র সকল জায়গায় নারী তার যোগ্যতা দিয়েই অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। সমাজের উন্নয়নে নারীদের পেছনে রাখার সুযোগ নেই। একই সাথে নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে যে কোনো নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান প্রতিমন্ত্রী। নারীদের নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উৎসাহ দিতে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয় বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। যেখানে জাতীয় ও স্থানীয়ভারে সারাদেশ থেকে জমা হওয়া শতাধিক রিপোর্ট জমা হয়। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে অন্যদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন নিউএজের কুমিল্লা প্রতিনিধি ইয়াসমিন রীমা এবং তৃতীয় হয়েছেন যুগান্তরের সাংবাদিক রীতা ভৌমিক। টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন এসএটিভির সিনিয়র রিপোর্টার ফারজানা শোভা, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার শাতিলা শারমীন এবং তৃতীয় হয়েছেন নিউজ ২৪ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য্য। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট সার্টিফিকেট ও সম্মানী তুলে দেন সকল অতিথিরা। নারী বিষয়ক রির্পোটিংয়ের জন্য গণমাধ্যমের যে সকল সাংবাদিক পুরস্কার পেলেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই পেশাতেও নারীরা ভালো করছে। তারা পুরস্কিত হচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বতর্মানে দেশের যে কোনো প্রান্তে কোনো নারী নির্যাতিত হলেও আমরা মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারছি এবং বিচারের আওতায় আনতে পারি। এসব ক্ষেত্রে একেক জনের প্রতি অন্য জনের শ্রদ্ধাবোধ থাকা আরো বেশি জরুরি বলেও জানান তিনি। নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কোনো নারীকে নির্যাতন করা হলে অন্যরা তাকিয়ে দেখে। কিন্তু তাকিয়ে না দেখে এগিয়ে আসতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সবার অংশগ্রহণই পারে এসব নির্যাতন সহিংসতা রুখে দিতে। এসময় প্রতিমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেকথাও বলেন। বতর্মান কোটা ব্যবস্থার বিষয়ে আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে নারীর যোগ্যতা প্রমান হতো না। এছাড়াও যারা সুযোগ সুবিধা থেকে একটু পিছিয়ে আছে তাদেরওতো একটু সুযোগ দিতেই হবে। তবে মেধাবীদেরওতো মূল্যায়ণ করা হচ্ছে। দেশের অগ্রযাত্রা আর উন্নয়নে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত থাকতে হবে। বাসস’র ব্যববস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে উন্নয়ন সাংবাদিকতা একটি বড় সাংবদিকতা। একজন কৃষক বেশি ফসল উৎপাদন করলে সেটি সংবাদ হয়। আবার জামাত শিবিরের লোকজন আমাদের পরিবেশের জন্য গাছ কেটে দিলে সেটিও খবর হয়। বর্তমানে সাংবাদিকতায়ও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারী নির্যাতন নিয়ে বলেন, একটা সময় ছিল নারী নির্যাতন হতো সেটি এখন অনেক কমে গেছে বলেও জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন ছোট নে হলেও গত এক বছর ধরে চলছে নানা কার্যক্রম। আমরা সারাদশের সাংবাদিকদের সংযোগ করার চেষ্টা করেছি। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও যে নারীদের প্রতি নির্যাতন সহিংসতা নিয়ে ভাবেন সেটি পুরস্কারের মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন। কেননা আমাদের পুরুষ সাংবাদিকরাও ভালো লেখনির মাধ্যমে পুরস্কার পেয়েছে। ফরিদা ইয়াসমিন আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। তিনি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন তাতে আমাদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। অনেকক্ষেত্রেই নারীর প্রতি সহিংসতা পূর্বের চেয়ে অনেক কমে এসেছে এরপরেও দু’একটি ঘটনা বহিঃবিশ্বে আমাদের সুনাম নষ্ট করে দেয়। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। কোনো কোনো সময় নারী গাড়িতে, বাড়িতে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে তবে এসবের বিচারও হচ্ছে। তবে আমরা এসব দেখতে চাইনা। এজন্য সর্বস্তরে সচেতনতা দরকার বলেও জানান তিনি। অনেক সময় ঘরের মধ্যে নারী নির্যাতিত হলে ঐ সময় সরকারের কিছু করার থাকে না তবে সচেতনতা এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নারীরা যাতে কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য একটি সামাজিক আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আশার কথা বলেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। নারী উন্নয়ন শক্তি’র নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে আমরা কাজ করছি। আমরা আগামীতেও আরো অনেক কাজ করতে চাই। নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান করেন তিনি। পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুভূতি প্রকাশ করার বক্তব্যে প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জণ করা দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক ওয়াজেদ হীরা বলেন, কর্মের স্বীকৃতি হলো পুরস্কার। আর এই পুরস্কার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ আরো বাড়িয়ে দিলো। ভালো সুযোগ সুবিধা পেলে নারীরাও নিজেদের মেলে ধরতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন তবে নারী ক্রিকেট ও ফুটবলে নারী খেলোয়াড়রা একটু পিছিয়ে আছেন সেদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান লাভ করা এসএটিভির সাংবাদিক ফারজানা শোভা বলেন, আমরা নারীদের উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু জায়গায় বৈষম্যও দেখি। আমরা এখনো নারীদের নানাভাবে হ্যারেজ হতে দেখি। সামনের দিনগুলেতে আরো এসব কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছেন সাউথ এশিয়া উইমেন’স ফান্ড শ্রীলংকা। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে নারী সাংবাদিকদের পেশাগত মানবৃদ্ধিতে কাজ করছে উইমেন জার্নালিষ্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ। এসময় নারী উন্নয়ন শক্তির বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ উইমেন জার্নালিষ্টস নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×