ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উর্মি রহমান

মেঘের কালসে রং আর বর্ষায় ফ্যাশন

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২০ জুলাই ২০১৮

মেঘের কালসে রং আর বর্ষায় ফ্যাশন

ফ্যাশন আর সময় একই সুঁতোয় গাঁথা। কেউ ইচ্ছ করলে যে কোন পোশাকে ফ্যাশন করতেই পারেন। কারণ ফ্যাশন ব্যক্তির একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তবে হিসাব করলে দেখা যাবে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ অন্যের দেখে বা অন্যের পরামর্শে ফ্যাশন চর্চা করে থাকেন। যাঁরা এই কাজে অন্য মানুষকে অনুসরণ করেন তারা ফ্যাশন জগতে একটা সময় নিজেরাই নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। ফ্যাশনের জন্য সময়-কাল যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি এর রূপ-রঙও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ঋতু পরিবর্তন হয় বছরে ছয়বার। আর এই ছয় ঋতুতে আলাদা ধরনের পোশাক বাজারে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মানুষের দেখে শেখা কিংবা ফ্যাশনে নিজেই সচেতন হওয়া, যে কারণই হোক না কেন; বৈচিত্র্যময় ঋতুতে বৈচিত্র্যের চর্চা পোশাকে শুরু হয়েছে তা আজ অস্বীকার করার জো নেই। এখন দেখার বিষয় বর্ষায় ফ্যাশনের হালহকিকত কেমন চলছে... বর্ষায় শাড়ি: শাড়ি নারীর প্রথম পছন্দ। কারণ শাড়িতেই নারী মানিয়ে যায় পার্টি কিংবা ঘরোয়া কোন অনুষ্ঠানে। তাই নারীর চাই শাড়ি। তবে নারী যখন শাড়িতে বেশি প্রিয় তখন কি তার শাড়ির অন্যান্য ব্যাপারে খেয়াল-খুশি থাকছে। নাকি ইচ্ছা হচ্ছে বলেই পরছে। সে যাই হোক, শাড়ির কদর আছে বলেই হয়ত এমন হচ্ছে। কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনাররা একেবারে বিপরীত হিসেব কষে শাড়ির বাহারি পসরা সাজাচ্ছেন। তাহলে কি ধরে নেয়া যায়, ঋতুর প্রাসঙ্গিকতায় শাড়ির বৈচিত্র্যতা এক্ষেত্রে অন্যতম। এ রকম নানা যুক্তিতর্কে যখন সামনে এসে হাজির তখন সমাধান খুঁজে পাওয়া গেল ডিজাইনারদের কাছেই। ফ্যাশন হাউজ স্বপ্নচূড়ার নারীপণ্য বিক্রি নির্বাহী ফাতেমা নুরী জানালেন, শাড়ি যেমন মেয়েদের প্রথম পছন্দ ঠিক তেমনি তাদের চাহিদার রকমফেরের ওপর নজরদারি করাও এখন ডিজাইনারদের মূল লক্ষ্য থাকে। পাশাপাশি সময়ের চাহিদা মেটাতে যতটুকু সম্ভব শাড়িতে বাড়তি কাজ করা হয়ে থাকে। তাই এখন বর্ষাকালকে উপজীব্য করে শুধু এক-দুটি হাউজ নয় প্রায় প্রত্যেকটি ফ্যাশন হাউজ জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে। বর্ষায় সাধারণত নীল এবং সাদা রঙের শাড়ির প্রাধান্য বেশি পায়। বর্ষায় মেঘের ধরন অধিকাংশ সময় ঘোলাটে থাকে বলে এই রঙগুলো শরীরের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে যায়। রঙের পাশাপাশি কাপড়ের ধরনও বর্ষায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই সময়ে সুতি, জর্জেট, সিনথেটিক, শিফন, মসলিন কাপড় ব্যবহার করলে শরীরের জন্য ভাল। কারণ বর্ষা মানেই তো বৃষ্টি। কখন যে ঝুম বৃষ্টি নেমে পড়ে বোঝা মুশকিল। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেলে এই ধরনের কাপড় দ্রুত পানি শোষণ করে নিতে পারে এবং হাল্কা বাতাসেই তা শুকিয়ে যায়। এতে আচমকা বৃষ্টি বিপত্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বর্ষার সময় অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আঁটসাট পোশাক এবং বেশি রঙিন কাপড়ের পোশাক না পড়াই ভাল। এক্ষেত্রে বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে বেশি উপযোগী কাপড় হতে পারে পাতলা ভয়েল। জুতো: বর্ষায় শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে জুতো পরা এখন আর ফ্যাশন নয় বরং নিয়তি হয়ে পড়েছে। জুতো আর শাড়ি যেখানে একই সুঁতোয় গাঁথা তখন এর ওপরও এই সময়ে বাড়তি নজর রাখা জরুরী। বৃষ্টির দিনে শাড়ির সঙ্গে হাইহিল জুতো পরাই ভাল। এক্ষেত্রে অনেককেই পেন্সিলজুতো পরতে দেখা যায়। আসলে বৃষ্টির সময় পথঘাট কাঁদা এবং স্যাঁতসেতে থাকে বলে এই ধরনের জুতোয় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই সময়ে সিøপার জুতো পরাও ঠিক নয়। তবে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে জুতো কি ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে সেদিকে। বাজারে এখন বর্ষার উপযোগী করে তৈরি জুতো পাওয়া যায় সেগুলো পরাই ভাল। ব্যাগ: মেয়েরা এখন বেশিরভাগ সময় হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন। ব্যাগগুলো মেয়েদের চরম ফ্যাশনেবল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একটি দিনও তাদের ব্যাগ ছাড়া চলে না। কিন্তু বৃষ্টি-বর্ষায় তারা কেমন ব্যাগ ব্যবহার করবেন তা নিয়ে অনেক সময় সংশয়ে থাকেন। বাজারে এখন লেদারের ব্যাগ বেশি পাওয়া যায়। পাশাপাশি রেক্সিনের ব্যাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অনেকেই রেকসিনের ব্যাগ ব্যবহার করতে চান না। তারা মনে করেন এতে তার ফ্যাশনে ঘাটতি হবে। এই সমস্ত ফ্যাশন প্রিয়দের জন্য নতুন বার্তা হচ্ছে- বৃষ্টিতে বেরুনোর জন্য লেদারের ব্যাগের ওপরের অংশে পাতলা ধরনের পলি ব্যবহার করা হয়; যা ব্যাগের সঙ্গে একেবারে মিলে থাকে বলে খুব সহজে বোঝা যায় না। এই ধরনের ব্যাগ একদিকে যেমন ফ্যাশনের চাহিদা মেটায় অন্যদিকে বৃষ্টি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। ছাতা: বর্ষায় ছাতার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অকস্মাত নেমে পড়া বৃষ্টি থেকে বাঁচতে হলে ছাতার বিকল্প নেই। এখন ফোল্ডিং ছাতাগুলো বাজারে ক্রেতার চাহিদা মেটাচ্ছে হরহামেশাই। সেই সঙ্গে ঠাঁই করে নিয়েছে বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন ডিজাইনের নকসা সংবলিত ছাতা। এগুলো শুধু যে বৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে তাও নয়; এটি বহন করা, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে একটি ছাতা সঙ্গে রাখা ব্যক্তিগত সম্মানেরও। দেশীয় ছাতার পাশাপাশি থাইল্যান্ড, চীন, ইন্ডিয়ান ছাতা এদেশের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছাতা আর ব্যাগের মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। ফোল্ডিং ছাতা সহজেই ব্যবহার শেষে ব্যাগের মধ্যে রাখা যেতে পারে। রেইনকোট: বর্ষার সময় রেইনকোট ব্যবহার মানেই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া। ছেলেমেয়ে সবাই এখন রেইন কোট ব্যবহার করে থাকেন। রাস্তায় এখন হরহামেশাই সাইকেল চালক হিসেবে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের অধিকাংশই কাঁধে রাখা ব্যাগে রেইন কোট রাখেন। বৃষ্টিতে ব্যাগ থেকে কোট বের করে নিজেকে নিরাপদে রাখতেও ভুল করেন না। এটিকে বৃষ্টির দিনের ফ্যাশন কোট বললে তেমন ভুল হয় না বলে মনে করেন সাইকেল চালক ইসতিয়াক এবং লাভলি। বর্ষায় নিজেকে সঠিকভাবে এবং ফ্যাশনেবল রাখতে মনের মতো কিছু উপকরণ বাজারে পাওয়া যায়। ছোট ছোট সুতি কাপড়ের টুকরো যা রুমালের চেয়ে একটু বড় আকারের তা সঙ্গে রাখা যেতে পারে। হাল্কা রঙের এবং বর্ষার সঙ্গে মানানসই এই কাপড়গুলোও তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের সমন্বয়ে। এর ফলে তরুণরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই কাপড়গুলো সঙ্গে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও তেমন সমস্যা হয় না। এগুলো শরীর থেকে পানি মুছে ফেলতে কার্যকর ভূমিকা রাখে । সবকিছু মিলে মেঘের কালসে রঙ আর বর্ষার ফ্যাশন ভালই জমবে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মডেল : ফারহানা রেইন, সজিব খান
×