ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

পাখির বুদ্ধির গোপন রহস্য

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২০ জুলাই ২০১৮

পাখির বুদ্ধির গোপন রহস্য

বিজ্ঞানীরা পাখিদের মস্তিষ্কের এমন এক নিউরাল সার্কিট চিহ্নিত করেছেন যা থেকে তাদের মস্তিষ্কের অন্তর্নিহিত রহস্য উন্মোচন করা যাবে। এই আবিষ্কার পাখি ও প্রাইমেটদের মস্তিষ্কের মধ্যকার এক কেন্দ্রাভিমুখী বিবর্তনের একটা দৃষ্টান্ত। এ থেকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির নিউরাল ভিত্তির আরও গভীরে দৃষ্টি মেলে দেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো বিজ্ঞানীরা পাখির মস্তিষ্কের ওই নিউরাল সার্কিট চিহ্নিত করেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের পোস্টডক্টরাল ফেলো ক্রিশ্চিয়ান গুতিয়েরবেজ ইবানেজ বলেন মস্তিষ্কের যে জায়গাটা প্রাইমেটদের বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তাকে বলে পনটাইন নিউক্লি। এই কাঠামোটি মস্তিষ্কের সর্ববৃহৎ দুটি এলাকা কর্টেক্স ও সেরেবেলাম এবং মধ্যে তথ্য স্থানান্তর করে যার ফলে উচ্চতর পর্যায়ের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করাও আরও উৎকর্ষ আচরণ করা সম্ভব হয়। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় মানুষ ও প্রাইমেটদের পনটাইন নিউক্লি আকারে বড়। আমাদের জ্ঞানগত সক্ষমতা থাকার এটা একটা কারণ। পাখিদের পনটাইন নিউক্লি আকারে খুবই ছোট। তবে এর পরিবর্তে ওদের মস্তিষ্কে একই ধরনের একটা কাঠামো আছে যার নাম মেডিয়াল স্পিরিফর্ম নিউক্লিয়াস (এসপিএম) যার কাজ একই ধরনের সংযোগ সাধন। মস্তিষ্কের ভিন্ন এক অংশে অবস্থিত এই এসপিএম পনটাইন নিউক্লির মতো একই কাজ করে অর্থাৎ করটেক্স ও সেরেবেলামের মধ্যে তথ্যের আদান প্রদান করে। করটেক্সও সেরেবেলামের মধ্যকার এই সংযোগটি উন্নততর আচরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মোরগ-মুরগি থেকে শুরু করে তোতাপাখি ও পেঁচা পর্যন্ত বিশ্বে পাখিদের মস্তিষ্কের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা থেকে ৯৮টি পাখির নমুনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা পাখিদের মস্তিষ্কের ওপর গবেষণা চালান এবং মস্তিষ্কের বাকি অংশের সঙ্গে এসপিএমের তলনামূলক আকার যাচাই করেন। তারা লক্ষ্য করেন যে তোতাপাখির এসপিএম অন্যান্য পাখির এসপিএমের চেয়ে অনেক বড়। ক্রিশ্চিয়ান-গুতিয়েরেজ-ইবানেজ বলেন, তোতাপাখির এসপিএম অনেক বড়। প্রকৃতপক্ষে মোরগ-মুরগির মতো অন্যান্য পাখির তুলনায় তোতাপাখির এসপিএম ২ থেকে ৫ গুণ বড়। করটেক্স ও সেরেবেলামের মধ্যে সংযোগ সাধন করে এমন এক বিশাল এলাকা তোতাপাখির মধ্যে স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যার সঙ্গে প্রাইমেটদের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তোতাপাখি ও প্রাইমেটদের মধ্যে মিল থাকার এটা আরেক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত। এটা হাতিয়ার ব্যবহার আত্ম-সচেতনতার মতো উন্নততর আচরণ দিয়ে শুরু হয় এবং মস্তিষ্কেও তা দেখা যায়। আমরা যতই এদের মস্তিষ্কের দিকে তাকাই ততই বেশি সাদৃশ্য দেখতে পাই। একই ধরনের পনটাইনভিত্তিক প্রক্রিয়া কিভাবে মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে তা পরীক্ষার এ এক চমৎকার উপায় হতে পারে এবং মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে এ থেকে তা জানবার ভাল সুযোগ মিলতে পারে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×