ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ে থামানো যাচ্ছে না!

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২০ জুলাই ২০১৮

বাল্যবিয়ে থামানো যাচ্ছে না!

এক সমীক্ষায় জানা যায় বাংলাদেশের প্রায় ৬০ ভাগ নারী বাল্যবিয়ের শিকার। শুধু তাই নয় যৌতক, নির্যাতন তো যেন ফ্রি তার সঙ্গে। সরকারের আইনও এতে বেশ করা। প্রচার প্রচারণাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ সরকার হাতে নিয়েছে। কিন্তু তবুও বন্ধ করা যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। কিন্তু কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে সে প্রশ্নের উত্তরটাও যেন পর্দার অন্তরালেই থাকে সব সময়। দু-একটা বাল্যবিয়ে হচ্ছে বলে খবর প্রশাসনের কাছে আসলেও বাকিগুলো থেকে যায় পর্দার আড়ালে। বিশেষ করে বাল্যবিয়ে উৎসাহ প্রদান করছেন স্থানীয় ঘটকরা। নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে বাল্যবিয়ে প্রদানে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রয়োজনে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন ধর্মকে। ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দিয়ে অভিভাবকদের বাল্যবিয়েতে উৎসাহিত করছে। একদিকে সরকার বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বাল্যবিয়ে নিরোধে ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে ঘটক সমাজ পেশা টিকিয়ে রাখার নিমিত্তে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। শুধু কি ঘটক? না। এর পেছনে আরও বড় বড় লোকও আছে। সেদিন এক ছেলে বিয়ে করেছে। মেয়ের বয়স আঠারো হয়নি ঠিকই কিন্তু আইনজীবীর মাধ্যমে কিভাবে যেন বিয়ে করার মতো সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। তার মানে দাঁড়ায় সে বয়সের দিক থেকে উপযুক্ত। তাকে বিয়ে দিতে এখন আর কোন ঝামেলা রইল না। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? সে প্রশ্নটা আমার মোটেও জানা নেই। তাহলে আইন করে আপনি কিভাবে ঠেকিয়ে রাখবেন বাল্যবিয়ে। বিশেষ বিশেষ কারণ দেখিয়ে ঠিকই বিয়ের কাজ সেরে ফেলছেন যাদের দরকার তারা। বাধ্য হয়ে নারীরাও কম বয়সে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। কিন্তু এ কম বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা কতটা যৌক্তিক, নারীর স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ সে খবরটা ক’জনে রেখেছেন। মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে একদিন তো পরের ঘরে যেতেই হবে, তাই বলে উপযুক্ত না হয়েই। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মেয়েদের বেলায় আঠারোর আগে বিয়ে নয়, বিশের আগে সন্তান নয়! কিন্তু সে কথাটা ক’জনে মানছেন। আপনি যদি পরিসংখ্যান করেন তবে দেখবেন গ্রামের স্কুলগুলোতে এখনও সপ্তম, অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া নারী পাবেন যাদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। শিশু বয়সেই সংসার নামক বটবৃক্ষের নিচে বাস করছে। যে বয়সে হেসে-খেলে কাটিয়ে দেয়ার কথা সে বয়সেই এক ঝাঁক চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরছে। একটা পত্রিকায় পড়লাম, মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনে এক পরিবার টাকার লোভে আট বছরের শিশুকে বিয়ে দিয়েছে ৪০ বছরের একজন ব্যক্তির কাছে। দুর্ভাগ্য হলো বিয়ের রাতেই মেয়েটি বাসর ঘরে মারা যায়! জানা যায় ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে অবুঝ শিশুটিকে। এবার আপনারাই ভাবুন সামান্যকটি টাকার লোভ সামলাতে না পেরে নিজের মেয়েটাকে বিসর্জন দিল পিতা। আহা এ যেন সমাজের মুখে কঠিন চপেটাঘাত। এবার আমাদের দেশের দিকে আসা যাক। আমাদের দেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে। হয়ত বর্তমানে মিডিয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে, সোস্যাল মিডিয়া প্রসারের ফলে কিছু ঘটনা আমরা হরহামেশা জানতে পাই। নিজের একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, ক’দিন আগে এক বিয়েতে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম না বাল্যবিয়ে ঘটতে চলেছে এটি। কিছুক্ষণ পর কাজী আসলেন। জন্মসনদ দেখলেন। কিছুটা বিব্রতবোধ করে জানালেন বিয়ে হবে না। কাবিন করানো যাবে না। মেয়ের বয়স আঠারো হয়নি। হুট করে তিনি আমার দিকেও তাকালেন আর ঘামতে শুরু“ করলেন। বুঝলাম তিনি বেশ চিন্তিত। নয়ত তিনি আমায় চিনতে পেরেছেন। আমি নিজেকে আড়াল করে রেখে জানতে চাইলাম, আচ্ছা কোন পদ্ধতি কী নেই? কিছু উৎকোচ দেয়ার ও প্রস্তাব দিলাম। তিনি যেন আরেকটু বিব্রতবোধ করলেন। এবার বলেই ফেললেন না ভাই কয়েকদিন আগে এমন অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে অনেক হয়রানি হতে হয়েছে। এ কাজ আমি পারব না। যদিও কাজী রাজি হননি তবু যেন, ‘মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া করে গা কাজী’ কাজী ঠিকই চলে গেছেন কিন্তু এক ব্যক্তি বললেনÑ বিয়ে কোর্টে নিয়া করামু। আইজ বিয়ার আনুষ্ঠানিকতা হবে। কাবিন প্রয়োজনে পরে করমু। চোখ দুটো আমার বড় হয়ে গেল। সবই তাইলে কি এখানে সম্ভব। একটু বুদ্ধিমান হলেই তো সব করা যায়। নতুন করে আবার জন্মনিবন্ধন বানিয়ে বয়স বাড়ানোর ও প্ল্যান করছে। আবার একজন বলল ১৮ হলে তারপর কাবিন করে নিব। এখন প্রশ্ন হলো বিয়ের ক’দিন পর কোন কারণে যদি ওই মেয়েটার সংসার ভেঙে যায় তবে কী করবে সে মেয়েটি? কী প্রমাণ আছে তাঁর যে তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল? কি দাবি নিয়ে সে জানাবে যে সে বিবাহিত? এমন নানা প্রশ্নের ঘুরপাকের মাঝেও একটাই উত্তর মিলল, বাল্যবিয়ে কখনই একবারে বন্ধ করা যাবে না। সেটা কখনই সম্ভব নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে পারিবারিক সচেতনতাই পারে বাল্যবিয়ে থেকে একজন নারীকে রক্ষা করতে।
×