ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লোকসভায় আচমকা মোদীর সঙ্গে রাহুলের আলিঙ্গন (ভিডিও সহ)

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২০ জুলাই ২০১৮

লোকসভায় আচমকা মোদীর সঙ্গে রাহুলের আলিঙ্গন (ভিডিও সহ)

অনলাইন ডেস্ক ॥ অনাস্থা আলোচনায় ভাষণ দিতে দিতেই আচমকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করলেন রাহুল গান্ধী। আর গোটা পরিস্থিতিতে কার্যত হকচকিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীও। একাধিক বিষয়ে বিজেপিকে তোপ দাগতে শুরু করতেই বিজেপি সাংসদরা তুমুল হই হট্টগোল জুড়ে দেন। তার মধ্যেই বলতে থাকেন রাহুল। কিন্তু তুমুল হইচইয়ের জেরে কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবিও হয়ে যায়। তারপর ফের শুরু হয় আলোচনা। ফের শুরু হয় হয় বিশৃঙ্খলা। তার মধ্যেই রাহুল বলতে শুরু করেন, আপনারা আমাকে পাপ্পু বলেন। আমার প্রতি আপনাদের অনেক হিংসা আছে। কিন্তু আমি আপনাদের সবাইকেই ভালবাসি। দেশে এই সংস্কৃতি চালু করেছে কংগ্রেস। আর এই বলতে বলতে আচমকাই নিজের জায়গা ছেড়ে হেঁটে চলে যান প্রধানমন্ত্রীর আসনের কাছে। প্রধানমন্ত্রী বসে ছিলেন। ওই অবস্থাতেই রাহুল ঝুঁকে কার্যত জড়িয়ে ধরেন প্রধানমন্ত্রীকে। তার আগে রাহুল আক্রমণ করেন ‘চৌকিদার নন, ভাগীদার প্রধানমন্ত্রী।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি দেশের চৌকিদার। কিন্তু তিনি আসলে দুর্নীতির ভাগীদার। কারণ বিভিন্ন দুর্নীতির অংশীদার প্রধানমন্ত্রীও। রাফাল দুর্নীতি নিয়ে তোপ দেগে তিনি বলেন, বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এই চুক্তিতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। বারবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নাম নেওয়া নির্মলা সীতারামন তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্পিকার যদিও বলেন, কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্যের পর মন্ত্রীকেও জবাব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই আর্জিতে বিজেপি সাংসদ মন্ত্রীরা কান না দিয়ে তুমুল হই হট্টগোল শুরু করেন। রাহুলের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্পিকার অল্প সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতুবি করেন। ফের অধিবেশন চালু হলে রাহুল বক্তব্য রাখছেন। অনাস্থা ভোটের আগেই এনডিএ-র অন্যতম বড় শরিক শিবসেনা ঘোষণা করে, তাঁরা আলোচনা ও ভোটাভুটিতে অংশ নেবে না। অন্যদিকে, শুরুতেই কক্ষ ত্যাগ করেন বিজু জনতা দলের সাংসদরা। লোকসভায় চলছে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা। আলোচনার শেষে হবে ভোটাভুটি। গোটা প্রক্রিয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ ঘণ্টা। মাঝে লাঞ্চ ব্রেকও হবে না বলে সূত্রের খবর। ম্যাজিক ফিগার নিয়ে এনডিএ তথা বিজেপি আত্মবিশ্বাসী থাকলেও লোকসভা ভোটে জয় পাওয়া সব আসন ধরে রাখা নিয়ে চিন্তায় বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরাও যতটা সম্ভব সংখ্যা বাড়াতে তৎপর। বিরোধীরা যে সরকারের বিরুদ্ধে একজোট সেটা প্রমাণেরও মরিয়া চেষ্টা চলছে। রতিটি দলের সাংসদ সংখ্যার নিরীখে আলোচনার সময় বরাদ্দ করেছেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। সেই অনুযায়ী বিজেপি সাংসদরা আলোচনার সময় মোট তিন ঘণ্টা ৩৩ মিনিট। কংগ্রেসের জন্য বরাদ্দ ৩৮ মিনিট। কংগ্রেস, এনসিপি, সিপিআইএম, টিডিপি এবং এআইএমএম অনাস্থা প্রস্তাব আনলেও লটারিতে টিডিপির প্রস্তাবই গৃহীত হয়। তাই সবার আগে টিডিপির সাংসদরা আলোচনা শুরু করেন। এআইএডিএমকে ২৯ মিনিট, তৃণমূল ২৭, বিজেডি ১৫ এবং টিআরএস-এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৯ মিনিট সময়। শুক্রবার সকালেই অনাস্থা নিয়ে টুইটে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রে আজ গুরুত্বপূর্ণ দিন। আশা করি আমার সহকর্মীরা গঠনমূলক, সুসংহত ও বিশৃঙ্খলা মুক্ত আলোচনা করবেন। গোটা দেশ আজ আমাদের উপর নজর রাখবে এবং দেখবে।’’ এর মধ্যেই চলছে রাজনৈতিক তরজাও। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ-কটাক্ষে রীতমতো সরগরম রাজধানীর রাজনৈতিক বাতাবরণ। রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে রাম মাধবের টুইট, ‘‘অনাস্থার প্রস্তাবকের জন্য ১৩ আর ‘ভূমিকম্প’-এর জন্য ৩৮ মিনিট বরাদ্দ হয়েছে।’’ ভূমিকম্প বলতে রাহলের বক্তব্যকেই ইঙ্গিত করেছেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। থেমে নেই কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেছেন, সরকারের উচিত শ্বতপত্র প্রকাশ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা এবং জিডিপির সঠিক হার জানানো। অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরের টিডিপি সাংসদ জয়দেব গল্লার বক্তব্য: অন্ধ্রপ্রদেশকে স্পেশাল স্টেটাসের দাবি নিয়ে বঞ্চনা করা হয়েছে। অন্ধ্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কেন্দ্র তথা নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অন্যায় করা হয়েছে রাজ্যবাসীর সঙ্গে। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ায় রাজ্যের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ঘাড়ে চেপেছে বিপুল ঋণের বোঝা। অথচ কেন্দ্র কোনও আর্থিক সাহায্য করেনি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যকে ‘স্পেশাল স্টেটাস’-এর স্বীকৃতি দাবি করা হচ্ছে। কেন্দ্রের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রকও আশ্বাস দিয়েছিল বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি পয়সাও দেওয়া হয়নি। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিংহের জবাব: কয়েকদিন আগেই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীকে কাঁদতে দেখেছে গোটা দেশ। কুমারস্বামী বলেছেন, জোটের বিষ পান করতে হয়েছে তাঁকে। আর আজ কংগ্রেসের সঙ্গে যোগ দিয়ে যাঁরা অনাস্থার পক্ষে শামিল হয়েছেন, তাঁদেরও সেই বিষ পান করতে হবে। কোনও কারণ ছাড়াই অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। জরুরি অবস্থার কথা এখনও ভোলেনি দেশ। একটি মাত্র পরিবারকেই স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস। উজ্জ্বলা যোজনায় দেশের গরীব পরিবারে গ্যাসের উনুন জ্বলেছে। দেশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ বন্ধ হয়েছে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে। আগের সরকার এক দিনে ১২ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হত, এখন ২৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×