ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

...এ্যান্ড মাইলস টু গো...কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২১ জুলাই ২০১৮

...এ্যান্ড মাইলস টু গো...কেউ  দাবায়া রাখতে পারবা না

যে মানুষ সব হারিয়েও মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন, বাবা-মা-ভাই-ভ্রাতৃবধূসহ আপন মানুষদের হারিয়েও জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন, দৃপ্তপায়ে হাঁটতে পারেন, তাকে কি নামে ডাকা যাবে? নারী শিক্ষা ও অবরোধবাসিনীর মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের পাশাপাশি সমাজপ্রগতির অগ্রদূত মহীয়সী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, নাকি বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক বাঙালীর জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা? সে সব তো আছেই, বরং বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মহাসড়কে তুলে এনেছেন, সামনে উন্নত বাংলাদেশের ঢাকা গেট, যে মানুষ বরং ১৭/১৮ কোটি মানুষকে কেবল স্বপ্ন দেখিয়েই বসে থাকেননি, পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সেই সব স্বপ্নের বাস্তবরূপ দিয়েছেন; মহাসমুদ্রের গহীন তলদেশ জয় করে মহাকাশের মহাকক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে বিচরণ করছেন; যিনি গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে ভাত, পরনে কাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর (আইটি) করে গড়ে তুলেছেন; বিস্মিত ঈর্ষাকাতর বিশ্ববাসী যাঁকে চেনেন ‘বিশ্বমানবতার জননী (MOTHER OF HUMANITY)’, ‘ধরিত্রীর আদরের কন্যা ‘(CHAMPIONS OF THE EARTH),’ ‘প্রাচ্য-রাজনীতির তারকা (STAR OF THE EAST)’ এমনি নানা অভিধায় অভিহিত করার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার বোল্টন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, এমনি বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে সম্মানিত করেছে। সর্বশেষ গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ড ও ভারতের আসানসোলে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রীতে অভিষিক্ত করে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-লিট ডিগ্রী গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানেই শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন কলকাতায় নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু ভবন। অবশ্য এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনার শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন (কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এবং রাজশাহীর পতিসরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস থাকবে)। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর প্রস্তুতি নেয়ার মুহূর্তে ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে এবং বাংলার গৌরবের স্বাধীন ভূমি পাকিস্তানী প্রেতাত্মার ছায়াতলে চলে যায়। সেদিন তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাও সন্তানদের নিয়ে জার্মানিতে গবেষণারত স্বামী প্রখ্যাত অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়ার কাছে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেলেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। ১৯৭৫ থেকে ৮১ দীর্ঘ ৬ বছর তো দেশেই ফিরতে পারেননি। মিলিটারি জিয়ার প্রতিবন্ধকতা। খুনী মোশতাক আর জিয়ার রোষানলে পুড়ে পুড়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আস্তে আস্তে এগোতে থাকেন এবং ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। এরপর ঐ বছরেরই ১৭ মে মিলিটারি জিয়া প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর ভেঙ্গে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং পিতার মতোই দল দেশ ও জাতির নেতৃত্ব হাতে নেন। সেই থেকে গত ৩৭ বছর নিজেকে জাতির সেবায় উৎসর্গ করে এক ঝুঁকিপূর্ণ জীবনেও বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেন এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথে দৃপ্তপায়ে এগিয়ে চলেছেন। ২০ বার তাঁকে হত্যার (প্লেনে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনাসহ) চক্রান্ত হয়। এসব হত্যা চক্রান্তে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর সফরসঙ্গীদের অনেকে হতাহত হন। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে বক্তব্য প্রদানকালে এক ডজনেরও বেশি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী সঙ্গে সঙ্গে নিহত এবং প্রায় আরও তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে শরীরে ও মাথায় গ্রেনেডের স্পিøন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বয়ে ইন্তেকাল করেন কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক, মুহম্মদ হানিফ, শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। এখনও অনেকে গ্রেনেডের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। সেটি ছিল সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ এবং তিনি ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। নেতৃবৃন্দ তাঁর চারপাশে মানবঢাল রচনা করেন। একটি গ্রেনেড একেবারে ট্রাকের নিচে পড়লেও বিস্ফোরিত হয়নি। হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কেউ বেঁচে থাকতেন না। সেদিন গ্রেনেড হামলার পর তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলে, তাঁর এক কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজও তাঁকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তিনি সাধারণ জীবনযাপন এবং ক্যারিসমেটিক নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে বিশ্বের ঈর্ষণীয় জায়গায় উন্নীত করেছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। একদিন যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হতো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় আক্রান্ত মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষের দেশ, আজ বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে, বলছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি করে করলেন এসব সঙ্কট নিরসন? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাই আজ (শনিবার) কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষে ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মুজিবকন্যার সম্মানে গণসংবর্ধনার আয়োজনও করেছে। এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এ সংবর্ধনা একজন মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, এ সংবর্ধনা একজন তুলনাহীন সাফল্য অর্জনকারী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। এ সংবর্ধনা গহীন মহাসমুদ্রের তলদেশ জয় করে মহাকাশের মহাকক্ষপথে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য কেবল নয়, বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় ৪ নেতার হত্যার পর অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালী জাতিকে আবার আলোর পথে উত্তরণের জন্য। যার তুলনা বর্তমান বিশ্বে কেবল জার্মানির এ্যাঞ্জেলা মের্কেল, রাশিয়ার পুতিনের সঙ্গে হতে পারে। আজকের বাংলাদেশের কয়েকটি তথ্য দিতে চাই। সমাজ উন্নয়নের তথ্য : এ মূহূর্তে খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টন। দেশ খাদ্য উদ্বৃত্ত। মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে ৩য়। এখন আর মানুষ ডাল-ভাতের দাওয়াত দেয় না, দেয় মাছ ভাতের। সবজি উৎপাদনে ৪থর্, গড় আয়ু ৭২ বছর, শিক্ষার হার ৭১%, মাথাপিছু আয় ১৭৫২ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, জিডিপি ৭ +, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশের কক্ষপথে বিচরণ করছে, পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে; কাঁচপুর-মেঘনা-দাউদকান্দি, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ অনেক এগিয়েছে; কর্ণফুলী টানেলের কাজ চলছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আর বিদ্যুত যায় না, লোডশেডিং নেই। বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ১৭০০০ মেগাওয়াট। বছরের প্রথম দিন ৩৫ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ, ছাত্রদের মায়ের কাছে উপবৃত্তির টাকা মোবাইল-টু-মোবাইল, ঢাকা সিটিতে ফ্লাইওভারের পর ফ্লাইওয়ারের হাত-পা, তার ওপর মেট্রোরেল, কি না! মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ জীবন থেকে তাড়িয়ে ডিকশনারিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি গভীর সঙ্কট। তবে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যে বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে। একটা সময় ছিল যখন এই বাংলা ছিল সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা সোনার বাংলা। বাংলার মসলিনের সুনাম ছিল বঙ্গোপসাগর-আরবসাগর ছাড়িয়ে আটলান্টিকের ওপার পর্যন্ত। যে কারণে ফরাসী পর্যটক বর্নিয়ে বলেছিলেন- Bengal has hundreds of gatey open for entrance, but no one for departure. এতই আকর্ষণীয় ছিল আমাদের এই জনপদ। আর তাই তো পর্তুগীজ দস্যু, মগ, ব্রিটিশ বেনিয়া এবং ভিনদেশী ভিনভাষী তস্করদের লুণ্ঠনে এক সময়ের মলিন চেহারা আজও মনে করিয়ে দেয়। তারপরও তস্করের দল বাংলার অপরূপ রূপ কেড়ে নিতে পারেনি। ক্ষণিক মালিন্য ক্ষণিকেই মুছে গেছে। তাই তো রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ কী প্রচন্ড আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বললেন- ‘তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও/আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব/দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে/ভোরের বাতাসে/দেখিব খয়েরি ডানা শালিখের/সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে/ধবল লোমের নিচে তাহার হলুদ ঠ্যাং/ ঘাসে অন্ধকারে নেচে চলে/একবার/দুইবার/তারপর/হঠাৎ তাহারে বনের হিজল গাছ/ডাক দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে...’ বাংলার এই অপরূপ রূপ দেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। আর দেখেছিলেন বাংলার রাজনীতির মহাকবি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানী মিলিটারি দস্যুদের রুখে দিয়ে কী অসীম সাহসে উচ্চারণ করলেন - ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না।’ ইতিহাস যেমন আপন ক্ষমতায় প্রতিশোধ নেয় তেমনি প্রতিশোধ নেয়ার শক্তিকে সাজিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪৬ বছর। আবার শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৮১ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর। পিতা দেশী-বিদেশী সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং মিলিটারি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজয়ী বীর হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীন করে গেছেন আর কন্যা মিলিটারি জিয়া-এরশাদের সামরিক স্বৈরাচারী শাসন এবং জিয়া পতœী খালেদার হাফ-সামরিক শাসন মোকাবেলা করে পিতার মতোই জেল-জুলুম সহ্য করে দেশকে মিলিটারি স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে উন্নীত করেন এবং ২১ বছরের মিলিটারি জঞ্জাল সাফ করে দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনেন। আইনী প্রক্রিয়ায় পিতৃহত্যার প্রতিশোধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পাশাপাশি দেশকে উন্নয়নের সমৃদ্ধ মহাসড়কে তুলে এনে এগিয়ে চলেছেন ঈর্ষণীয় নেতৃত্ব দিয়ে। প্রকৃতিরও একটা প্রতিশোধ প্রক্রিয়া আছে। যারা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বর ঘটিয়েছিল তাদের সর্বশেষ প্রতিনিধি খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় এখন কারাভোগ করছেন, ছেলে এবং জিয়া খালেদার উত্তরসূরি বা প্রতিনিধি তারেক রহমানও ৭+১০=১৭ বছরের কারাদন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক (যদিও ওপেন সিক্রেট হলো লন্ডনে আছে এবং দুর্নীতি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের অর্থে আমিরী জীবনযাপন করছে এবং দেশের অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ হলো, তথাকথিত কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নেতার সঙ্গে কথোপকথন?) আজ আর শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করার সামান্যতম ক্ষমতা খালেদা ও তার বিএনপির নেই। বাজারে একটি কথা আছে- বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য, যিনি জিয়ার সময় থেকে আছেন, এক শুভার্থীকে বলেছেন, শোন, জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান্স’ আর আজ তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ‘হ্যাজ মেড পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্য বিএনপি লিডারস এ্যান্ড এ্যাক্টিভিস্ট’ এই সত্যই শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা হারিয়েছে। অবশ্য কখনও ছিলও না। বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন সবই করেছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা- পিতা-পুত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী সুসংগঠিত লাখ লাখ নেতা-কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগে। দলটি এখন যে কেবল রাষ্ট্র ক্ষমতায় তা নয়, এখনও বাংলাদেশ তো বটেই, এ উপমহাদেশেরও প্রাচীন বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। যদিও দীর্ঘ পথপরিক্রমায় দল ছেড়ে চলে গেছেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, আবদুস সালাম, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের মতো বাছা বাছা নেতারা এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ড. কামাল হোসেন, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মালেক উকিল, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। শেষোক্ত ২ জন ক’দিন সাতঘাটের পানি খেয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘লিডার’ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা ‘বড় ভাই’ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কখনও মুখ ফেরাননি। এখনও ঘরের শত্রু বিভীষণের অভাব নেই। শেখ হাসিনা পেছনে তাকাননি। তাকাচ্ছেন না। এগিয়ে চলেছেন টানেলের শেষ প্রান্ত অতিক্রম করে আলোর মহাসড়কে। তাঁর এ পথও যে একেবারে মসৃণ তা নয়। সামনে নির্বাচন এবং এ নিয়ে বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনের আগেই দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে, নইলে কঠোর আন্দোলন। একাধিক জ্যাক হাতে নিয়ে ঘোরা নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তো বলেই দিলেন ‘এবার আন্দোলন আর অহিংস হবে না।’ ব্যারিস্টার মওদুদের এ কথায় একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত রয়েছে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫তে জাতি দেখেছে বিএনপির হিংস্ররূপ। পেট্রোলবোমা মেরে কিভাবে মানুষ হত্যা করেছে। দেশব্যাপী রাস্তা, গাছ কেটেছে। তবে হ্যাঁ, শেখ হাসিনা তবৎড় ঃড়ষবৎধহপব ডিক্লেয়ার করে যেভাবে জঙ্গী, আগুন সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা বন্ধ করেছেন এবং এখনও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব নিশ্চয়ই এবার জ্যাকটা অন্য কোথাও লাগাবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে ও তাঁর নেতৃত্বেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ২০২১ অর্থাৎ ভিশন ২০২১ উদ্যাপিত হবে। এই তো কয়েকদিন আগে কালো বিশ্বের নেতা তথা তাবৎ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হলো। তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মিল শতকরা ১০০ ভাগ। জাতি আর দুই বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। পরের বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিগত শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী যেসব জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব মানবমুক্তির পথে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন, শেখ হাসিনা তাদের উত্তরাধিকার বহন করছেন। * মার্টিন লুথার কিং- ও যধাব ধ ফৎবধস. * কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালবাসি/... * বিদ্রোহী কবি নজরুল- গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই/ নহে কিছু মহীয়ান... * নেতাজী সুভাষ বোস- মরাব সব নষড়ড়ফ, ও রিষষ মরাব ুড়ঁ রহফবঢ়বহফবহপব * সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু বলেন- (সাত কোটি) মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। পক্ষান্তরে খালেদা জিয়া বহন করে চলেছেন মিলিটারি আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদের লিগ্যাসি। সে কারণেই পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেন, এতিমের টাকার দুর্নীতির দায়ে জেল খাটেন। আর শেখ হাসিনার ধ্যান-জ্ঞান হচ্ছে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তি। তিনি একদিকে যেমন সৎ তেমনি সাহসী, মেধাবী ও দূরদর্শী। পায়াস আবার আপাদমস্তক বাঙালী ও অসাম্প্রদায়িক। তাই বঙ্গবন্ধুর মতো উচ্চারণ করেনÑ ‘(সাত কোটি) মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না’, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বলেন ‘and miles to go, before I sleep, miles to go... ঢাকা ॥ ১৯ জুলাই ২০১৮ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×