ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে জিআরের চাল লুটপাট

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২১ জুলাই ২০১৮

নাটোরে জিআরের চাল লুটপাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২০ জুলাই ॥ সদর উপজেলা ও নলডাঙ্গা উপজেলায় মানবিক সহায়তা কর্মসূচী জিআর আওতায় বরাদ্দকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের মোট ৪৬০ মেট্রিক টন চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ইসলামী জলসায় বিভিন্ন সময়ে অতিথি আপ্যায়নের খাত দেখিয়ে হরিলুট করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা। দুটি উপজেলার মোট তিন শ’ ৩১টি প্রতিষ্ঠানের নামে জিআর প্রকল্পের এই বরাদ্দ দেয়া হলেও তা বরাদ্দকৃত চালের পুরো টাকা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু জানান, খাদ্য বিভাগকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ করা ডিও লেটারের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল। তবে কেউ অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু জানান, সদরের এসি ল্যান্ডকে প্রধান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত পাঁচ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশেই জিআরের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই কমিটির যাচাইবাছাই করা ২২২টি প্রকল্পের একটি তালিকা তিনি জেলা প্রশাসক, নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দফতরে জমা দিয়েছেন। চালের কম টাকা দেয়া হলো সে ব্যাপারে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ না আসায় তিনি সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের নাটোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার মোট ২২২টি প্রকল্পের আওতায় তিন শ’ মেট্রিক টন এবং নলডাঙ্গায় এক শ’ নয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটন করে তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তিন টন চালও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই দুই উপজেলার সর্বমোট চার শ’ ৬০মণ চাল বরাদ্দের জন্য দুই শ’ ৩৯টি ডিও লেটার দেয়া হয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে সরকারী/বেসরকারী /এতিমখানা/লিল্লাহ বোর্ডিং/শিশু সদন/অনাথ আশ্রম/ মুসাফিরখানা ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিতরণের জন্য ওই চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রায় সবাই সরকারদলীয় নেতাকর্মী। বরাদ্দ পাওয়া এসব চাল বিক্রির টাকা দিয়ে স্থানীয় মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও ইসলামী জলসা এবং বিভিন্ন মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুধু অতিথি আপ্যায়নেই ব্যয় করা হয়েছে। কোথাও কোন অনুষ্ঠান, জলসা না হলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাত দেখিয়ে এসব টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই বরাদ্দ করা চাল না দিয়ে সরকারী নিয়মবহির্ভূতভাবে চাল বিক্রির নগদ টাকা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা। জিআর বরাদ্দের সময় ১ টন চালের বাজারদর ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা থাকলেও বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে চাল না দিয়ে ১১হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৭ হাজার টাকা মেট্রিক টন দরে ওই চাল বিক্রি দেখানো হয়েছে। দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ধরাইল হাফিজিয়া কওমি মাদ্রাসা নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নুরুল ইসলাম নাজিম জানান, ইসলামী জলসায় অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন মেট্রিক টন জিআর-এর চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি দলীয় এক নেতার মাধ্যমে সর্বসাকুল্যে নগদে পেয়েছেন মাত্র সাত হাজার টাকা। একই ইউনিয়নের ফজলুল উলুম কওমি মাদ্রাসার নামে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেখানো হলেও তারা পেয়েছেন মাত্র ২১ হাজার টাকা। নলডাঙ্গা উপজেলার করের গ্রাম মাদ্রাসার নামে তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থাকলেও সেই প্রতিষ্ঠান নগদ ১১ হাজার টাকা পেয়েছে। নাটোর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় বরাদ্দ করা মোট চার শ’ ৬০ টন চাল এভাবে কম দামে বিক্রি দেখিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, ভালভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিটি বরাদ্দেই কিছু না কিছু অনিয়ম রয়েছে, জনস্বার্থে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। একইভাবে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই উপজেলার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দকৃত চালের সব টাকা পাওয়া যায়নি। মানবিক সাহায্যের এসব কর্মসূচী সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
×