তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিক্সাভ্যানে মানুষটি হ্াঁটু গেড়ে চালকের আসনে বসে আছেন। গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি, চোখ দুটো চাতক পাখির মতো এদিক সেদিক উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে কারও ডাক পাওয়ার আশায়। এ ডাকার অর্থ তার কাছে ক্ষুধা নিবারণের ডাক। প্রখর রোদ্রে অপেক্ষা করছেন ক্লান্ত আর বিষন্নতা ভরা মুখ খানি অনেকটা মলিন। দারিদ্রতা আর পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুটি পা হারানো বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা নিয়ে চলছে তার জগৎ। এই জগতের এই যুবকের নাম আবদুর রহমান। সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বড় খোচাবাড়ী বাজারে কথা হয় ৪০বছর বয়সী আব্দুর রহমানের সঙ্গে।
২৫ বছর বয়সে ঘাতক রোগ টাইফয়েটে কেড়ে নেয় আবদুর রহমানের দুটি পা। এর পর নিভু নিভু করা জীবনের উজ্জ্বলতম প্রদীপটি যেন আর জ্বলে উঠছে না। দরিদ্র বাবা মায়ের পক্ষে চিকিৎসা তো দূরের কথা তার মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাই যেন তাদের আরেকটি দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম।
জীবন সংগ্রামী আবদুর রহমান বলেন, পা দুটো প্যারালাইজড হওয়ার পর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলাম। দুই মেয়ে ও স্ত্রীর ভরণ পোষণের জন্য শুধু ভিটেমাটি ছাড়া আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না ঘরে। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে বার বার গিয়েও কোন সহযোগিতা পায়নি। কয়েক বছর পর ধার দেনা করে একটি মোটর লাগানো রিক্সাভ্যান তৈরি করেন আবদুর রহমান। দুই পা হারানো আবদুর রহমানের ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেই শুরু হয় তার নতুন জীবনযাত্রা। সারা দিনে ১৫০ থেকে ২০০টাকার মতো আয়। তবে শারীরিক অক্ষমতা থাকায় অনেকেই তার ভ্যানে উঠতে দ্বিধাবোধ করেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংগ্রামী জীবন চালিয়ে যেতে হয় তাকে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত স্ত্রী ও নিজের ওষুধ এবং মেয়েদের লেখাপড়া খরচ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বয়সের ছাপ যেন তার কপালে ভাঁজ পড়েছে।
রহমান জানান, সংসার ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বাধ্য হয়ে তাকে রিক্সাভ্যান চালাতে হচ্ছে। একদিন গাড়ি না চালালে পরের দিন জোটেনা ভাত। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি যে ভাতা পাওয়া যায় সেটাও তিনি পান না।
আব্দুর রহমানের প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। এত কষ্টের পরেও তাকে অনেক সময় অনাহারে জীবন কাটাতে হয়। কোন জনপ্রতিনিধি ও কোন দলের নেতা কেউ খোঁজ নেয় না তার।
দুই পা হারানো এই দুঃসহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে আবদুর রহমান সরকার ও সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। একটু সহযোগিতা পেলে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
-এস, এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরাগাঁও থেকে