ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশ শিল্পে টিকে থাকার লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২১ জুলাই ২০১৮

  বাঁশ শিল্পে টিকে থাকার লড়াই

পরিকল্পিত উদ্যোগ ও প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে পটুয়াখালীর বাউফলে বাঁশ শিল্প বিলুপ্ত হতে চলেছে। উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর ন্যায্য মূল্য না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা এখন পেশা পাল্টাতে শুরু করেছেন। উপজেলার দাসপাড়া, বগা, নওমালা, কাছিপাড়া ও মদনপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি পল্লীতে কয়েক শ’ পরিবার বাঁশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন হাতে গোনা ১৫টি পরিবার কোন রকম টিকে আছে। বাকী পরিবারগুলো কেউ বেকার জীবনযাপন করছে। আবার কেউবা অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন। তবে এ শিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারীরা। কারণ নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি এ বাঁশ শিল্পে মনোনিবেশ করতেন। তখন তাদের স্বামী কিংবা অভিভাবকদের আয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটাতে পারত। সে সময় এ শিল্পের কদর ছিল অনেক। তখন মানুষের গৃহস্থালি কাজে বাঁশের তৈরি সাজি, ডালা, কুলা, চালন, ঢাকনা. ঝুড়ি, ঢোলা, পলো,খাাঁচা, খাড়ই এর প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে প্লাটিকের তৈরী বিভিন্ন রং বেরংয়ের আর্কষনীয় ডিজাইনের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বের হওয়ায় এখন আর কেউ বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করেন না। একদিকে যেমন ব্যবহারকারীর অভাব অন্যদিকে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাঁশ শিল্পীরা তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। হাতেগোনা কয়েক শিল্পী অনেকটা নিরুপায় হয়ে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পে বিরাজ করছে চরম মন্দাবস্থা। ফলে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দাসপাড়া ইউনিয়নের খাজুরবাড়িয়া গ্রামের কুটির শিল্পী মায়া দাস বলেন, এখন আর কেউ তেমন বাঁশ লাগায় না। যা পাওয়া যায় তার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় এ পেশায় এখন তেমন আর লাভ নেই। তাই এ পেশায় এখন কারও মন নেই। কুটির শিল্পী অর্চনা মিস্ত্রী বলেন, এ কাজ আর বেশি দিন করা যাবে না। কারণ প্লাস্টিকের পণ্য বের হওয়ায় বাঁশের তৈরি পণ্য এখন আর কেউ কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। অপরদিকে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে গেলে অতিরিক্ত খাজনা নেয় ইজারাদাররা। ফলে যতটুকু ব্যবসা হবে তাও খাজনার জন্য থাকে না। বাঁশ শিল্পীদের দাবি যেন এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উপজেলার ক্ষুদ্র ও দরিদ্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ভার্সের প্রধান অতুল পাল বলেন, বাঁশের কাজ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য কোন ভূমিকাই নিচ্ছে না। সচেতনমহলের দাবি, বাঁশশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা দরকার। এ শিল্প বাঙালী সংস্কৃতির একটা বড় অংশ। তাই এ পেশার সঙ্গে যারা এখনও জড়িত রয়েছেন তাদের পরিবারভিত্তিক ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের উচিত। -কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল থেকে
×