ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটক আকর্ষণে সাজানো হচ্ছে ভাসুবিহার

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২১ জুলাই ২০১৮

পর্যটক আকর্ষণে সাজানো হচ্ছে ভাসুবিহার

দৃশ্যমান ছিল ঢিবি। প্রত্ন ভাষায় মাউন্ট। এখন মাটির গভীর থেকে উঠে এসেছে প্রাচীন ইতিহাস। যে ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আড়াই হাজার বছর আগের তো হবেই। স্থানটি বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ওই মৌজার একটা নাম আছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন স্থাপনার কারণে যুগে যুগে জায়গাটি ভাসু বিহার নামেই পরিচিতি পেয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর গেল শতকের শেষ দিকে তাদের নিয়মিত খনন কাজে প্রাচীন স্থাপনাটি আবিষ্কার করে। সেই স্থাপনাটি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের সংরক্ষণ কর্মসূচী শুরু করেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ জানালেন ভাসুবিহারকে দৃষ্টিনন্দন করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়কে পর্যটক আকর্ষণে সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এর বাইরে মহাস্থানগড় থেকে কিছুটা দূরে ভাসুবিহার সংরক্ষণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত এই স্থানটি আবিষ্কারের পর অবকাঠামো ও খনন কাজে প্রাপ্ত পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে বলা হয়েছিল এটি প্রাচীন কোন উচ্চতর বিদ্যাপিঠ। যা বৌদ্ধদের সৃষ্টি। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, অনেকটা জায়গাজুড়ে থাকা ভাসুবিহার বৌদ্ধ ধর্মের একটি উচ্চতর শিক্ষা কেন্দ্র ছিল। অবকাঠামোর গঠন দেখে এটা ধারণা করা যায়, এই শিক্ষা কেন্দ্রে চিকিৎসা বিদ্যাসহ জ্ঞানচর্চার নানা ধরনের শিক্ষা প্রদান করা হতো। কাঠামোটি একটি বৃহৎ মন্দিরের মতো, যা বৌদ্ধমন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে শিক্ষায়তন গড়ে তোলা হয়। যে কাঠামোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। সংরক্ষণের (কনজারভেশন) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রত্ন খনন কাজে প্রাপ্ত পুরাকীর্তির নিদর্শনের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট, প্রত্ন এলাকার ম্যাপ, প্রত্ন এলাকার বিভিন্ন তথ্য চিত্র, পুরনো রেকর্ডপত্র, ড্রইং ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে প্রতœ নক্সা অনুযায়ী জায়গাটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ড্রইংয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত যে বৌদ্ধ মন্দিরের কথা হয়েছে তার কাঠামোটি সংস্কার করে দর্শন উপযোগী করে তোলা হয়েছে। পুরো ভাসুবিহার সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। গেল মে মাসে সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে তিন মাসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সংরক্ষণের কাজ শেষ হবে। এরপর প্রয়োজনে আরও সংরক্ষণ করা হবে। ভাসুবিহারে চিকন ইটের দেয়াল ও ভিতরের ক্যানেল, মন্দিরের বিভিন্ন নিদর্শনগুলোর সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের পরিচিতিসহ বিস্তারিত বিষয় দর্শকদের সামনে সাইনবোর্ডে তুলে ধরা হবে। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা বেশিরভাগ সময়ই মহাস্থানগড় ও তার আশেপাশে দেখে ফিরে যায়। এই পর্যটকরা যাতে ভাসুবিহারের যেতে আগ্রহী হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বগুড়া নগরীর প্রবেশ পথ বনানী পয়েন্ট এবং মহাস্থানগড় ও তার আশপাশে ভাসুবিহারের পথ নির্দেশক ফলক দেয়া হবে। যাতে পর্যটকরা বুঝতে পারে ভাসুবিহার নামেও একটি বৌদ্ধ স্থাপনা আছে। যে স্থাপনা হাজার বছরের ইতিহাসের চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। -সমুুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×