ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁর চাঁইয়ের কদর দেশজুড়ে

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২১ জুলাই ২০১৮

 নওগাঁর চাঁইয়ের কদর দেশজুড়ে

বর্ষা মৌসুমে নওগাঁর বিভিন্ন হাট বাজারে দেশী প্রজাতির মাছ ধরার জন্য গ্রাম বাংলার সহজলভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি খলসানি (চাঁই) বিক্রির ধুম পড়েছে। জেলার হাট বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত খলসানি বিক্রি হচ্ছে। বুধবার নওগাঁ হাটে বিভিন্ন খলসানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া, মিরাপুরসহ পার্শ্ববর্তী রানীনগর উপজেলার নিজামপুর, ঝিনা, খট্টেশ্বর, কৃষ্ণপুর-মালঞ্চিসহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে এই অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতের তৈরি খলসানি জেলা সদরসহ আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, কাশিয়াবাড়ি, সুটকিগাছা, পাইকরা, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়া, মির্জাপুর-ভবানিপুর, রানীনগরের বেদগাড়ি, কুজাইল, ত্রিমোহনী, গহেলাপুর, আবাদপুকুর, কাটরাসৈনসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁশ, কর্ডের সুতা এবং তাল গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এসব খলসানি মানের দিক দিয়ে ভাল হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অঞ্চল ভেদে বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে মাছ শিকারীরা এসব হাট-বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে নিয়ে যায়। ফলে এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে এর কদর বেশিও যথাযথ মূল্য পাওয়ায় মাত্র দুই তিন মাসেই খলসানি বিক্রি করে তারা প্রায় বছরের খোরাক ঘরে তুলে নেয়। লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে খলসানি তৈরি করে তারা বেজায় খুশি। একদিকে যেমন সময় কাটে অন্যদিকে লাভের আশায় বাড়ির সকল সদস্য মিলে খলসানি তৈরি কাজ করে অভাব অনটনের কবল থেকে একটু সুখের নিঃশ্বাস ফেলে। এসব খলসানি তৈরিতে প্রকার ভেদে খরচ হয় ৭০ থেকে ২শ’ টাকা, বিক্রি হয় ১শ’ থেকে ৩ শ’ টাকা পর্যন্ত। এতে করে খুব বেশি লাভ না হলেও পৈত্রিক এ পেশা ছাড়তে তারা নারাজ। আধুনিকতার উৎকর্ষের তৈরি ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশী প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি খলসানি সামগ্রী এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না। কিন্তু জীবনের তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। তবে সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে মৌসুমের আগে বেশি পরিমাণ খলসানি মজুত করতে পারলে ভরা মৌসুমে বেশি লাভে তারা বিক্রি করতে পারত। জেলার একাধিক খলসানি বিক্রেতা জানান, খলসানি তৈরির সামগ্রীর দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তাই আগের মতো আর লাভ হয় না। দীর্ঘ দিন থেকে এ ব্যবসায় জড়িত তাই ছাড়তেও পাড়ছে না। তারা আরও জানান, বর্ষা এবার আগাম শুরু হওয়ায় খলসানির কদরও বেড়েছে। হাট বাজারগুলোতে খলসানি বিক্রির যেন ধুম পড়েছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×