ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বহির্বিশ্বকে দেখানোর জন্য নয়া উদ্যোগ ॥ দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের

মংডুতে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় চালু

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২১ জুলাই ২০১৮

 মংডুতে রোহিঙ্গাদের  ফেলে আসা জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় চালু

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে স্থানীয়দের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে সরকার। উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিঙ্গাদের জন্যও ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ২৩ রোহিঙ্গা ও ১৮ রাখাইনসহ অমুসলিম শিক্ষার্থী আবেদন জমা করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনগণের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে রাখাইনে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে প্রদেশ সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাটি চালু করা হচ্ছে মংডুতে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমিতে। এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুইডেন শীঘ্রই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য এক বৈঠকের আয়োজন করছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশটির ইউনিভার্সিটি অব ডিসট্যান্স এডুকেশনের একটি শাখা চালু করা হয়েছে মংডুতে। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন প্রদেশে চালু হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পূর্বশর্ত হিসেবে দেয়া দাবিগুলোর মধ্যে এটিও একটি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সেখানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির দাবিও ছিল। মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় রোহিঙ্গারা তার কাছে (মন্ত্রী) রাখাইন রাজ্যে তাদের নাগরিক অধিকার দেয়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ও অবাধ চলাফেরার দাবি জানিয়েছিল। মন্ত্রী মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য ওসব দাবি পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দেশটির সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ইতোপূর্বে জানানো হয়েছিল, স্বদেশে প্রত্যাবাসনের পরবর্তী ছয়মাসের মধ্যে কেউ নাগরিকত্বের আবেদন করলে তা বিবেচনায় আনা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় রাখাইনে রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রদেশ সরকার বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে বলে জানা গেছে। যদিও দেশটির রাখাইন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সেখানে অবাধ চলাফেরা করার অনুমতি প্রদানের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বুধবার পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন ফরম জমা করেছে। মংডু শহরের শিক্ষা বিভাগের প্রধান ইউ খিন অং সেখানকার গণমাধ্যমকে বলেন, রাখাইনের এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বিষয়ে মিয়ানমার লিটারেচার এবং ইতিহাসে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রী দেয়া হবে। তবে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সরকার বহির্বিশ্বকে দেখানোর জন্য চালু করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়। আসলে রোহিঙ্গাদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে এ প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সেখানে বর্তমানে বসবাসরত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক দস্তখত আদায় করে ভর্তির ফরম জমা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা নেতারা প্রশ্ন করে বলেন, মিয়ানমারে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করে কি লাভ? তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের গ্রহণের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত একটি পরিবারও তারা ফেরত নেয়নি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য এক বৈঠকের আয়োজন করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুইডেন। বৈঠকটি আগামী ২৩ জুলাই হতে পারে বলে জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, বৈঠকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থাও অংশ নেবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক দূত ক্রিস্টিন বার্গনার তার বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সফরের ওপর নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক দূতের বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সফর পরবর্তী বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, তিনি রাখাইনে যতটুকু দেখেছেন, তা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার জন্য যথেষ্ট নয়। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার পরিবেশ এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি মিয়ানমার। আগামী মাসে নিরাপত্তা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবে যুক্তরাষ্ট্র। দায়িত্ব নেয়ার পর পরই নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ক এক উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে পারে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নির্যাতন এবং গণহত্যার প্রবণতা গত আগস্টের পর হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বরও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল।
×