ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হবে না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২১ জুলাই ২০১৮

 খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হবে না ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তাকে কারাগারে রেখে দেশে কোন নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে এক নম্বর শর্ত খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ফখরুল বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ ২০টা আসনও পাবে না। তিনি বলেন, ক্ষমতা নয় অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে বিএনপি। এ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাথর সরানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেভাবে বুকে চেপে আছে, তার থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। ৮ বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক জোটকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অন্যান্য সব দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনারা সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করবেন না, কারণ আপনারা জানেন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে আপনাদের পরাজয় হবে। তিনি বলেন, আজকে দেশের প্রত্যকটি মানুষ ভয়ে আছে। তারা জানে না যে কখন গুম হয়ে যায়। কোটা আন্দোলনকারীদের তুলে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। নির্যাতন করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আজকে ছাত্রলীগের যে ভূমিকা তা আইয়ুব খানের শাসনামলের চেয়েও ভয়াবহ। আজকে যারা কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছে তাদের মায়েরা বলছে, আমার ছেলের চাকরি চাই না, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আজ কেউ নিরাপদ নয়। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য নয়, এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্য আমরা একটা পরিবর্তন চাই। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই, আমরা নির্ভয়ে চলার অধিকার ফিরে পেতে চাই। ফখরুল বলেন, আজকে দেশের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। টাকা এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা পর্যন্ত লুট করা হয়েছে। আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার অধিকার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকার এ দেশের ব্যাংকগুলো শেষ করে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও শেষ। সেখানে রাখা সোনাগুলো নাকি ধাতু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যে মানুষটি দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাকে আজ অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি এতটাই অসুস্থ যে তার আত্মীয়রা দেখা করতে গেলে তিনি নিচে আসতে পারেন না। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছি। রাজনীতি তো করছেন আপনারা। কারণ খালেদা জিয়াকে আপনারা ভয় পান। ফখরুল বলেন, আগে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম করা হতো। এখন নতুন নাটক শুরু হয়েছে, মাদকের নামে নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সরকার আজ দেশে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। এ দেশে আজ প্রতিটি মানুষ অনিরাপদ। তাদের কখন কোথায় মৃত্যু হবে কেউ জানে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চায় সরকার। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। কারণ, তার মুক্তি না হলে দেশে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। শুধু দেশের মানুষ নয়, বিদেশিরাও বলেছেন বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে পারে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না মন্তব্য করে ড. মোশাররফ বলেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে এবং মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্বাচনে কিছুদিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আগামীতে বিএনপি আর পুলিশের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করবে না। দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হবে। এরপর আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করব এত তারিখে সমাবেশ করতে যাচ্ছি। আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। তিনি বলেন, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন পুলিশের অনুমতি ছাড়াই আমরা সমাবেশ করব। আমি নেতাকর্মীদের সেই দিনের জন্য প্রস্তুত থাকতে আহ্বান করব। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ। সমাবেশ চলাকালে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিএনপি কার্যালয়ের অনতিদূরে রাখা হয় জলকামান ও সাঁঝোয়া যান। পথচারীদের নাইটিংগেল মোড় থেকে তল্লাশি করে সমাবেশের দিকে যেতে দেয়া হয়। মঞ্চে বসা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে মাথা ফাটল ছাত্রদল নেতার ॥ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সমাবেশ শুরুর আগেই মঞ্চে বসা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৩টায় বিবাদের একপর্যায়ে আব্বাস আলী নামে এক ছাত্রদল নেতার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে দেখা যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারের জন্য এক আর বিরোধীদের জন্য আরেক আইন- মওদুদ ॥ দেশে দুই ধরনের আইন চালু রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এক ধরনের আইন সরকারী লোকদের জন্য আর আরেক আইন হচ্ছে বিরোধী দলের লোকদের জন্য। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ইয়ুথ ফোরাম’ আয়োজিত ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি: গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিঙ্কন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। যেনতেন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না- মঈন খান : এবার যেনতেন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী নবীন দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মঈন খান বলেন, সরকার যদি মনে করে থাকে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে কোন পাতানো নির্বাচন করে সংসদে একটি গৃহপালিত বিরোধী দল তৈরি করবে, আমরা এবার সেটা হতে দেব না। তিনি বলেন, সরকারের নেতাকর্মীদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা নার্ভাস আছেন। তারা এত নার্ভাস কেন? কারণ তারা অন্যায় ও দুর্নীতি করেছে। মঈন খান বলেন, অনেকেই বলেন, বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না। আমি বলি, বিএনপি কোন কাঁচামাটির ভিত্তির ওপর স্থাপিত না যে, কোন স্বৈরশাসকের অত্যাচারে তার অস্তিত্ব থাকবে না। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবাই জানতে পারবে বিএনপির অস্তিত্ব আছে কি না।
×