ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ’

তারুণ্যের উদ্দীপনায় সারা দেশে সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২১ জুলাই ২০১৮

  তারুণ্যের উদ্দীপনায় সারা দেশে সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু

গৌতম পান্ডে ॥ সংস্কৃতির সোপান বেয়ে তারুণ্যে এসেছে জোয়ার। নাচ, গান, শোভাযাত্রা, আবৃত্তি আর কথামালায় গোটা জাতি মেতে উঠেছে নতুন উদ্দীপনায়। জঙ্গীবাদের প্রশ্রয় নয়, মাদককে কর ঘৃণা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোল বাংলাদেশ এ প্রত্যয় যেন শিশু-কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে সবার মাঝে নতুন আশা জাগানিয়া সৃষ্টি করেছে। দেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে সত্যিকারের দেশপ্রেমীক করে গড়ে তুলতে সরকারের নানমুখী পদক্ষেপের প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। এ যেন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তারুণ্যের সোচ্চার আন্দোলন। তরুণদের সুকুমারবৃত্তির অনুশীলনসহ সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একদিকে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ আচরণ ও সহমর্মিতাসহ মানবিক গুণাবলি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ এবং অপরদিকে মানবদক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিশোর ও তরুণদের সংস্কৃতিমনস্ক করে গড়ে তুলতে এই প্রথমবারের মতো দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক উৎসব। দুই দিনব্যাপী এ উৎসবের স্লোগান ‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ।’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ উৎসব সহযোগিতায় রয়েছে জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা তথ্য অফিস। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো খবর- সাভার ॥ সাভার কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে শুক্রবার বিকেলে ‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদের দেশ ও সাম্প্রদায়িকতার দেশে হতে দিতে চাই না। অরাজাগতা-ধ্বংসাত্মক রাজনীতির দেশ হতে দিতে চাই না। আমরা দেখেছি ২০১৩-১৪ সালে কিভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নষ্ট করা হয়েছে, জনগণের সম্পদকে নষ্ট করা হয়েছে। আমরা ওই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি চাই না। আমরা এমন সমাজ গড়তে চাই যে সমাজ হবে সৃজনশীল সমাজ, উন্নয়নশীল সমাজ। তাই আজকে আমাদের সেøাগান ‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ’। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সাভার উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে সাভার কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মসিউর রহমান ও সাভার কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইলিয়াস খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন, আজকে তারই কন্যা শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন তো করছেনই, বরং আমাদের আজকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। আজকে আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। আজকে মহাশূন্যে আমাদের উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ ভেসে বেড়াচ্ছে- এটা ভাবতেও খুব ভাল লাগে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে নির্দেশটি দিয়েছিলেন সেটি হলো-আমরা যেমন উন্নয়নের মহাকাশে যাত্রা করেছি, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে। উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি আমাদের মানবিক গুণাবলীর সঠিক বিকাশ না ঘটে, আমরা একটি সংস্কৃতিমনস্ক জাতিতে পরিণত না হই, আমরা যদি একটি উদার মানবিক অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে আমাদের উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং সে কারণে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, এ সংস্কৃতি চর্চাকে আমাদের তৃণমূলে নিয়ে যেতে হবে। এ তৃণমূলে সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সে সবের মধ্যে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। আমরা একটি মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন বলেই আজকে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। এ তরুণ সমাজের মাঝেও আজ বড় করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তারই কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্ন বড় করে দেখাটা জরুরী। বড় করে স্বপ্ন দেখলে আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারব। সে জন্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সাংস্কৃতিকভাবে উদার এবং সক্রিয় একটি সমাজ। সেটাই যদি গড়তে পাড়ি, তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল হবে। আর তা না হলে ওই যে অন্ধকারের শক্তি, যে শক্তি ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল, বাঙালীকে হত্যা করেছে, আমার মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে, যে শক্তি ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, এই একই শক্তি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছে, ৬৪ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেই একই শক্তি ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানে হলি হার্টিজানে ঠা-া মাথায় ২০ বিদেশী নাগরিককে হত্যা করে, শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের দিনে হামলা করে ওই একই জঙ্গীবাদ আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান। এছাড়া, অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। বক্তব্য প্রদান শেষে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জামালপুর ॥ জামালপুরে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্যের আলোকে শহরের বকুলতলা মোড় থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসন ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, নাট্যনীড়, জয় বাংলা লোকনাট্যদল, নৃত্যাঙ্গন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, জামালপুর শিল্পীকল্যাণ সংস্থা, সঞ্চারীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিপুলসংখ্যক সংগঠক ও কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। জয়পুরহাট ॥ শুক্রবার জয়পুরহাটে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করা হয়েছে। জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা চত্বরে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হোসেন। বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে উদ্বোধনের পর শতকণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আ ত ম আবদুল্লাহেল বাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হোসেন, আমিনুল হক বাবুল, রাজা চৌধুরী, জেলা কালচারাল অফিসার মাহাতাব হোসেন। আলোচনা সভা শেষে জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে। পরে আক্কেলপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করে। উৎসবে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। খুলনা অফিস ॥ খুলনা মহানগরীর শহীদ হাদিস পার্কে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফারুক হোসেন। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে খুলনা জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খুলনা জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, উমেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির প্রমুখ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
×