ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনোদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন নতুনরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২১ জুলাই ২০১৮

 পুরনোদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন নতুনরা

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গা ঝাড়া দিয়ে ভোটের মাঠ দখলে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের পেছনে ফেলে নীলফামারীর চার আসনের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির অসংখ্য নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। পুরনোদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করছেন। এলাকার সাধারণ মানুষজন বলছেন, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ায় মানুষ নির্বাচনের আমেজ উপভোগ করতে পারেনি। কিন্তু আসন্ন একাদশ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সবকটি প্রধান দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। তাদের মতে, এই নির্বাচনে প্রবীণদের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন দলের নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নীলফামারীর অন্তত তিনটি আসনে সেই আভাস পুরোদমেই পাওয়া যাচ্ছে। আর এ দৌড়ে পিছিয়ে নেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশায় নারী প্রার্থীরাও। আওয়ামী লীগের ৫ ও বিএনপির ২ নারী প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে জোরলবিং করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে নীলফামারী জেলার উন্নয়নে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। দূর হয়েছে মঙ্গা নামক শব্দ। রাস্তাঘাট পাকা ও ব্রিজ কার্লভাট নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। সাধারণ মানুষ বেশি বেশি উন্নয়নের বাস্তব চিত্র দেখতে চায়। শুধু উন্নয়নে নয়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের সাহসী ভূমিকা সাধারণ মানুষজনের মন জয় করে ফেলেছে। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষে মানুষজনের সমর্থন শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মানুষজন যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। এলাকার মানুষজন পরিবারতন্ত্র রাজনীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও বিএনপি জামায়াত ঘেষা বির্তকিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আর দেখতে চায় না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারীর চার আসনের মধ্যে তিনটি আওয়ামী লীগ ও একটি জাতীয় পার্টি পায়। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয় তাহলে দুইটি করে আসন ভাগ হয়ে যাবে। তবে কোন দুটি আসন ভাগ হবে তা পরিষ্কার নয়। তবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছে অন্য কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এলাকার। আগামীতে আরও উন্নয়নের মিশন রয়েছে। তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগ না করে নিজ দলীয় প্রার্থী দিলে বিপুল ভোটে প্রার্থীরা বিজয় ছিনিয়ে আনবে। উন্নয়নের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আজ অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আগামীতে নৌকার বিজয় হবেই হবে বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মন্তব্য। নীলফামারী ১ (ডোমার ও ডিমলা) ॥ ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-১ আসন। ডোমারের একটি পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়ন এবং ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডিমলা উপজেলার সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দশ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন প্রথম, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন দ্বিতীয় ও ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম ও নবম (মহাজোটের হয়ে) সংসদ নির্বাচনে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফতাব উদ্দীন জয়ী হন। বর্তমান সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ডোমার উপজেলার মানুষের অভিযোগ তিনি ডিমলা উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় ডোমারের উন্নয়নে তার চোখ রাখেননি। ফলে উন্নয়নে ডোমার অনগ্রসর। আর ডিমলা উপজেলার দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা বললেন, আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলে, ভাই-ভাতিজা ও জামাতার কর্মফলের কারণেই পাবেন না। এমপির দাপটে ভাই ভতিজারাও দাপুটের রূপধারণ করে এলাকাবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আর এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের জামাতা কামরুল ইসলাম বিএনপি করতেন। ভাই-ভাতিজা ও জামাতার আমলনামা ভাল নয় বলে অভিযোগ করেন দলীয় নেতারাই। এ সব বিষয়ে আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এগুলো বানানো কথা। তাই তিনি উন্নয়ন আর নিজের জনপ্রিয়তার ফিরিস্তি তুলে ধরে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পুনরায় প্রার্থী হয়ে তার বিজয় ছিনিয়ে আনবেন বলে দাবি করে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আলম বাবুল, সুপ্রীমকোর্টে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মনোয়ার হোসেন, সাবেক এমএলএ মরহুম আবদুর রহমান চৌধুরীর নাতি ব্যারিস্টার ইমরান কবির চৌধুরী জনি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব) তছলিম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মকদ্দুমুল আযম তুতুল, সাবেক রাষ্ট্রদূত আমিনুল হোসেন সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য হামিদা বানু শোভা ও সরকার ফারহানা আখতার সুমি। মহাজেটের শরীর হিসেবে জাতীয় পার্টি (এ) ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) দুই দলেরই প্রার্থী রয়েছে। এরশাদের জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন শিল্পপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। তিনি ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে এমপি হন। মহাজোটের আরেক শরীক জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) হয়ে মনোননয় প্রত্যাশী সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট এনকে আলম চৌধুরী। বিএনপির পক্ষে এ আসনে মনোনয়নে এগিয়ে ছিলেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম তুহিনের। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেয়া দুর্নীতি মামলার পর থেকে দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন তিনি। দেশে না ফিরলে তার বাবা অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী কিংবা খালেদা জিয়ার বড়বোন সেলিমা ইসলাম বিউটি প্রার্থী হতে পারেন। বিএনপি জোটের শরিক ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনিও মনোনয়ন চান। আবদুস সাত্তার জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন। বাসদের (খালেকুজ্জামান) নেতা আসাদুজ্জামান পাটোয়ারি লাকুও প্রার্থী হতে চান। নীলফামারী-২ (জেলা সদর) ॥ নীলফামারী জেলার সদর উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-২ আসন। দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জনকারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। তার জনপ্রিয়তার ধারের কাছেও কেউ নেই। তবে বিএনপি ও জামায়াতেও রয়েছে একক প্রার্থী। তবে ওই দুই দলে রয়েছে জোটের ভাগাভাগির অস্বস্তি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন ‘সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আমাদের মুরুব্বি, আমাদের অভিভাবক। তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। নূর ভাই যতদিন নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা) আসনে নির্বাচন করবেন, ততদিন আমি এ আসনে মনোনয়ন চাইব না।’ একই কথা বললেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাজ্জাদ পারভেজ জানান, আসাদুজ্জামান নূরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সাহস রাখি না। তিনি আমাদের অভিভাবক ও এলাকার উন্নয়নের রূপকার। তিনি টানা তিনবারের এমপি, সরকারের একজন শক্তিশালী মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক আছে জাপার। আগামীতে জোটগত নির্বাচন হলে নূর ভাইয়ের মনোনয়ন চূড়ান্ত। এ কারণে জাপা থেকে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করছেন না এ আসনে। তবে এ আসনে বিএনপির দলীয় একক মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মোঃ সামসুজ্জামান জামান। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আসনটি থেকে বিএনপি-জামায়াতের জোটগত নির্বাচনে জোটের হয়ে নির্বাচন করেছিলেন জামায়াতের প্রার্থী। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, ‘এ আসনে একাধিকবার জামায়াতের প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। বর্তমানে জামায়াতের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত রয়েছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীই প্রয়োজন আসনটিতে।’ এদিকে জামায়াতের পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মনিরুজ্জামান মন্টু। বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘জোটগত নির্বাচনে আসনটিতে বরাবরই জামায়াতের ভাগে ছিল। এবারেও থাকবে। নীলফামারী-৩ (জলঢাকা-কিশোরীগঞ্জ) ॥ এ আসনটিতে বিগত ১০টি নির্বাচনের বেশিরভাগ সময়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত এবং মুসলীম লীগ। সারাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের যে কয়েকটি উর্বর এলাকা রয়েছে তার মধ্যে নীলফামারী-৩ আসন অন্যতম। বিগত ১০টি নির্বাচনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী প্রথম, পঞ্চম এবং দশম নির্বাচনে জয়ী হয়। এরপর নবম সংসদে সেখানে নির্বাচিত হয় মহাজোটের (আওয়ামী লীগ-জাপা) জাতীয় পার্টির প্রার্থী। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচিত হয়। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধী মুসলীম লীগ দ্বিতীয় সংসদে, জামায়াত তৃতীয়, সপ্তম এবং অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আসনটি পায়। দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফারুক কাদের। গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির প্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী ও সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল। তবে অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যদিও কিছু ভুল ছিল তা কাটিয়ে তোলা হয়েছে। জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটিতে ৬৭ সদস্যের। এরমধ্যে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে কমিটির ৫৪ জনের মধ্যে ৪২ জন এবং প্রতি ইউনিয়ন পৌর কমিটি আমার সমর্থন রয়েছেন। মোস্তফা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন দাবি করে বলেন বিগত সময় কোন এমপি এলাকায় এত উন্নয়ন করেনি। এই আসনে বর্তমান এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফাসহ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মোট ৭ জন। তারা হলেনÑ নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর ওয়াহেদ বাহাদুর, সাবেক অধ্যাপক আব্দুল মতিন ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা দীপেন্দ্র নাথ সরকার দিপু বাবুর মেয়ে ববিতা রানী সরকার। এ সব মনোয়ন প্রত্যাশীরা তাদের পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছে এলাকা। অন্যদিকে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান বিএনপি নেতা সামসুজ্জামান সামু ও জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বর্তমানে পৌর মেয়র ফাওমিদ ফয়সাল কমেট। বিএনপি-জামায়াতের জোটগত নির্বাচনে আসনটি এর আগে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া হলেও বিএনপি নেতারা বলছেন এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। জলঢাকা পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর জয় হয়েছে। আসনটিতে এবারে বিএনপির প্রার্থী জিতবে। জামায়াতের প্রার্থী হলে কাক্সিক্ষত ফলাফল আসবে না। এবারের নির্বাচনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির ইউনিট সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় টিমের সদস্য অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলাম অথবা জামায়াত নেতা বর্তমানে জলঢাকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ মুরাদ প্রার্থী হতে পারেন। জাতীয় পার্টি থেকে গতবারের পরাজিত প্রার্থী কাজী ফারুক কাদেরও মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন চান সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব) রানা মোহাম্মদ সোহেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শিল্পপতি সৈয়দ আলী এলাকা পোস্টার ছাপিয়ে ভোট চাইছেন। নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ) ॥ সৈয়দপুর ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-৪ আসন গঠিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ জাতীয় পার্টির নীলফামারী জেলার আহ্বায়ক আলহাজ শওকত চৌধুরী। এবার এই আসনে কিশোরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের উপজেলা এলাকার দলীয় প্রার্র্থী দাবি করেছে। তারা বলছে বার বার সৈয়দপুরে নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়। এবার আমরা চাই। এই আসনের বর্তমান এমপি জাপার শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনিও ব্যাংক ঋণের জালিয়াতির ঘটনার দুদকের মামলায় পড়েছেন। চলতি সময়ে তার নামের সরকারের বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিখা, জিআর প্রকল্পের চাল ও টাকা হরিলুটের অভিযোগ এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। তবে শওকত চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়, যা প্রতিপক্ষরা ছড়িয়ে বেরাচ্ছে। এ আসনে দুই নারীসহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১২ জন। তারা হলেনÑ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সিকান্দার আলী, সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ আখতার হোসেন বাদল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোখছেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য আমেনা কোহিনূর আলম, নীলফামারী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাবেয়া আলীম, স্থানীয় নেতা মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, কর আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক এ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম আমির ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বাবুল। আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য বর্তমানে সৈয়দপুর পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার ভজে, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, কেন্দ্রীয় নেত্রী বিলকিস ইসলাম ও সৈয়দপুর বিএনপির নেতা শওকত হায়াৎ শাহ প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এখানে জামায়াত তাদের কোন প্রার্থী দেবে কিনা তা জানা যায়নি। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান এমপি হুইপ শওকত চৌধুরী ছাড়াও আদেলুর রহমান আদেল মনোনয়ন চান।
×