ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামান্য বৃষ্টি হলেও গরম কমেনি

ভরা বর্ষা মৌসুমে দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২১ জুলাই ২০১৮

 ভরা বর্ষা মৌসুমে দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত

শাহীন রহমান ॥ সঠিক আচরণে নেই বর্ষা। প্রকৃতিতে এখন ভরা বর্ষা মৌসুম চললেও আচরণ দেখে বোঝার উপায় নেই এটা আসলে কোন ঋতু। সারাদিন মেঘের আনাগোনা আর রিমঝিম বৃষ্টি শ্রাবণের আসল চরিত্র হলেও প্রচন্ড গরম আর দাবদাহে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তাদের প্রশ্ন প্রকৃতিতে এখন কোন ঋতু চলছে। আবহাওয়া বিশেজ্ঞরা বলছেন বর্ষা কখনও কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এবারের বর্ষার আচরণ দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। মেঘভাঙ্গা রোদ্দুর আর তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগত ওপরে উঠে যাওয়াকে আর যাই হোক বর্ষার আচরণ বলে ধরে নেয়া যায় না। অথচ এবার মৌসুমি বায়ু দেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে ১ জুন থেকে। তারপর থেকেই মৌসুমি বায়ু কখনও সক্রিয় হতে পারেনি। সেই থেকে বর্ষা তার সঠিক আচরণ পর্যন্ত করছে না। দাবদাহের মধ্যে অবশ্য বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের কিছু এলাকায় বিকেলে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। তবে এতে গরম কমেনি। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার সাগরে ঘনঘন লঘুচাপের সৃষ্টি হচ্ছে। বার বার লঘুচাপের কারণে বর্ষার আচরণ বদলে যাচ্ছে। দেশের ভেতরের থাকা মৌসুমি বায়ু কখনও সক্রিয় হতে পারছে না। উল্টো উত্তরে গরম হাওয়া দেশের ভেতরে জায়গা দখল করে নিচ্ছে। বার বার লঘুচাপের কারণে আকাশ থাকছে মেঘহীন অবস্থায়। প্রকৃতির তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে গরমের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, কিছু দিন আগে সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। সেটি দেশের উপকূলে না এসে তা ভারতের দিকে চলে যায়। এরপর আবারও সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ। বার বার লঘুচাপের কারণে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে পারছে না। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় না হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। তিনি বলেন, সাগরের এই অবস্থা বিরাজ থাকলে প্রকৃতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানের ঋতু বৈচিত্র্যের পালাবদলে এখন বর্ষাকেও আলাদাভাবে চেনা দায় হয়েছে। ভরা বর্ষায় প্রকৃতিতে চলছে দাবদাহ। যাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্ষার অস্বাভাবিক আচরণ হিসেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ষড়ঋতুর রূপ যে পাল্টাচ্ছে তা এবারের বর্ষার আচরণ দেখলেও বোঝা যায়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রকৃতিতে এখন থাকার কথা মেঘের ঘনঘটা আর অবিরাম ধারায় বৃষ্টিপাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে বর্ষাকে আলাদা করে চেনা দায় হয়েছে পড়েছে। বর্ষার প্রকৃতি দেখে বোঝার উপায় নেই প্রকৃতিতে এখন কোন ঋতু চলছে। ভরা বর্ষায় বৃহস্পতিবার ঢাকার তাপমাত্রা সবার উপরে উঠে এসেছিল। সারাদেশেও এদিন গরমের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে উঠে গিয়েছিল। শুক্রবার এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। গরমে অতিষ্ঠ থাকা নগরবাসীর মনে বৃষ্টি সামান্য প্রশান্তি এনে দিলেও দিন শেষে গরমের অনুভূতি ঠিক রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন ষড়ঋতুকে আলাদাভাবে চেনা দায় হয়ে পড়ছে। এর মাঝে পড়ে বর্ষাকে এখন আলাদাভাবে চেনার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হলেও বর্তমানে দৃশ্যত এখন আর ৬ ঋতুর দেখা পাওয়া যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইতোমধ্যে ঋতুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কারও কারও মতে ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী ৩টি ঋতু আবার কারও মতে ৪টি ঋতুর অস্তিত্ব রয়েছে। কারও মতে গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত ঋতুর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। আবার কারও মতে হেমন্ত কাল যোগ করেছেন। তিন অথবা চার ঋতু যায় হোক না কোন ঋতুর সংখ্যা যে কমে এসছে, আগের আর ৬ ঋতুর সন্ধান যে পাওয়া যায় না তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিন দিন। এই পালা বদলে এখন বর্ষাকে আলাদাভাবে চেনার উপায় নেই। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকাল হলেও এ সময়ে ঠিকমতো বর্ষা আসছে না। আষাঢ় প্রায়ই বৃষ্টিহীন থাকছে। শ্রাবণেও কিছুটা বৃষ্টিপাত হলেও ভাদ্র আশ্বিনেই গিয়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন শরতের আবহাওয়া এখন বর্ষার মতো হয়ে পড়ছে। আষাঢ় শ্রাবণের গরমে তাপমাত্রা বাড়ছে। আষাঢ় শুরু হওয়ার সময়ই মৌসুমি বায়ু প্রবেশের কথা থাকলেও এটি এখন আর সময়মতো আসছে না। দেরিতে আসার কারণে বৃষ্টিপাত শুরু হচ্ছে। ফলে বর্ষা শেষ হতে সময় লাগছে।
×