ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থাভাবে চিকিৎসা সঙ্কট

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম ক্যান্সারে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ জুলাই ২০১৮

   স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যাম  ক্যান্সারে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুরের আশ্রয়ে তিনি অংশ নিয়েছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনে। অস্ত্রের পরিবর্তে সঙ্গীতকে হাতিয়ার করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেই শব্দসৈনিক সুজেয় আক্রান্ত হয়েছেন প্রোস্টেট ক্যান্সারে। তবে অর্থাভাবে ব্যাহত হচ্ছে বরেণ্য এই সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকারের চিকিৎসা। সম্প্রতি ভারতের নারায়ণী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পীর এই জটিল রোগ ধরা পড়ে। শুক্রবার বিকেলে সুজেয় শ্যাম মুঠোফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, আগে থেকেই শারীরিক অসুস্থতা ছিল। সম্প্রতি চেকআপ করাতে গিয়েছিলাম ভারতের নারায়ণী হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিকিৎসকরা প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানালেন। তবে অর্থাভাবে সেখানে বায়োপসি করাতে পারিনি। তাই ক্যান্সার কোন স্টেজ বা ধাপে রয়েছে সেটা জানা হয়নি। বর্তমানে ঢাকার ধানম-ির মেডিনোভা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। আক্ষেপ করে এই শিল্পী বলেন, অর্থাভাবে এখন ঢাকাতে চিকিৎসা করাতেও কষ্ট হচ্ছে। এই রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য আবার ভারত যেতে হবে। তবে টাকার অভাবে যেতে পারব কি না জানি না। এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইনি। আমার সাংবাদিক বন্ধুরা আমার জন্য যতটুকু খবর প্রচার করছেন, তাতে আমার গানের ভক্তরা এগিয়ে এলে হয়তো কিছুটা উপকৃত হব। ১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেয়া ৭২ বছর বয়সী শিল্পী সুজেয় শ্যাম সঙ্গীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পান। এর আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। দশ ভাই-বোনের মধ্যে সুজেয় শ্যাম ষষ্ঠ। তার বাবা, মা ও ভাই বোনরাও বেতারে গান করতেন। গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মোট নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। সেসব গান একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করতে। গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’। ছিল বিশ্বপ্রিয়’র লেখা ‘আহা ধন্য আমার’, কবি দিলওয়ারের লেখা ‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’। এর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি হয়ে যে কোন জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বাকি সাতটি গান এখন আর তেমন গাওয়া হয় না বলে জানান সুজেয় শ্যাম। তিনি বলেন, এখন শেষ জীবনে ইচ্ছা, এই গানগুলো বেঁচে থাকুক মানুষের মাঝে। ফিরে আসুক হারিয়ে যাওয়া স্বাধীন বাংলা বেতারের বাকি গানগুলোও। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ২০০৬ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিবেশিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শিরোনামের একটি এ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২ নামে আরেকটি এ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
×