ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২১ জুলাই ২০১৮

টাঙ্গাইলে জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডা. মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। মনিরা আফরোজ যদি আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন দিতো তাহলে আমার বাবা প্রাণে বেঁচে যেতো। আমরাও ভাই বোনের কেউ এতিম হতাম না। সাপে কাটার ভ্যাকসিনের লিফলেট আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা বিতরণ করে থাকি। তারপরেও আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দিতে পারলাম না। হাসপাতালে ভ্যাকসিন থাকা সত্বেও ডাক্তারের অবহেলায় আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে। আমি ডা. মনিরা আফরোজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনায় আমি আইন আদালতের আশ্রয় নিব। যাতে করে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আর কোন সন্তানকে এতিম না হতে হয়। এমন কথা বলেন, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার চর ভাবলা গ্রামের মৃত আবু সাঈদের ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত। তিনি আজ শনিবার সকালে ডা. মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন নিহতের ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত। লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়ীর পাশে দোকানে অবস্থানরত অবস্থায় তার বাবা আবু সাঈদকে (৬০) বিষাক্ত সাপে কাটে। পরে দুপুর ২.২৫ মিনিটে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডা. মনিরা আফরোজের অধীনে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির সময় আবু সাঈদের দুই পায়ের বাঁধন খুলে দেয় ও হাসপাতালে সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই বলে জানান ডা. মনিরা আফরোজ। সে সময় ডাক্তার মনিরা জানিয়েছিলেন, সাপে কাটার লক্ষন হচ্ছে চোখে ঝাপসা দেখা, বমি হওয়া ও চোখের পাতা নেমে আসা। ভর্তি করানোর ১৫ মিনিট পরে সাপে কাটার লক্ষ্যগুলো দেখা দেয় আবু সাঈদের দেহে। বিষয়টি ডা. মনিরা আফরোজকে অবগত করলে তখনও তিনি জানান, সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই। বিষয়টি টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরিফ হোসেন খানকে অবগত করলে তিনি সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। সিভিল সার্জন ডা. মনিরা আফরোজকে মোবাইল ফোনে বলেছিলেন শহিদুল ইসলাম তার স্টাফ উনার বাবাকে দ্রুত সাপে কাটার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। রোগীর আত্মীয়কে রাগান্বিত হয়ে ডা. মনিরা আফরোজ ওই সময় বলেন, সিএস বললেই কি ভ্যাকসিন দিতে হবে। এরপর শহিদুল ইসলাম শান্তকে হাসপাতালের ম্যানেজম্যান্টের সাথে কথা বলতে বলেন ডা. মনিরা আফরোজ। তারপর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সদর উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন শহিদুল ইসলাম শান্ত। সদর উদ্দিনের সাথে হাসপাতালের আরএমও’র সাথে কথা হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু এন্টি স্নেক ভেনম ভ্যাকসিন দিতে পারবে না বলে জানান সদর উদ্দিন। বিকেল ৫টার দিকে আবু সাঈদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলেন সদর উদ্দিন। অবস্থার অবনতি হলে আবু সাঈদকে নিয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে যায় শহিদুল ইসলাম শান্ত। ময়মনসিংহ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭.৪৫ মিনিটে ভর্তি করানো হয়। পরে ৮.১৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন আবু সাঈদ। এ অভিযোগের ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার মনিরা আফরোজ বলেন, ভ্যাকসিন দিলেও রোগির সমস্যা হতে পারে। সাপে কাটা রোগীকে ভ্যাকসিন দেয়ার মতো যে রকম সেটিং থাকা দরকার সে রকম সেটিং ছিল না। এজন্যই ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি। রোগীর স্বজনরা সব কিছু জেনেও এমন অভিযোগ করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত আবু সাঈদের বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত, ছোট ছেলে সোহেল রানা, মেয়ে শান্তা ইসলাম, টাঙ্গাইল স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
×