ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরিষাবাড়ীর ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখে আলহাজ জুট মিল বন্ধ

প্রকাশিত: ০০:৩০, ২১ জুলাই ২০১৮

সরিষাবাড়ীর ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রেখে আলহাজ জুট মিল বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ প্রায় ১৫ কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌর এলাকার অর্ধশত বছরের প্রাচীন আলহাজ জুট মিল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এক সময়ে পাটশিল্পের জন্য দেশের ‘দ্বিতীয় ড্যান্ডি’ হিসেবে খ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার মধ্যরাতে এক নোটিশে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে শনিবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আলহাজ জুট মিলের নিরাপত্তা প্রধান সিরাজুল ইসলাম জানান, মিলের ঢাকা অফিসের পিয়ন দেলোয়ার শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এসে আলহাজ জুট মিলের প্রধান গেটে মিলটি বন্ধের নোটিশ লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। নিরাপত্তা সুপারভাইজার ইনুছ মিয়া জানান, শনিবার সকাল ৬টায় তিনি ডিউটিতে এসে মিল বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় শত শত শ্রমিক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। মিল সূত্র জানায়, ১৯৬৭ সালে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মাইজবাড়ি-দিয়ারকৃষ্ণাই এলাকায় আলহাজ জুট মিলটি স্থাপিত হয়। এ মিলে পাটের তৈরি বস্তা, ব্যাগ ও কার্পেটের সুতা প্রস্তুত করা হয়। গড়ে দৈনিক প্রায় ১৫ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদন হতো। বর্তমানে এখানে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিলটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই কর্মকর্তারা মিল ছেড়ে গা-ঢাকা দেন। এদিকে মিল বন্ধের প্রতিবাদে সহস্রাধিক শ্রমিক সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ করে। পরে মিলগেটে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতীয় শ্রমিক লীগ ও আলহাজ জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুলহাস উদ্দিনসহ সিবিএ নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, ‘শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিলটি বন্ধ করেছে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের এখনো প্রায় ৭০ লাখ টাকা বকেয়া। বকেয়া পরিশোধ ও নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়াই মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিলের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক-কর্মচারীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।’ শিগগির এর সুষ্ঠু সমাধান না হলে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে পাট ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক অভিযোগ করেন, মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তার নিজেরই প্রায় ২৫ লাখ টাকা বকেয়া। ঋণ পরিশোধ না করে মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে আলহাজ জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলহাজ হারুনুর রশিদ মুঠোফোনে জানান, ‘মিলটি বর্তমানে প্রায় ৮০ কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে। লোকসান প্রতিমাসে বেড়ে চলায় মিল চালু রাখা সম্ভব না। তবে বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে। এদিকে মিলের নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে, মিল কর্তৃপক্ষের এ দাবি যুক্তিসঙ্গত না। মিলে গ্যাস সংযোগে স্বল্পব্যয়ে পন্য উৎপাদন হওয়ায় অন্যান্য মিলগুলোর চেয়ে এখানে ব্যয়ভার কম। এছাড়া নারী ও শিশু শ্রমিকদের নামমাত্র মজুরিতে কাজ করানো এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না থাকায় বিরাট অঙ্কের টাকা মালিকের সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অযুহাতে মিলটি বন্ধ করে নীরিহ শ্রমিকদের পথে বসানোর উপক্রম করেছে।
×