ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁ জেলার আমনের মাঠ অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২১ জুলাই ২০১৮

নওগাঁ জেলার আমনের মাঠ অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ্ অতিবাহিত হতে চলল। আকাশে বৃষ্টি নেই। অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে আবাদ উদ্বৃত্ত উত্তরের নওগাঁ জেলার পোরশা, নিয়ামতপুর, সাপাহার, পত্নীতলা, ধামইরহাট, বদলগাছী, মহাদেবপুর উপজেলার আমনের মাঠ। পুকুর বা খালের পানি দিয়ে কোন রকম চাষাবাদের চেষ্টা করছে কৃষক। কিন্তু লাভ কিছু হচ্ছেনা। তীব্র তাপদাহে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচিড়। সময়মত বৃষ্টি না হলে পানি সংকটের কারনে আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত এই উপজেলার আবাদি জমির মাঠ ধু-ধু সাদা হয়ে পড়ে রয়েছে। পুকুরের সামান্য পানি সেচের মাধ্যমে বীজতলায় বীজ বপন করলেও সে চারা দিয়ে সামান্য পরিমান জমিতে রোপন করা যাচ্ছে। কোন কোন জমির চারা ইতোমধ্যেই শুকিয়ে গেছে। ফলে জেলায় এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড়, তেঁতুলিয়া, গাঙ্গুরিয়া, নিতপুর ও ঘটনগর ইউনিয়নের অনেক গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির অভাবে অনাবাদি পড়ে রয়েছে অনেক জমি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মশিদপুর ও ঘাটনগর এলাকার কৃষকরা ডিপটিউবয়েল থেকে সেচ কার্যক্রম চালিয়ে ধান রোপন করছেন। ওই এলাকার কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪শ’ টাকায় পানি সেচের মাধ্যমে ধান লাগাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার বাঁকইল গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান, ছাওড় গ্রামের আইয়ুব আলী, জালুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন, গোপালপুরের নুর হোসেন, কালিনগরের মাহবুর রহমান ও সরাইগাছি গ্রামের কাজি আব্দুল মান্নান জানান, আমাদের এলাকায় গভীর নলকূপ না থাকায় বৃষ্টির পানি ও সেচ সংকটের কারনে আমনের ক্ষেত ফেটে যাচ্ছে। আষাঢ় শেষ হয়ে গেলেও জমিতে আমরা ধান লাগাতে পারিনি। এছাড়াও পানির অভাবে রোপিত চারা পরিপক্ক হচ্ছেনা। আমাদের বৃষ্টির পানির জন্যই অপেক্ষা করতে হয়। বৃষ্টি না হয়ে এভাব চলতে থাকলে বৃষ্টির অভাবে আমরা বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা ধান লাগাতে পারবো না। ফলে আমাদের উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার গোপালপুর, নাটশাল, কুড়াইল, রামকৃষ্ণপুর, পৈতা, দিবরপুর, হিলালপুর, ও সুজাইল গ্রামের কৃষকরা জানান, মুলত বৃষ্টিার পানির ওপর নির্ভর করে মাঠে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়। কিন্তু এবার আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় আমন চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তা অতিরিক্ত তাপদাহের কারনে আমন ক্ষেত শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। সময়মত ও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেকের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে আমন ধান লাগাতে শুরু করলেও উৎপাদন খরচ অনেক বেশী পড়ছে। এবিষয়ে পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম জানান, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ১৬হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এপর্যন্ত উপজেলার কিছু এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ১৬.৬ শতাংশ জমিতে ধান লাগানো সম্ভব হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক কারনে অনাবৃষ্টি হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে। অপরদিকে বিএমডিএ পোরশা জোনের সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টির কারনে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আমাদের ২৫২টি গভীর নলকূপ চালু রয়েছে। এগুলোর অধিনে প্রায় ৬/৭হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে গভীর নলকূপ থেকে এব্ং বিএমডিএ কর্তৃক খননকৃত ক্রসড্যামের বাঁধ ও খাড়িতে আটকানো পানি দিয়ে কৃষকরা এ পর্যন্ত প্রায় ১হাজার ২শ’ হেক্টর জমি চাষাবাদ করেছে। বাঁকি জমিও চাষাবাদ হবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে তিনি বৃষ্টি নির্ভর ছাওড়, তেঁতুলিয়া ও গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নে অনাবৃষ্টির কারনে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন।
×