ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার হলো ধর্ষক

প্রকাশিত: ০২:৪১, ২১ জুলাই ২০১৮

শেরপুরে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার হলো ধর্ষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে (১১) ধর্ষণের অভিযোগে আক্রাম হোসেন (৩০) নামে এক যুবককে তার নিজের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে উপজেলার কোন্নগর গ্রামে নানার বাড়িতে চলা বৌ-ভাত অনুষ্ঠান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে উপজেলার রূপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের গাছগড়া গ্রামের মৃত্যু সৈনদ্দিনের ছেলে। ওই ঘটনায় আক্রাম হোসেনের এক সহযোগীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে ওই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। জানা যায়, আক্রাম হোসেন ছোট থেকেই পাশ্ববর্তী মরিচপুরান ইউনিয়নের কুন্নগর গ্রামে নানার বাড়িতে বসবাস করতো। সম্প্রতি সে ওই গ্রামের অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। আর সেই প্রেমিকার কাছে চিঠি আদান-প্রদানের কাজ করাতো কুন্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে দিয়ে। এক পর্যায়ে আক্রাম ওই শিক্ষার্থীকেও সু-কৌশলে প্রেমের জালে ফেলে। ওই অবস্থায় গত ১৩ জুলাই রাতে ওই শিক্ষার্থীটিকে কৌশলে ঘর থেকে বের করে পাশের রান্না ঘরে নিয়ে জোর করে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ওই শিক্ষার্থী ঘটনাটি চেপে গেলেও নিজ বাড়িতে ফিরে নিরবে কান্নাকাটি করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। ওই অবস্থায় শনিবার সকালে নিজ স্কুলের একজন শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী কেন স্কুলে যাচ্ছে না জানতে চাইলে সে প্রথমে নিরব থাকে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে যুবক আক্রামের ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে কাঁদতে থাকে। ফলে এলাকায় জানাজানি হয়ে পড়ে ওই ধর্ষণের ঘটনা। এরপর শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে নালিতাবাড়ী থানায় গিয়ে তার বড়ভাই বাদী হয়ে আক্রাম ও তার সহযোগী উজ্জলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই থানা পুলিশ কোন্নগর এলাকার নানার বাড়িতে চলা বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান থেকে আক্রামকে গ্রেফতার করে। এদিকে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ার আশঙ্কায় আক্রাম শুক্রবার পার্শ্ববর্তী গুজাকুড়া গ্রামের অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে বসবাসস্থল পাশ্ববর্তী কোন্নগর গ্রামস্থ নানার বাড়িতে নিয়ে উঠায়। আর শনিবার চলছিল সেই বিয়েরই বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান। স্থানীয় সূত্র জানায়, আক্রাম এলাকায় একজন লম্পট ও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় মাদকের মামলাও রয়েছে। ঘটনার বিচার দাবি করে ধর্ষিতা শিক্ষার্থীর বড় ভাই বলেন, আক্রাম কৌশলে আমার বোনকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আক্রাম হোসেন থানা হেফাজত থাকাবস্থায় স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমি ওই মেয়েকে ধর্ষণ করিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগ। নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সারোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার নায়ক আক্রামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আক্রাম ও তার এক সহযোগীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে ধর্ষিতা শিক্ষার্থীকে আপাতত পুলিশ হেফাজতে রাখা রয়েছে। রবিবার গ্রেফতারকৃত আক্রামকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেইসাথে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা ও জবানবন্দি গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
×